চীন থেকে বাংলাদেশিদের ফিরতে আরও ১৪ দিনের অপেক্ষা

নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর। ছবি: এএফপি
নতুন করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর। ছবি: এএফপি

করোনা ভাইরাসের বিস্তারের কারণে চীন থেকে যেসব বাংলাদেশি দেশে ফিরতে চান, তাদের আরও ১৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। কারণ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের লক্ষ্যে ১৪ দিন পর্যন্ত উহানে কাউকে প্রবেশ কিংবা চীনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশটিতে যেতে দেবে না স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। সোমবার দুপুরে বেইজিংয়ে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফিংয়ে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এ তথ্য জানান।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উদ্ধৃত করে বেইজিং থেকে ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বার্তায় এ কথা জানানো হয়েছে।

কূটনীতিক সূত্রে জানা গেছে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটার পর এই প্রথম বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের ব্রিফ করে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে চীনের মধ্যাঞ্চলের প্রদেশের হুবেইয়ের সব শেষ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করা হয়।

তবে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে বেইজিংকে চিঠি দিয়েছে ঢাকা। এ জন্য বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে সরকার বাকি প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

এর আগে সোমবার সকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দিয়েছেন বাংলাদেশের নাগরিক যারা চীন থেকে ফিরতে চাইবেন তাদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। এ নিয়ে বাংলাদেশ এরই মধ্যে চীন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের নাগরিক যাঁরা চীন থেকে ফিরতে চাইবেন, তাঁদের ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার জন্য। আমরা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) চীন সরকারের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছি । কী প্রক্রিয়ায় এটি করা হবে, তা বাস্তবতার নিরিখে স্থানীয় প্রশাসনের সম্মতির ভিত্তিতে করা হবে।’

শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আমাদের দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তাই আমাদের মূল লক্ষ্য । এই বিষয়ে আজকের দিনের শেষে একটি প্রাথমিক নির্দেশনা জারি করা হবে, যার মূল উদ্দেশ্য থাকবে আগ্রহীদের তালিকা প্রণয়ন।’

চীনের সরকারি সূত্রগুলোকে উদ্ধৃত করে বেইজিং থেকে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল সকালে ঢাকায় এক বার্তায় জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে ৯৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জন অন্য সবাই উহানের অধিবাসী।

সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকেও করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে চীনে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিকদের সুরক্ষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এ সময় পরিস্থিতি উত্তরণে কী কী করা যায়, তা নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তার আলোকে মঙ্গলবার এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে আলোচনার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা ডাকা হয়েছে।

চীনে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন সোমবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, চীন থেকে যারা দেশে ফিরতে চান, তাদের ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি চলছে। এরই মধ্যে সেখানে থাকা লোকজনকে ফেরাতে সরকারের পরিকল্পনার বিষয়টি জানিয়ে চীনের কাছে প্রয়োজনীয় সহায়তা চেয়েছি। প্রয়োজনে দ্রুততম সময়ের মধ্যে (২৪ থেকে ৪৮ ঘন্টা) চীন থেকে লোকজনকে ফিরিয়ে আনতে কীভাবে উড়োজাহাজ পাঠানো যায় তা নিয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে। সামগ্রিকভাবে সব বিষয় নিয়ে মঙ্গলবার একটি আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠকে আলোচনা হবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে জানান, উহানে থাকা লোকজনের উদ্বেগের প্রেক্ষিতে সরকার ফিরে আসতে আগ্রহীদের দেশে নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বাংলাদেশের লোকজনকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়ে গতকাল চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। এ ছাড়া লোকজনকে ফিরিয়ে আনার জন্য বিশেষ উড়োজাহাজের ব্যবস্থা করার বিষয়ে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গতকাল সকালে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হকের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন।

করোনাভাইরাসের উৎপত্তিস্থল চীনের উহান শহর । সেখানে চার শতাধিক বাংলাদেশি আছেন। তাঁদের অনেকেই আতঙ্কিত হয়েছেন পড়েছেন। দেশে ফেরার আকুতিও জানিয়েছেন কেউ কেউ।