পরিচয় ভুলে যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা নারীটি এখনো হাসপাতালে

নাম বললে কখনো অনিতা, কখনো অমিতা আবার কখনো রমিছা
নাম বললে কখনো অনিতা, কখনো অমিতা আবার কখনো রমিছা

নিজের পরিচয় ভুলে যাওয়া অন্তঃসত্ত্বা এক নারী গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি ও লেবার ওয়ার্ডে ভর্তি রয়েছেন। আগামী ১৭ মার্চ তাঁর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন।

এই নারী তাঁর নাম কখনো অনিতা, কখনো অমিতা আবার কখনো রমিছা বলে জানান। বাবা-মা, স্বামী বা ঠিকানা বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বাবা নাই, সৎমা আর পাঁচজন ফেলে গেছে। বাড়ি কই? এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, বড় রাস্তা আর দোকানের কাছে বাড়ি।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, ২০১৯ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদর হাসপাতালের ভেতরের প্রবেশপথের সামনে পলিথিন বিছিয়ে সেখানে শুয়ে থাকা অজ্ঞাতপরিচয় নারী হিসেবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। একনাগাড়ে তিন মাস ভর্তি থাকলে আগের ভর্তি বাতিল করে পুনরায় ভর্তি করার বাধ্যবাধকতা থাকায় তাঁকে গত বছরের ১৬ নভেম্বর আবারও ভর্তি করা হয়।

আজ সোমবার দুপুরে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে গেলে দেখা যায়, হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত গাইনি ও লেবার ওয়ার্ডের ৭৮ নম্বর বেডে ভর্তি এই নারী। এই প্রতিনিধিকে বলেন, ‘আমার নাকি বাবু হবে, আমি বাবুকে খুব আদর করব।’ বাবুর বাবা কে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো কিছু না বলে দুপুরে খাবারের কথা বলেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ শারীরিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে (আল্ট্রাসনোগ্রাম) নিশ্চিত হয়েছেন অজ্ঞাতপরিচয় এই নারী বেশ কয়েক মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আগামী ১৭মার্চ তাঁর সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য দিন (ইডিডি)। আল্ট্রাসনোগ্রাম প্রতিবেদন অনুযায়ী এই তথ্য জানা যায়।

অজ্ঞাতপরিচয় এই নারীর সার্বিক চিকিৎসা সহায়তা ও তত্ত্বাবধান করছেন লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. এরশাদ আলী। তিনি বলেন, ‘আমি আমার ফেসবুকে ২৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় অজ্ঞাতপরিচয় এই অন্তঃসত্ত্বা নারীর পরিচয় জানার জন্য তার ছবিসহ একটি স্ট্যাটাস দিয়েছি। তাঁর মানসিক সমস্যা রয়েছে। কেউ তাঁর পরিচয় বা ঠিকানা জেনে থাকলে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ (মোবাইল নম্বর ০১৭০৮৪১৪৬৯৩) বা সদর হাসপাতালের সমাজসেবা বিভাগে জানাতে তিনি অনুরোধ করেন।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. সিরাজুল ইসলাম ও লালমনিরহাটের সিভিল সার্জন কাশেম আলী জানান, লালমনিরহাট সদর হাসপাতালে বিদ্যমান চিকিৎসাসংক্রান্ত সব সুযোগ-সুবিধা এই নারীকে দেওয়া হচ্ছে। যত দিন থাকবেন তা বহাল থাকবে।

লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের গাইনি ও লেবার ওয়ার্ডের দায়িত্ব প্রাপ্ত সিনিয়র স্টাফ নার্স চামেলী বেগম বলেন, শান্তশিষ্ট স্বভাবের এই নারী এমনিতে কম কথা বলে থাকেন। ওয়ার্ডে সবাই তাঁকে পছন্দ করেন। অনেকেই তাঁকে ফলমূল খেতে দেন।