জরায়ুমুখে ক্যানসার নির্ণয়ে সাড়া নেই

দেশে ক্যানসার আক্রান্ত নারীর ৩০ ভাগই জরায়ুমুখের ক্যানসারের শিকার। এ জন্য সরকার ত্রিশোর্ধ্ব নারীদের বিনা মূল্যে জরায়ুমুখের ক্যানসার পরীক্ষা ‘ভায়া’ করার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে। কিন্তু তাতে সাড়া মিলছে না। গত পাঁচ বছরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে মাত্র ১৮ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয়ের পরীক্ষা করেছেন।

চমেক হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বহির্বিভাগে ভায়া (ভিজ্যুয়াল ইনেসপেকশন অব কারভিক্স উইথ অ্যাকটিভ অ্যাসিড) স্ক্রিনিং পরীক্ষা শুরু হয় ২০০৪ থেকে। গত পাঁচ বছরে এখানে ভায়া পরীক্ষা করায় মাত্র ১৮ হাজার ২৮৬ নারী। এদের মধ্যে ৫২৮ জনের ভায়া পজিটিভ পাওয়া যায়। বাকিদের ভায়া নেগেটিভ। পজিটিভ মানে জরায়ুমুখে ক্যানসারের লক্ষণ রয়েছে। তবে তা ক্যানসার কি না, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। নানা পরীক্ষায় তা ক্যানসার কি না, নির্ধারণ করা হয়।

জানতে চাইলে গাইনি বহির্বিভাগের আবাসিক সার্জন নার্গিস সুলতানা প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিবছর দেশে নতুন করে ১২ হাজার নারী জরায়ুমুখের ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। দেশে মোট ক্যানসার আক্রান্ত মৃত্যুর ছয় হাজার জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণেই হয়। এ জন্য ৩০ থেকে ৬০ বছর বয়সী নারীদের জন্য সরকারি হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ক্লিনিকে বিনা মূল্যে ভায়া পরীক্ষা করা হয়। সারা দেশে এই বয়সের প্রায় তিন কোটি নারী রয়েছেন। কিন্তু উপস্থিতি এখনো আশানুরূপ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। সবার এ পরীক্ষা করানো দরকার।

জানা গেছে, সারা দেশে ২০০৪ থেকে ভায়া পদ্ধতিতে জরায়ুমুখের ক্যানসার নির্ণয় শুরু হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেলার পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রসহ কয়েকটি হাসপাতালে এ পরীক্ষা হয়।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ প্রকল্পে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএনএফপিএ কারিগরি সহায়তা দিচ্ছে। গত শনিবার শেষ হলো জরায়ু ও স্তন ক্যানসার প্রতিরোধ সপ্তাহ। এ সময় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য নানা পদক্ষেপ নেওয়া হয়। কিন্তু তাতেও কাজ হচ্ছে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চমেক হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ১৫ নারী ভায়া পরীক্ষা করাতে আসে এবং এদের দু–তিনজন জরায়ু ক্যানসার নিয়ে ভর্তি হয়। এই নারীদের মধ্যে নতুন ও পুরোনো রোগী থাকে।

গত বছর ৩ হাজার ৭৩৫ নারী ভায়া পরীক্ষা করায়। এদের মধ্যে পজিটিভ ছিল ৭২ জনের। ২০১৮ সালে ৪ হাজার ১১০ জনের মধ্যে ৭৮ জন পজিটিভ; ২০১৭ সালে ৩ হাজার ৮৯৬ জনের মধ্যে ৭৮ জন; ২০১৬ সালে ৩ হাজার ৩৯১ জনের মধ্যে ১৩২ জন এবং ২০১৫ সালে ৩ হাজার ১৫৪ জনের মধ্যে ৭২ জনের ভায়া পজিটিভ পাওয়া যায়।

ভায়া পজিটিভ হলে গোলাপি রঙের একটি কার্ড দেওয়া হয়। এরপর তাঁকে আরও কিছু পরীক্ষা–নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। ওই পরীক্ষার পর ক্যানসার নিশ্চিত হলে তাকে লাল রঙের কার্ড দেওয়া হয়। ভায়া নেগেটিভ হলে নীল রঙের কার্ড দেওয়া হয়। তখন পাঁচ বছর পর আবার একই পরীক্ষার জন্য আসতে বলা হয়।

নার্গিস সুলতানা বলেন, ‘এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে জরায়ুমুখের ক্যানসারের পূর্বাবস্থা ধরা পড়ে। তখন চিকিৎসাপদ্ধতি সহজ হয়। 

তিনি বলেন, আমাদের দেশের নারীরা নিজেদের লুকিয়ে রাখে। মুখ খুলতে চান না, নীরবে রোগ পোষেণ। শেষ মুহূর্তে ক্যানসার নিয়ে আসেন। তখন কিছুই করার থাকে না। যদি আগে ধরা পড়ে, তাহলে চিকিৎসা দেওয়া সহজ হয়।’