টাকা দিতে চায় গ্রামীণফোন, ছাড় চেয়ে রিভিউ আবেদন

সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনকে (বিটিআরসি) টাকা দিতে চায় মোবাইল অপারেটর গ্রামীণফোন। তবে পরিমাণের দিক দিয়ে ছাড় চায় তারা। পাশাপাশি তারা কিস্তিতে দেওয়ার সুযোগও দাবি করেছে।

এ দুটি দাবি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে একটি রিভিউ আবেদন করেছে গ্রামীণফোন। আজ রোববার এ আবেদন করা হয় বলে জানিয়েছে অপারেটরটি। এতে গ্রামীণফোন বলেছে, তারা ৫৭৫ কোটি টাকা ১২টি কিস্তিতে দিতে চায়।

এর আগে গত ২৪ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ এক রায়ে গ্রামীণফোনকে দুই হাজার কোটি টাকা জমা দিতে বলেছিল। এতে বলা হয়েছিল, গ্রামীণফোন তিন মাসের মধ্যে ওই টাকা জমা দিলে সরঞ্জাম আমদানি ও প্যাকেজ অনুমোদনে বিটিআরসির নিষেধাজ্ঞা স্থগিত করে হাইকোর্টের যে নির্দেশ রয়েছে, তা বহাল থাকবে। এর মানে হলো, গ্রামীণফোন সরঞ্জাম আমদানি করতে পারবে।

এরই পরিপ্রেক্ষিতে গ্রামীণফোন আজ রিভিউ আবেদন করে জানিয়েছে। তারা টাকা দিতে চায়। তবে পরিমাণে ছাড় চায়।

গ্রামীণফোনের পরিচালক ও হেড অব রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স হোসেন সাদাত আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ৫৭৫ কোটি টাকা দেওয়ার কথা বলছি। এটা বিটিআরসির ত্রুটিপূর্ণ নিরীক্ষার ভিত্তিতে দাবি করা আসল (প্রিন্সিপাল) অঙ্কের ২৫ শতাংশ। আমরা আশা করি, সর্বোচ্চ আদালত আমাদের আবেদন বিবেচনা করবেন।’

বিটিআরসির দাবি অনুযায়ী, রাজস্বের ভাগাভাগি, কর ও অন্যান্য খাতে গ্রামীণফোন ও রবির কাছে প্রতিষ্ঠানটির পাওনা ১৩ হাজার ৪৪৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা এবং রবির কাছে ৮৬৭ কোটি টাকা। এ পাওনার উৎস গ্রামীণফোনের ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত এবং রবির ওপর ১৯৯৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত নিরীক্ষা। অবশ্য গ্রামীণফোন ও রবি সব সময় বলে আসছে, তাদের যুক্তি নিরীক্ষায় বিবেচনায় নেওয়া হয়নি।

গ্রামীণফোন জানিয়েছে, বিটিআরসি যে ১২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা দাবি করছে, তার মধ্যে ৪ হাজার ৮৬ কোটি টাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পাওনা দাবি। বিটিআরসির পাওনা দাবির ৮ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল অঙ্ক ২ হাজার ২৯৯ কোটি। বাকিটা ১৫ শতাংশ হারে চক্রবৃদ্ধি সুদ।

পাওনা আদায়ের পদক্ষেপ হিসেবে বিটিআরসি দুই অপারেটরের সরঞ্জাম আমদানি ও প্যাকেজ অনুমোদন বন্ধ করে দিয়েছিল। বিষয়টি আদালতে গড়ালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গ্রামীণফোনকে ২ হাজার কোটি ও হাইকোর্ট বিভাগ রবিকে ১৩৮ কোটি টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়। রবির ক্ষেত্রে পাঁচটি কিস্তির সুযোগ দেওয়া হয়।

রবি ১৩ জানুয়ারি প্রথম কিস্তি হিসেবে ২৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করে সরঞ্জাম আমদানির অনুমতির নিষেধাজ্ঞা কাটিয়েছে। গ্রামীণফোনও একই পথে হাঁটছে।

আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে গ্রামীণফোনের হোসেন সাদাত বলেন, তাঁরা আশা করেন, সর্বোচ্চ আদালত তাঁদের দাবি বিবেচনা করবেন। এরপর নিরীক্ষা দাবি নিয়ে প্রত্যাশিত সংলাপ শুরু হবে।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার প্রথম আলোকে বলেন, ‘গ্রামীণফোনকে ধন্যবাদ। তারা দেশের আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়েছে। এই শ্রদ্ধাবোধ বজায় থাকুক, সেটা আমরা চাই।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নিরীক্ষা নিয়ে সরকার আলোচনায় ছিল। আদালতে গেছে গ্রামীণফোন। আদালতের সিদ্ধান্ত আসুক। তারপর আলোচনা শুরুর বিষয়ে চিন্তা করা যাবে। আগাম বলা ঠিক হবে না।’