রাবিতে নিয়োগে তড়িঘড়ি: শিক্ষকের প্ল্যাকার্ড ড্রেনে ফেললেন সহকারী প্রক্টর

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রপ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার স্থগিতের দাবিতে উপাচার্য ভবনের গেটের পাশে প্ল্যাকার্ড হাতে দাঁড়িয়েছিলেন ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষক মোহা. সোলায়মান চৌধুরী। এ সময় সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর ‘উপাচার্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ বিবেচনায় তাঁর প্ল্যাকার্ডটি ছিনিয়ে নিয়ে পাশের ড্রেনে ফেলে দেন। আজ রোববার সকাল সোয়া নয়টার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ সকালে উপাচার্যের বাসভবনে ক্রপ সায়েন্স বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের শিক্ষক মু. আলী আসগর শিক্ষক নিয়োগের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছিলেন। আগামীকাল সোমবার রিটের রায় ঘোষণার কথা রয়েছে। হাইকোর্টের রায়ের আগের দিনই নিয়োগ বোর্ডের সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়। বিভাগের সভাপতি সাইফুল ইসলাম নিয়োগ সাক্ষাৎকার সম্পন্ন হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর প্রতিবাদে রোববার সকাল পৌনে নয়টায় মোহা. সোলায়মান চৌধুরী উপাচার্য বাসভবনের সামনে একটি প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে অবস্থান নেন। কিছুক্ষণ পরে সহকারী প্রক্টর মো. হুমায়ুন কবীর সেখানে এসে তাঁর হাত থেকে প্ল্যাকার্ডটি নিয়ে ড্রেনে ফেলে দেন। সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘সকাল সোয়া নয়টায় সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর ও রবিউল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয় শাখা বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন মোটরসাইকেলে করে সেখানে আসেন। তাঁরা তিনজনই আমাকে চলে যেতে বলেন। আমি কেন সেখানে দাঁড়িয়েছি তা জানতে চান। হুমায়ুন কবীর আমাকে অকথ্য ভাষায় হুমকি দেন। এ সময় আমি ফোনে দু-একজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলতে গেলে হুমায়ুন কবীর আমার হাত থেকে প্ল্যাকার্ডটি ছিনিয়ে নিয়ে পাশের ড্রেনে ফেলে দেন। তারপর তাঁরা মোটরসাইকেলে করে চলে যান।’

সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘আমি নৈতিকতার জায়গা থেকে একাই সেখানে দাঁড়িয়েছিলাম। আমি কারও কোনো কাজে বাধার সৃষ্টি করিনি, কিন্তু তাঁরা আমার কাজে বাধা দেন।’

অভিযোগের বিষয়ে সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুমতি ছাড়া উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দাঁড়ানোর নিয়ম নেই। আমার কাছে মনে হয়েছে, উনি উপাচার্যের নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারেন। হয়তো দেখা যাচ্ছে প্ল্যাকার্ড, কিন্তু তার ভেতরে আগ্নেয়াস্ত্র থাকতে পারে। সে কারণে জিনিসটা আমি কেড়ে নিই।’ তবে তিনি অশালীন ভাষায় হুমকির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। এ বিষয়ে আরেক সহকারী প্রক্টর রবিউল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগ অস্বীকার করে বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম লীগের সভাপতি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘সহকারী প্রক্টর স্যাররা যখন সেখানে যান, আমিও তখন ছিলাম। তবে আমি তাঁকে কিছুই বলিনি।’

পরে সকাল ১০টার দিকে সোলায়মান চৌধুরীর সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে বাংলা বিভাগের শিক্ষক সফিকুন্নবী সামাদী, ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি শিক্ষক সুলতান-উল-ইসলাম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক মজিবুল হক আজাদ খান, গণিত বিভাগের শিক্ষক আসাবুল হকসহ কয়েকজন শিক্ষক অবস্থান নেন। বেলা ১১টার দিকে তাঁরা চলে যান।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর মো. লুৎফর রহমান বলেন, ‘দুজন সহকারী প্রক্টর ওই শিক্ষকের অবস্থানের কথা আমাকে জানিয়েছিলেন। তবে হুমকি দেওয়া বা প্ল্যাকার্ড ছিনিয়ে নেওয়ার কথা শুনিনি।’