কে হচ্ছেন নৌকার প্রার্থী?

বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের আওয়ামী লীগের টানা তিনবারের সাংসদ আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর সেখানে কে হচ্ছেন নৌকার পরবর্তী প্রার্থী, তা নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন চলছে। আবদুল মান্নানের অনুসারীরা এই সাংসদের স্ত্রী কিংবা ছেলেকে উপনির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চাইছেন।

এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও সরব সাংসদের কর্মী-সমর্থকেরা। তবে সাংসদের পরিবারের বাইরেও সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজনের নাম শোনা যাচ্ছে।

অন্যদিকে আসনটি পুনরুদ্ধারের সুযোগ কাজে লাগাতে চায় বিএনপি। আগামী উপনির্বাচনে এ আসনে বিএনপির ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে তিনজনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

সোনাতলা ও সারিয়াকান্দি উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হন হাবিবুর রহমান। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সাংসদ হন কাজী রফিকুল ইসলাম। ২০০৮ সাল এবং পরবর্তী ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে সাংসদ হন আবদুল মান্নান। আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মান্নান ১৯৯১ থেকে সব নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ছিলেন। তাঁর জীবদ্দশায় দলের অন্য দু-একজন মনোনয়ন চাইলেও খুব সাড়া পাননি কেন্দ্র থেকে।

হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে ১৮ জানুয়ারি রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আবদুল মান্নান। নেতা-কর্মীরা মনে করেন, আবদুল মান্নানের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে শূন্যতার তৈরি হয়েছে, তা পূরণ হতে অনেক সময় লাগবে। বিশেষ করে যমুনা নদীর ভাঙন থেকে সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলাবাসীকে রক্ষায় নদীর ডান তীর সংরক্ষণসহ এলাকার রাস্তাঘাট-সেতু-কালভার্ট নির্মাণ বিভিন্ন উন্নয়নকাজে ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। 

জেলা আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, আবদুল মান্নানের মৃত্যুর পর ২১ জানুয়ারি সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে দলীয় সভায় অনেকেই উপনির্বাচনে তাঁর স্ত্রী এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাহাদারা মান্নানকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানান। তবে দলের অনেকেই আবার মান্নানের ছেলে মোহাম্মেদ সাখাওয়াত হোসেনকে প্রার্থী হিসেবে চান। সাখাওয়াত বর্তমানে রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান বলেন, মান্নানের অবর্তমানে তাঁর পরিবারের কোনো সদস্য দলীয় প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আসনটি ধরে রাখতে তাঁর পরিবারকে নৌকার কান্ডারি করার বিকল্প নেই। 

ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে সাংসদের ভায়রা ও যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান এবং ডাকসুর সাবেক সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি আবদুর রাজ্জাকও আলোচনায় রয়েছেন।

সিদ্দিকুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আবদুল মান্নান দলকে সুসংগঠিত করেছেন। তাঁর অবর্তমানে স্ত্রী সাহাদারা মান্নানই নৌকার প্রার্থী হোক এটা ব্যক্তিগত চাওয়া। তবে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নৌকার কান্ডারি হিসেবে যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁর পক্ষেই কাজ করব। দলের প্রয়োজনে তিনি আমাকে মনোনয়ন দিলে প্রার্থী হব।’

ফিরতে চায় বিএনপি

বগুড়া-১ শূন্য আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে কয়েকজনের নাম আলোচনায় রয়েছেন। তাঁরা হলেন, গেল জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম, জিয়া শিশু-কিশোর সংগঠন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ হোসেন চৌধুরী, জেলা বিএনপির সদস্য ও সোনাতলা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এ কে এম আহসানুল তৈয়ব এবং সারিয়াকান্দি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান।

এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ১৭ হাজার ৪২২ জন। গত নির্বাচনে এখানে বিএনপি ভোট পায় মাত্র ১৬ হাজার ৫০০। আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবদুল মান্নান পান ২ লাখ ৬৮ হাজার। তবে এই ফলাফল প্রথম থেকেই প্রত্যাখ্যান করে আসছে বিএনপি। 

বিগত নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী কাজী রফিকুল ইসলাম বলেন, গায়েবি মামলা দিয়ে নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়া করে ভোটের আগের রাতেই ব্যালট কেটে বাক্স ভরিয়ে বিজয়ী হয়েছিল আওয়ামী লীগ। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হলে আগামী উপনির্বাচনে ফলাফল ঠিক উল্টোটা হবে। 

দলীয় সূত্র জানায়, সংস্কারপন্থীদের পক্ষ নেওয়ায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে কাজী রফিকুল ইসলাম মনোনয়নবঞ্চিত হন। তাঁর বদলে জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা মোহাম্মদ শোকরানাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। বিগত নির্বাচনে শোকরানা মনোনয়ন চেয়ে না পেয়ে সম্প্রতি বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দেন।

আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী মোশাররফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাঠপর্যায়ে দলীয় কর্মকাণ্ড ও সামাজিক অনুষ্ঠানে সরব থেকে নেতা–কর্মীদের উজ্জীবিত করছেন। নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা পরিচালনার খরচ জোগানোসহ নানাভাবে পাশে রয়েছেন। দলের প্রয়োজনে দীর্ঘ সময় ধরে ধানের শীষের পক্ষে জনমত গঠন করেছেন। ত্যাগ ও শ্রমের মূল্যায়ন করে দল তাঁকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশাবাদী তিনি।

জানতে চাইলে বগুড়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এবং দলীয় সাংসদ গোলাম মোহাম্মদ সিরাজ বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যাঁকে যোগ্য মনে করবেন, তাঁকে ধানের শীষের প্রার্থী করা হবে। এবার আসনটি ফিরে পেতে চায় বিএনপি।