৬ দিনে ২ হাজার যাত্রী পরীক্ষা, ভাইরাসের লক্ষণ মেলেনি

করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতার অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। ছবি: দীপু মালাকার
করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতার অংশ হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে থার্মাল স্ক্যানার। ছবি: দীপু মালাকার

চীন থেকে বাংলাদেশে গত ছয় দিনে সরাসরি যেসব ফ্লাইট এসেছে, তার দুই হাজারের বেশি যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। এই পরীক্ষায় কারও মধ্যে করোনাভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি। আজ রোববার ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এই তথ্য জানিয়েছে।

চীনের করোনাভাইরাস যাতে বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, সে জন্য ২০ জানুয়ারি থেকে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিশেষ সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। একই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে চট্টগ্রামের শাহ আমানত ও সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে।

ঢাকা ও চীনের মধ্যে প্রতিদিন ছয়টি ফ্লাইট যাওয়া-আসা করে। চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইন, চায়না ইস্টার্ন ও ইউএস-বাংলা সরাসরি এসব ফ্লাইট পরিচালনা করে। এসব ফ্লাইটে চীন থেকে আসা যাত্রীদের পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে।

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. জহিরুল ইসলাম আজ প্রথম আলোকে বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চীন থেকে যাত্রী আসা কমে গেছে। গত সোমবার থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত চীন থেকে ঢাকায় আসা ২ হাজার ৪৮ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের কারও মধ্যে এই ভাইরাসের লক্ষণ পাওয়া যায়নি।

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রীদের দুভাবে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। থার্মাল স্ক্যানার ও ইনফরমেশন কার্ডের মাধ্যমে এসব স্ক্রিনিং করা হচ্ছে। সাধারণত কারও শরীরের তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকলে থার্মাল স্ক্যানার সংকেত দেয়। এ ছাড়া তথ্যভিত্তিক স্ক্রিনিংয়ে উড়োজাহাজের আরোহীদের কার্ড দিয়ে তথ্য নেওয়া হচ্ছে।

এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান বলেন, চীন থেকে আসা বাংলাদেশি যাত্রীদের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে, তাঁরা চীনের কোন শহরে কত দিন ছিলেন। আর চীনের কোন শহর থেকে এসেছেন।

এ এইচ এম তৌহিদ উল আহসান জানান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে উড়োজাহাজের ভেতরে শুধু যাত্রীদের ও নামার পর কেবিন ক্রুসহ সব আরোহীদের আরেকটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আর থার্মাল স্ক্যানারে কোনো যাত্রীর শরীরে জ্বরের উপসর্গ পাওয়া গেলে তাঁকে আরেকটি কার্ড দেওয়া হচ্ছে।

স্বাভাবিক সময়ে সার্বক্ষণিক শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সংক্রামক রোগ শনাক্তে তিনটি থার্মাল স্ক্যানার কাজ করে। একটি ভিআইপিদের বের হওয়ার পথে, আর দুটি সাধারণ যাত্রীদের জন্য উড়োজাহাজ থেকে ইমিগ্রেশনে যাওয়ার পথে।

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ছে করোনাভাইরাস। চীনের বাইরে ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, নেপাল, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্র ও ভিয়েতনামে এই ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্ত করা গেছে।

ভাইরাসটির সংক্রমণ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগের কারণ হলো—সিভিয়ার অ্যাকুইট রেসপিরেটরি সিনড্রোমের (সার্স) মতো এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়ছে। এ কারণে বিশেষ স্বাস্থ্য সতর্কতা নিয়েছে বাংলাদেশ। অন্য সময় বিমানবন্দরে চারজন চিকিৎসক ও নয়জন নার্স শিফটে কাজ করেন। তবে এখন আরও সাতজন চিকিৎসক ও পাঁচ-ছয়জন নার্স দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানানো হয়েছে।

ভাইরাসের সংক্রমণে চীনে মৃতের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে।