কলেজটি নামেই স্নাতকোত্তর

বান্দরবান সরকারি কলেজ।  প্রথম আলো
বান্দরবান সরকারি কলেজ। প্রথম আলো

বান্দরবান সরকারি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রিসহ সাতটি বিষয়ে অনার্স কোর্স ও তিনটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর চালু রয়েছে। স্নাতকোত্তর পর্যায়ের এই কলেজে নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা ৯০ জন। অথচ জাতীয়করণের পর থেকে উচ্চমাধ্যমিকের জনবল নিয়েই চলছে কলেজটি। বর্তমানে মাত্র ৩২ জন শিক্ষক দিয়েই চলছে পাঠদান। 

জানা গেছে, কলেজটিতে উচ্চমাধ্যমিকের জনবল কাঠামোর চেয়ে কম শিক্ষক রয়েছেন। উচ্চমাধ্যমিকের পর্যায়ে ৪১ জন শিক্ষক থাকার কথা অথচ কর্মরত আছেন ৩২ জন। এ ছাড়া কলেজটিতে রয়েছে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট। এ কারণে দুর্গম এলাকার অনেক শিক্ষার্থী কলেজে ভর্তি হয়েও নিয়মিত ক্লাস করতে পারেন না।  

শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, জেলায় স্নাতকোত্তর পর্যায়ের একমাত্র উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে বান্দরবান সরকারি কলেজে প্রতিবছরই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার থেকেও ছাত্রছাত্রী ভর্তি হচ্ছে এই কলেজে। তবে বাড়ছে না শিক্ষকের সংখ্যা। শিক্ষকদের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে অধিকাংশ শিক্ষক এসে আবার দিনে দিনে ফিরে যান। শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিযোগ, জেলার বাইরে বসবাস করা শিক্ষকেরা দ্রুত চলে যাওয়ায় বেলা দেড়টার পর কলেজের শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। 

কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সহকারী অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, আবাসন সংকট শুধু শিক্ষকদের নয়, দূরদূরান্ত থেকে আসা শিক্ষার্থীদেরও থাকার জায়গা নেই। শিক্ষকদের ডরমিটরিতে পরিবারবিহীন ২০ জন শিক্ষকের আবাসন ব্যবস্থা রয়েছে। আর উচ্চমাধ্যমিক, স্নাতক, স্নাতক সম্মান ও মাস্টার্স শ্রেণির ৮ হাজার ১৫২ শিক্ষার্থীর জন্য ১০০ শয্যার একটি ছাত্রাবাস রয়েছে। 

অথচ অধিকাংশ শিক্ষার্থী রুমা, থানচি, আলীকদম, লামাসহ বিভিন্ন উপজেলার দুর্গম এলাকা থেকে পড়াশোনা করতে আসে। তাদের অভিভাবকেরা দরিদ্র জুমচাষি। এসব শিক্ষার্থীর পক্ষে জেলা শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব নয়। ছাত্রীদের জন্য কোনো ছাত্রীনিবাস না থাকায় কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা কমছে। 

অধ্যক্ষ মো. মকছুদুল আমিন বলেন, ১৯৭৫ সালে প্রতিষ্ঠিত বান্দরবান সরকারি কলেজ ১৯৮০ সালে জাতীয়করণ করা হয়েছে। ১৯৯৬ সালে ডিগ্রি, ২০০১ সালে স্নাতক (সম্মান) ও পরবর্তী সময়ে মাস্টার্স কোর্স চালু করা হয়। বর্তমানে কলেজের ১৪টি বিভাগের মধ্যে সাতটিতে সম্মানসহ স্নাতক ও তিনটি বিভাগে মাস্টার্স পড়ানো হচ্ছে। কিন্তু মাস্টার্স পর্যন্ত পাঠদান করা হলেও উচ্চমাধ্যমিকের ৪১ জন শিক্ষকের জনবলকাঠামো রয়ে গেছে কলেজটিতে। একাডেমিক নিয়ম অনুযায়ী সম্মানসহ স্নাতক আছে এমন প্রতিটি বিভাগে ৭ জন, মাস্টার্সে ১২ জন শিক্ষক থাকতে হবে। সে অনুযায়ী শিক্ষক থাকার কথা ৯০ জন। বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৩২ জন শিক্ষক। সেই হিসেবে প্রায় ২৫৫ জন শিক্ষার্থীকে একজন শিক্ষক পাঠদান করছেন। 

কলেজের উপাধ্যক্ষ নুরুল মোমেন বলেছেন, এমনিতে জনবল সংকটে রয়েছে কলেজটি। আর যে কয়েকজন শিক্ষক রয়েছেন অধ্যক্ষসহ তাঁদেরও পরিবারসহ থাকার কোনো বাসভবন নেই। এ জন্য অধ্যক্ষসহ অধিকাংশ শিক্ষক বাসের টিকিট পকেটে নিয়ে কর্মস্থলে এসে পাঠদান শেষে আবার ফিরে যান।

ছাত্রীনিবাস নেই

শিক্ষকেরা জানিয়েছেন, ছাত্রীনিবাস না থাকায় কলেজে ছাত্রীর সংখ্যা কম। থাকার জায়গার অভাবে দূর থেকে আসা ছাত্রীরা পড়াশোনা করতে পারছে না। গত বছরের জানুয়ারিতে ১৬০ শয্যার একটি ছাত্রীনিবাসের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। অধ্যক্ষ মকছুদুল আমিন বলেছেন, বার বার বলা হলেও এক বছরেও ঠিকাদার ছাত্রীনিবাসের কাজ শুরু করেনি। 

শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ছাত্রীনিবাসের নকশা অনুমোদনের বিলম্বের কারণে কাজ শুরুতেও বিলম্ব হচ্ছে। চলতি মাসেই কাজ শুরু হবে।