আমদানির সঙ্গে কমছে রাজস্বও

স্থলপথে ভারত থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে বেনাপোলের পর গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয় চাঁপাইনবাবগঞ্জের সোনামসজিদকে। বিশেষ করে সহজে পাথর আমদানি করা যায় বলে এই বন্দরকেই অগ্রাধিকার দিতেন আমদানিকারকেরা। কিন্তু পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় কমে গেছে আমদানি। কমছে রাজস্ব আয়ও।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, একসময় এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন গড়ে ২৩০টি পাথরবাহী ট্রাক আসত। কিন্তু কয়েক বছর ধরে পাথরবাহী ট্রাক চলাচলের সংখ্যা ১২০ থেকে ১৫০–এ নেমে এসেছে। সর্বশেষ গত বছরের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত পাথর আমদানি বন্ধ ছিল। এখন এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ট্রাক আসছে মাত্র ১০ থেকে ১৫টি। আমদানি বাড়ছে না কমছে, তা এই ট্রাক চলাচলের সংখ্যা দেখে অনেকটা অনুমান করা যায়।

কর্তৃপক্ষ বলছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আয় হয়েছিল ৫৩২ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে ৫১৫ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ এবং ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্বের পরিমাণ যথাক্রমে ৩০০ ও ৩০১ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের পরিমাণ মাত্র ৯১ কোটি টাকা।

সোনামসজিদ স্থলবন্দরের আমদানি ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রফিক উদ্দিন ও পাথর ব্যবসায়ীরা জানান, পাকুড় থেকে আসা পাথরবোঝাই ট্রাকগুলোকে ভারতের মহদিপুর বন্দর থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরের সুশ্তানি মোড় পর্যন্ত আসতে দেওয়া হয়। সেখানে ট্রাকগুলো থেকে পাথর নামিয়ে মজুত করা হয়। এরপর স্থানীয় ফিটনেসবিহীন ট্রাকে আবার পাথর বোঝাই করে পাঠানো হয় সোনামসজিদ বন্দরে। এটা করতে বাধ্য করে এসব ট্রাকের মালিকসহ স্থানীয়দের একটি চক্র। দ্বিতীয়বার বোঝাইয়ের সময় দেওয়া হয় নিম্নমানের পাথর। সঙ্গে থাকে ধুলা। ট্রাকের ভাড়াও অনেক চড়া। ১৫ কিলোমিটারের জন্য আমদানিকারকদের ভাড়া গুনতে হয় টনপ্রতি ৮০০ টাকা করে। এতে এক ট্রাক পাথর আমদানি করতে পরিবহন খরচ হয় প্রায় ৩২ হাজার টাকা। এ ছাড়া আগে পাথর আসতে সময় লাগত দুই থেকে তিন দিন। সুশ্তানি মোড়ে বিরতি দেওয়ায় সময় লাগে ১৫ থেকে ২৫ দিন। বেশি সময় লাগায় প্রতিদিন ট্রাকপ্রতি ডেমারেজ চার্জ দিতে হয় ১৮৫ টাকা। এই অতিরিক্ত টাকাই পরিবহন খরচ আরও বাড়িয়ে দেয়।

ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ শিল্প ও বণিক সমিতির সাবেক সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের সুশ্তানি মোড় এলাকার ফিটনেসবিহীন ট্রাকগুলো ভারতের অন্য এলাকায় চলতে পারে না। তাই বাংলাদেশি পাথর আমদানিকারকদের তাঁরা বাধ্য করেন তাঁদের ফিটনেসবিহীন ট্রাকে পাথর বহন করতে। চেম্বার অব কমার্সের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের বন্দরে চলাচলে এসব ট্রাক বন্ধ করা না গেলে আমদানিকারকদের খরচ বাড়বে। তখন তাঁরা এ বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন। তাতে গুটিয়ে যাবে এ বন্দরের কার্যক্রমও।