তাঁরা ভোটের মাঠে, দুদক রেখেছে 'নজরদারিতে'

দুর্নীতির অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অনুসন্ধান চালাচ্ছে এমন ৬ ছয় আছেন ঢাকা সিটির ভোটের মাঠে। এদের মধ্যে একজনের বিরুদ্ধে দুদক মামলাও করেছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযানে দুই সিটির ৩ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার হন। তাঁদের মধ্যে একজন আছেন ভোটের মাঠে। দুদক সূত্র জানিয়েছে, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে তাঁরা দুদকের নজরদারিতে আছেন।

১৮ সেপ্টেম্বর শুরু হওয়া ‘শুদ্ধি অভিযানে’ চলমান শুদ্ধি অভিযানের ধারাবাহিকতায় ১১ অক্টোবর সিলেটের শ্রীমঙ্গলে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান ওরফে মিজান। পরে তাঁর বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও অস্ত্র আইনে দুটি মামলা করে র‍্যাব। ১৯ অক্টোবর রাজধানীর বসুন্ধরা এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ডিএনসিসির ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীবকে। অস্ত্র ও মাদক আইনে দুটি মামলা হয় তাঁর বিরুদ্ধে। এরপর ৩১ অক্টোবর গ্রেপ্তার হন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ময়নুল হক ওরফে মনজু।

এঁদের মধ্যে মিজান ও রাজীবের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক। ময়নুল হক মনজুর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। রাজীব ও মিজান ভোটের মাঠে না থাকলেও মনজু ভোটের মাঠে আছেন। রেডিও প্রতীকে ভোটে লড়ছেন মনজু।

ডিএনসিসির ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইকবাল হোসেন ওরফে তিতুর এবং ডিএসসিসির ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোস্তফা জামান পপির বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে দুদকে। তবে তাঁরা ভোটের মাঠে নেই।

ডিএসসিসির কাউন্সিলর মোমিনুল হক সাঈদের নাম সাম্প্রতিক শুদ্ধি অভিযানে ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। ‘ক্যাসিনো সাঈদ’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া সাঈদ অভিযানের শুরুর দিকে আত্মগোপনে চলে যান। অবশ্য এর মধ্যে তাঁকে কাউন্সিলর পদ থেকে অপসারন করা হয়। ৪ কোটি ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০ নভেম্বর তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ডামাডোলে তিনি আবারও সামনে চলে আসেন। প্রথম আলোর কাছে কয়েকদিন আগে তিনি দাবি করেন, তিনি নিজের জন্য বা পরিবারের জন্য কিছু করেননি, যা কিছু করেছেন, সবই খেলাধুলা ও দলের জন্য। তাঁর সঙ্গে যা হয়েছে, সেটা ‘মিডিয়া ট্রায়াল’। এমনকি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাঁর বিরুদ্ধে যে মামলা করেছে, সেটাও ‘গাঁজাখুরি’ মামলা। তিনি আশা করেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করলেও পরে দলে ফিরতে পারবেন। কারণ, তিনি বহিরাগত নন। তাঁর পরিবারের সবাই বরাবর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
মোমিনুল হক সাঈদ লাটিম মার্কায় আর তাঁর স্ত্রী ফারহানা আহম্মেদ (বৈশাখী) ঠেলাগাড়ি নিয়ে ভোটের মাঠে আছেন।

এ ছাড়া ডিএসসিসি নির্বাচনে আরও তিনজন কাউন্সিলর ভোটের মাঠে আছেন। তাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। এঁরা হলেন ২০ নম্বর ওয়ার্ডে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ওরফে ম্যাজিক রতন (প্রতীক-ঠেলাগাড়ি) এবং ৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিরাজুল ইসলাম ভাট্টি (প্রতীক-রেডিও)।

ডিএনসিসির ২ কাউন্সিলরও ভোটের মাঠে আছেন। এঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। এরা হলেন ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শফিকুল ইসলাম ওরফে সেন্টু (ঠেলাগাড়ি) এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ডের আবুল হাসেম ওরফে হাসু (ঠেলাগাড়ি)।

এ বিষয়ে জানতে চাইল দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘আমরা আমাদের কাজ করছি। দুর্নীতির অনুসন্ধান করছি। ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা করেছি। অভিযোগ নিয়ে ভোটের মাঠে থাকার বিষয়টি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেক সময় আমরা দেখেছি কারাগারে থেকেও অনেকে নির্বাচন করে থাকেন। কিন্তু একটি বিষয় বলতে চাই, যাঁদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আছে তাঁদের সবাই আমাদের নজরদারিতে আছেন।’