আপনাকে পেটাবে, এরপর মামলা দেবে, এটাই নতুন নিয়ম: আমীর খসরু

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন বিএনপি নেতারা। আজ বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে। ছবি: আহমেদ দীপ্ত
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন বিএনপি নেতারা। আজ বিকেলে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন কমিশনের কার্যালয়ে। ছবি: আহমেদ দীপ্ত

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রথমে আপনাকে মারবে, আবার আপনার বিরুদ্ধে মামলা দেবে, এটা তো এখন বাংলাদেশের নতুন নিয়ম। আপনাকে পেটাবে, তারপর আপনার বিরুদ্ধে মামলা দেবে। নতুন নিয়ম দেশে, উল্টোটা।’

আজ সোমবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) কার্যালয়ে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। তাঁর নেতৃত্বে বিএনপির ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ইসির সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে এ ব্রিফিং করে।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, মাহবুব তালুকদার, কবিতা খানম ও মো. রফিকুল ইসলাম। বিএনপির পক্ষ থেকে আরও উপস্থিত ছিলেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান মিয়া, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, বিজন কান্তি সরকার ও যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন।

আওয়ামী লীগ নেতা মামলা করেছেন, মেয়র প্রার্থী ইশরাকই তাদের ওপরে হামলা করেছেন—এমন অভিযোগের প্রশ্নে আমীর খসরু সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের মানুষ কি এমন বোকা যে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর আক্রমণ করেছে তা বিশ্বাস করবে? দেশে যে পরিবেশ, অবস্থা, রাজনীতি চলছে, দখলদারি, খবরদারি চলছে, তাতে বিএনপি আওয়ামী লীগের ওপর হামলা করেছে, দেশের কোনো মানুষ কি তা বিশ্বাস করবে? বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রথম যে প্রশ্নটা উঠে এসেছে, এ নির্বাচনে তা হচ্ছে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে হলে সবার সমান সুযোগের কথা বলা হয়েছে নির্বাচনী আচরণবিধিসহ। কিন্তু এমন কোনো আচরণবিধি নেই, যেগুলো সরকারপক্ষ ভঙ্গ করছে না। নির্বাচনে সরকারের এমপি, মন্ত্রীদের সংশ্লিষ্টতা একেবারে পরিষ্কার। এগুলো সাক্ষী প্রমাণের কোনো বিষয় না।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনী আচরণ মানছে না মন্তব্য করে আমীর খসরু বলেন, ‘আচরণবিধিতে আছে ফুটপাতে কোনো অফিস করা যাবে না। ঢাকা শহরে কমপক্ষে হলেও শখানেক কার্যালয় আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা করেছে ফুটপাতের ওপরে, রাস্তার ওপরে। এগুলো করার কোনো সুযোগ নেই। ইসির দায়িত্ব এগুলো ভেঙে দেওয়া। এরপর যদি আবার করে তো জরিমানা করা, তারপর আবার করা হলে তাঁদের প্রার্থিতা বাতিল করা। এর কোনো আইন মানা হচ্ছে না। প্রতিটি ফুটপাতে, মোড়ে নির্বাচনী কার্যক্রম চলছে, আইন ভাঙছে, মাইক বাজছে, লোকজন চেয়ার–টেবিল নিয়ে বসে আছে, কোনো জায়গায় তো রাস্তায় চলে আসছে। এর কোনো প্রতিকার দেখলাম না।’

পোস্টারের সাইজের ক্ষেত্রে অনিয়ম হচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘ফুটপাতের ওপর বিএনপির একটা অফিসও খোলা হয়নি। আমরা পুরোপুরি নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলছি। ওভারসাইজ পোস্টারগুলো সব সরকারি দলের। নির্বাচনী আচরণবিধি তো ভঙ্গ করে অবিরাম প্রচার তারা চালাচ্ছে। এটা দেশের জনগণ পর্যবেক্ষণ করছে। পুরো ঢাকা শহরে তারা যে পোস্টার লাগিয়েছে, আর বিএনপিরগুলো ছিঁড়ে ফেলছে।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, লেভেল প্লেয়িং কোথায় তাহলে? এভাবে যদি নির্বাচনের দিন পর্যন্ত চলে, এটা কি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হতে পারে। মাইকিং করে যাচ্ছে, কোনো সময় নেই। গানবাজনা চলছে, কিছুই মানছে না। আইন না মানার যে প্রবৃত্তি, নির্বাচনের দিন তারা যে বেরিয়ে আসবে, তা ভাবার কারণ নেই। নির্বাচনের দিন এটা হঠাৎ পরিবর্তন হবে তা বিশ্বাস করার কারণ নেই।

নির্বাচনী পর্যবেক্ষণ প্রসঙ্গে আমীর খসরু অভিযোগ করেন, পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে বহুবার বলা হয়েছে। ব্রতী, ডেমোক্রেসি ওয়াচ, ফেমার মতো পর্যবেক্ষকদের বাদ দেওয়া হয়েছে। যুগে যুগে নির্বাচনী পর্যবেক্ষণে যাদের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে, তাদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এই লিস্টে তারা আছে, যারা সন্ধ্যার সময় বলবে, নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।

ইভিএমের ব্যাপারে বলেন, ইভিএম সংখ্যা দেবে আর পর্যবেক্ষকেরা স্বাগত জানাবে। আর কী হতে পারে।

নির্বাচনী প্রচারে আক্রমণ হচ্ছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, একটা বিরাট ব্যবধান হয়ে গেছে। কোনো ম্যাজিস্ট্রেটের মোবাইল টিম নেই। যাদের মাঠে থাকার কথা, তারা অফিসে বসে কাজ করছে, তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। তাদের দায়িত্ব মাঠে থাকা, ফুটপাতের অফিসগুলো ভেঙে দেওয়া ওভারসাইজ পোস্টারর ছিঁড়ে দেওয়া, মারধরের বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেওয়া। কিছুই হচ্ছে না। বিএনপির প্রার্থীদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, তাদের কোনো নিরাপত্তা নেই। প্রথম দিন থেকে নিরাপত্তার কথা বলা হচ্ছে। প্রার্থীর ওপর হামলা হচ্ছে। সেখানে কোনো মামলা হচ্ছে না। কোনো সমাধান হচ্ছে না। তাহলে ভোটারদের আস্থা কোত্থেকে আসবে?

ইসি কর্মকর্তারা ওয়াদা করেছেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফুটপাতের কার্যালয় ভেঙে দেবেন, ওভারসাইজ পোস্টার নামিয়ে দেবেন, মাইকিংসহ যে আচরণ লঙ্ঘন হচ্ছে, তা বন্ধ করবেন।

বেলা তিনটার দিকে ইসি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এই বৈঠক শুরু হয়।