এবার বিএনপির ভাবনায় 'ব্যাকআপ এজেন্ট'

নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। প্রথম আলোর ফাইল ছবি
নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। প্রথম আলোর ফাইল ছবি

ভোটকেন্দ্রে প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য পোলিং এজেন্ট নিয়োগের কাজ করছে বিএনপি। তবে এবার তারা এজেন্টদের পরিচয় প্রকাশ নিয়ে সতর্ক থাকতে চায়। বিগত কয়েকটি নির্বাচনের অভিজ্ঞতা থেকে বিএনপি ঢাকা সিটির নির্বাচনে তুলনামূলক ‘পরিচ্ছন্ন’ ভাবমূর্তির, মামলা নেই—এমন এজেন্ট নিয়োগ করবে। তা ছাড়া কৌশলের অংশ হিসেবে প্রয়োজনীয় এজেন্টের চেয়ে বেশিসংখ্যক এজেন্ট (ব্যাকআপ) ঠিক করে রাখা হবে, যেন কেউ হামলা বা বাধার শিকার হলে অন্য একজনকে পাঠানো যায়। বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র বলছে, নির্বাচনের ঠিক আগমুহূর্তে এবং ভোটকেন্দ্র থেকে ধরপাকড় বা হামলার আশঙ্কা মাথায় রেখে এসব এজেন্ট নিয়োগ দেবে তারা।

ভোট গ্রহণের দিন প্রার্থী তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে যাঁকে নিয়োগ দেবেন, তাঁর বিস্তারিত তথ্য কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকা প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। প্রায় সব প্রার্থীই একটি ভোটকেন্দ্রে একাধিক পোলিং এজেন্ট নিয়োগ করেন। সাধারণত, প্রতিটি ভোটকক্ষে একজন করে দলীয় এজেন্ট রাখতে পারেন প্রার্থী।

পোলিং এজেন্ট নিয়োগের বিষয়ে বিএনপি নেতারা তেমন কিছু বলতে চান না। পুরো বিষয়টি নিজেদের মধ্যে রেখেই প্রশিক্ষণ দিয়ে তাঁদের প্রস্তুত করছেন। নেতাদের আশঙ্কা, বিষয়টি জানাজানি হলে আগে থেকেই এজেন্টদের ধরপাকড়, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও হামলা শুরু হবে।

বিএনপি এবার বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় নিয়ে পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিচ্ছে। বিএনপি বরাবরই অভিযোগ করে আসছে, তাদের অসংখ্য নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে। পোলিং এজেন্ট নির্বাচনে এ বিষয়টি বিএনপিকে ভাবতে হচ্ছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য আব্দুস সালাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘যার বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট আছে, জামিন নেই—এমন কাউকে আমরা পোলিং এজেন্ট করব না। অর্থাৎ যাকে পুলিশ ধরতে পারে—এ ধরনের কাউকে পোলিং এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে না।’

আগামী ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর সিটির ভোটকেন্দ্রের সংখ্যা ১ হাজার ৩১৮। এসব কেন্দ্রে ভোটকক্ষের সংখ্যা ৭ হাজার ৮৪৬। দক্ষিণ সিটিতে ১ হাজার ১৫০টি ভোটকেন্দ্র এবং ভোটকক্ষ রয়েছে ৬ হাজার ৫৮৮টি।

বিএনপি বলছে, তারা পোলিং এজেন্ট নিয়োগে ‘ব্যাকআপ’ রাখবে। অর্থাৎ দুই সিটির ভোটকক্ষ হিসেবে নিয়োগ দিলে ১৪ হাজার ৪৩৪ জন পোলিং এজেন্ট নিয়োগ দিতে হয়। এর বাইরে ভোটারদের গাইড করাসহ বিভিন্ন কাজে আরও লোক প্রার্থীর পক্ষে নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। তবে বিএনপির এর চেয়েও বেশি নিয়োগ দেবে। নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দুটি তালিকা করতে কাজ করছি। কোনোভাবে কেউ যদি হামলা বা আটক হন, তাহলে আরেকজনকে আমরা সেট করব। কোথাও ১০০ থাকলে সেখানে ২০০ জনকে প্রস্তুত রাখছি। সবখানেই “ব্যাকআপ” পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। প্রথম আলোর ফাইল ছবি
নির্বাচনী প্রচারে বিএনপির দুই প্রার্থী তাবিথ আউয়াল ও ইশরাক হোসেন। প্রথম আলোর ফাইল ছবি

অধিকসংখ্যক নিয়োগ দিতে গেলে বিএনপিকে ৩০ হাজারেরও বেশি পোলিং এজেন্ট প্রস্তুত রাখতে হবে। দলটির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাৎক্ষণিকভাবে কেউ যদি হয়রানির শিকার হয়, গ্রেপ্তার হয়, সেখানে আমরা রিপ্লেস করব। কমিশনে যে তালিকা দেওয়া হবে, সেখানেও বেশি নাম দেওয়া হবে।’ তিনি আরও বলেন, তাঁদের মামলার আশঙ্কা এখনো আছে। নির্বাচনটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিচ্ছেন।

সর্বশেষ সংসদ নির্বাচনে কেন্দ্রে বিএনপির পোলিং এজেন্ট উপস্থিত না থাকার অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার যাঁরা খুব সাহস নিয়ে কেন্দ্রে অবস্থান করতে পারবেন, সে বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে পোলিং এজেন্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে। শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, যাঁরা ত্যাগী, সাহসী ও শক্ত অবস্থান নিতে পারবেন, মামলা নেই বা থাকলেও জামিনে আছেন, সেই বিষয়গুলোকে অগ্রাধিকার দিয়েই এজেন্ট বাছাই করা হবে। এজেন্টদের ইভিএমসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

শহীদ উদ্দীন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে যে নির্বাচন পদ্ধতি বা যে প্রক্রিয়ায় এখন নির্বাচন হয়, সেখানে সবারই আশঙ্কা থাকে যে শেষ মুহূর্তে গিয়েও ধরপাকড় হতে পারে। সব চিন্তা করেই তা মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত বিএনপি।