হামলার পরদিন নিরাপত্তাবেষ্টনীতে ইশরাকের গণসংযোগ

রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন
রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেন। ঢাকা, ২৭ জানুয়ারি। ছবি: সাজিদ হোসেন

দলীয় নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার ঘটনার পরদিন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ইশরাক হোসেনের গণসংযোগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা গেছে। আজ সোমবার ইশরাকের প্রচার মিছিলের পেছনে সার্বক্ষণিক অবস্থান ছাড়াও গণসংযোগ যেসব সড়ক প্রদক্ষিণ করেছে, প্রায় প্রতিটি সড়কের মোড়ে মোড়ে বেশ সতর্ক অবস্থায় ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গতকাল রোববার দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলী এলাকায় ইশরাকের প্রচারণায় বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এতে সাংবাদিকসহ ২৬ জন আহত হন। এই ঘটনার পর ইশরাক অভিযোগ করেছিলেন, মেয়র প্রার্থী হিসেবে তিনি কোনো নিরাপত্তা পাচ্ছেন না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কেউ কেউ সহযোগিতা করলেও কেউ আবার দলীয় ক্যাডারের মতো আচরণ করছেন।

প্রতীক বরাদ্দের পর আজ ১৮তম দিনের মতো গণসংযোগ চালিয়েছেন বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী। আজ তিনি খিলগাঁও, মুগদা, মতিঝিল, শাহজাহানপুর ও পল্টন এলাকায় প্রচার চালান। ১০ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর আজই সবচেয়ে বেশি নেতা-কর্মীদের নিয়ে জনসংযোগ করেছেন তিনি।

প্রচারে অংশ নেওয়া কয়েকজন জানালেন, টিকাটুলীতে হামলার কারণে তাঁরা বেশ সতর্ক ছিলেন। তাই আজকের প্রচারে অন্তত ১০টি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও তাঁদের সমর্থকেরা অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া বিএনপির অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারাও প্রচারে যোগ দিয়েছেন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী খিলগাঁওয়ের তিলপাপাড়া জোড়পুকুর মাঠের সামনে থেকে বেলা আড়াইটায় প্রচার শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয়েছে পৌনে চারটা থেকে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেলা আড়াইটার কিছু আগে জোড়পুকুর খেলার মাঠের সামনে খিলগাঁও থানা-পুলিশের সদস্যরা হাজির হন। তখনো বিএনপির নেতা-কর্মীরা সেখানে আসেননি। বেলা তিনটা নাগাদ জোড়পুকুর খেলার মাঠের সামনের সড়কে অবস্থান নেন হাজারো নেতা-কর্মী। এ সময় প্রায় ৪০ মিনিট যান চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেখান থেকে প্রচার শুরু হয়। খিলগাঁও রেলগেট, মুগদা, মানিকনগর, কমলাপুর রেলস্টেশন, আরামবাগ মোড়, ফকিরাপুল মোড় হয়ে নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে দিনের কর্মসূচি শেষ হয়।

খিলগাঁও এলাকা থেকে শুরু হওয়া এই কর্মসূচির পেছনেই ছিলেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কখনো মোটরসাইকেলে, আবার কখনো পিকআপ ভ্যানে অবস্থান করে তাঁরা গণসংযোগে ছিলেন। গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও ইশরাকের কর্মসূচিকে ঘিরে তৎপর ছিলেন বলে জানা গেছে।

নেতা-কর্মীদের উসকানি না দেওয়ার আহ্বান

বিকেলে নির্বাচনী প্রচার শুরুর আগে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে ইশরাক হোসেন দলের নেতা-কর্মীদের উসকানি না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আপনারা কেউ ভয় পাবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে সবাই ভোটকেন্দ্রে আসবেন এবং ভোটের মাধ্যমে এই সরকারের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের জবাব দেবেন।’

এ সময় বিএনপির এই মেয়র প্রার্থী অভিযোগ করে বলেন, কিছুদিন আগে উত্তরের মেয়র প্রার্থীর ওপর হামলা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর হামলা হচ্ছে। গতকাল তাঁর নির্বাচনী প্রচারেও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা করেছে। পরে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে তাঁদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে এবং কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র প্রয়াত সাদেক হোসেন খোকার বড় ছেলে ইশরাকের দাবি, ধানের শীষের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। জাতীয়তাবাদী দলের জনপ্রিয়তা দেখে ক্ষমতাসীনরা এখন ভীত। সে কারণে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা তাঁদের প্রচার বাধাগ্রস্ত করে ভিন্ন উপায়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করছেন।

ইশরাকের প্রচারে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সমন্বয়ক মির্জা আব্বাস, যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন, মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ, ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রাজীব আহসানসহ কয়েক হাজার নেতা-কর্মী অংশ নেন।