হাজী দানেশে ছাত্রলীগের আন্দোলনে নবীনবরণ বন্ধ

বিভিন্ন দাবি নিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা আজ সোমবার প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ছবি: প্রথম আলো
বিভিন্ন দাবি নিয়ে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা আজ সোমবার প্রশাসনিক ভবনে তালা দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। ছবি: প্রথম আলো

দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নবীনবরণ অনুষ্ঠান ছিল আজ সোমবার সকাল ১০টায়। এ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাজসাজ রব। শেখ রাসেল হল মাঠে অনুষ্ঠান মঞ্চও তৈরি হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে যখন উৎসবের আমেজ, ঠিক সেই সময় গতকাল রোববার বিকেল ৫টায় ১৩ দফা দাবিতে অনুষ্ঠান বর্জনের ডাক দেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশের নেতা-কর্মীরা।

অনুষ্ঠান বন্ধ হওয়ায় শত শত অভিভাবক ও নবীন শিক্ষার্থীকে ফিরে যেতে হয়েছে। নাটোর জেলা থেকে মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসেছিলেন মো. ইব্রাহীম খলিল। বলেন, ‘এবার মেয়েকে আর্কিটেকচার বিভাগে ভর্তি করিয়েছি। গত রাতে এসেছি। মেয়েকে যে মেসে তুলে দিয়েছি, তার পাশেই একটি মেসে ছিলাম। এখন শুনতেছি অনুষ্ঠান হবে না। প্রথম দিনেই এমন অভিজ্ঞতা হলো।’

পাবনা থেকে আসা রসায়ন বিভাগের নবীন শিক্ষার্থী মুরাদ হাসান বলেন, ‘কত আশা ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নবীনবরণ অনুষ্ঠান নিয়ে। সব আশাই শেষ। তবে শুনে ভালো লাগছে যে ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিতে বড় ভাইয়েরা অনুষ্ঠান বর্জন করেছে। আমরা নতুন, কিছু বলার নেই।’

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে ২০ জানুয়ারি। ২১ জানুয়ারি নবীনবরণ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও ১৬ জানুয়ারি অনুষ্ঠান পিছিয়ে দেওয়া হয়। আজ অনুষ্ঠানের নতুন দিন ধার্য করা হয়। অনুষ্ঠানের আগের দিন গতকাল ল্যাবরেটরি ও শ্রেণিকক্ষ–সংকটের সমাধান, ভর্তি ফি কমানো, ছাত্রকল্যাণ তহবিলের যথাযথ ব্যবহার, ক্যাম্পাসে নেটওয়ার্ক চালু, গণপরিবহনের সংখ্যা বাড়ানো, প্রত্যেক হলে ডাইনিং চালুসহ ১৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের জন্য অনুষ্ঠান বর্জন করে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

গতকাল বিকেল পাঁচটার দিকে মোর্শেদুল আলম ও রিয়াদ খানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের একাংশ ডেকোরেটর কর্মীদের সাজসজ্জার কাজ বন্ধ করে দেয়। এর আগে রিয়াদ খানের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মী রেজিস্ট্রারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় কোনো সুরাহা না হলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ছাত্র-শিক্ষক মিলনায়তনে ছাত্র পরামর্শকের কক্ষে রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা, সহকারী ছাত্র উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আজ বেলা ১১টার মধ্যে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে মুক্ত হন তাঁরা।

এদিকে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারিক রেজাউল হক এবং ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত আমিনুল ইসলামের শাস্তির দাবিসহ বিভিন্ন দাবিতে ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভবনের প্রধান ফটকে তালা দেয়। রাসেল আলভী, মির্জা ফয়সাল সৌরভ ও পল্লব হোসেন শাখা ছাত্রলীগের এই পক্ষের নেতৃত্ব দেন। তাঁরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেন। পল্লব হোসেন বলেন, ‘বেশ কিছুদিন আগে ছাত্রলীগ নামধারী কয়েকজন আমার নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করে। সেটার বিচারসহ শিক্ষার্থীদের কিছু যৌক্তিক দাবি নিয়ে আন্দোলন করছি। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, গতকাল প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ছাত্রলীগের মনঃপূত হয়নি বলে অনুষ্ঠান বন্ধ করেছেন তাঁরা। বিজ্ঞপ্তিতে ৬ষ্ঠ থেকে ২০তম গ্রেডের মোট ৭০টি পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে চাকরি প্রত্যাশিত প্রার্থীর চেয়ে সীমিত সংখ্যক কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া হচ্ছে বলেই এত আন্দোলন।

তবে ছাত্রলীগ নেতা মোর্শেদুল আলম ও রিয়াদ খান বলেন, নিয়োগের সঙ্গে আন্দোলন কিংবা অনুষ্ঠান বর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ আন্দোলনে নেমেছে। প্রশাসনকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাঁরা কর্ণপাত করেননি। এবার দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ফজলুল হক বলেন, ‘শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দাবি তুলেছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। খুব দ্রুতই বিষয়গুলোর সমাধান করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় নবীনবরণ অনুষ্ঠান বাতিল হলেও বিভাগ অনুযায়ী নবীনবরণ অনুষ্ঠান হচ্ছে। নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে ছাত্রলীগ আন্দোলনে নেমেছেন কি না, তা জানতে চাইলে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘অন্যান্য দাবিগুলোর সঙ্গে নিয়োগ সংক্রান্ত একটি দাবি তারা মৌখিকভাবে জানিয়েছিল। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের চাহিদা অনুযায়ী মঞ্জুরি কমিশনে আমরা তালিকা পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যে কয়েকটি পদের অনুমোদন পেয়েছি, সে কটিই আমরা বিজ্ঞপ্তি আকারে প্রকাশ করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’