নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও চলছে নিয়োগপ্রক্রিয়া

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পরও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে কর্মকর্তা–কর্মচারী নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা, বাছাই ছাড়াও পদোন্নতির বৈঠক, বদলিসহ অন্য সব কাজই চলছে। গত ২২ ডিসেম্বর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। এ সময় নির্বাচন কমিশনের অনুমতি ছাড়া এ–সংক্রান্ত কোনো কাজে বিধিনিষেধ রয়েছে।

সিটি করপোরেশনের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকা সিটি করপোরেশন তড়িঘড়ি করে ১০৪ জন প্রকৌশলী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা নিয়েছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর গত ২৪ ডিসেম্বর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত সহকারী প্রকৌশলী পদে ২৭ জনের, উপসহকারী প্রকৌশলী পদে ৭৭ জনের পরীক্ষা নিয়েছে। এরপর ৮ জানুয়ারি বাছাই কমিটির সভা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ১২ জানুয়ারি দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মশক নিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৭৫০ দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নিয়োগে সভা হয়েছে। সেখানে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ভারী যানবাহন চালানোর জন্য ৫০ জন শ্রমিক নিয়োগে একটি বৈঠক হয়েছে ১৯ জানুয়ারি।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগ–সংক্রান্ত কোনো ধরনের কার্যক্রম আপাতত করা যাবে না। মৌখিক পরীক্ষা তো নিয়োগের একটি বড় ধাপ। সেটাও করা যাবে না। সিটি নির্বাচনের আগে এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ নিতে হলে অবশ্যই কমিশনের অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি ছাড়া এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন।

একই কথা বলেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে শুধু রুটিন কাজ করা যাবে। তারা কোনোভাবেই মৌখিক পরীক্ষা বা বাছাই কমিটির বৈঠক করতে পারবে না। একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগের বিষয়েও সিদ্ধান্ত নিতে পারবে না। আর প্রকৌশলী তো অনেক বড় পদ। তিনি বলেন, কয়েক দিন পরই মেয়র ও কাউন্সিলররা নির্বাচিত হয়ে আসবেন, সে সময় এসব নিয়োগের কোনো যৌক্তিকতা নেই। ভারতে সেনাপ্রধানের নিয়োগ পর্যন্ত নির্বাচনের আগে বন্ধ রাখা হয়েছিল।

>

১০৪ জন প্রকৌশলী নিয়োগে তড়িঘড়ি মৌখিক পরীক্ষা
বাছাই কমিটির বৈঠক

করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, তফসিল ঘোষণার আগে তৎপরতা না থাকলেও তফসিল ঘোষণার পর তড়িঘড়ি করে নিয়োগপ্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হচ্ছে। কয়েকজন প্রার্থী প্রথম আলোর কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁরা লিখিত পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার পর অপেক্ষাকৃত কম নম্বর পাওয়া ব্যক্তিদের মৌখিক পরীক্ষায় নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বড় ধরনের বাণিজ্য হয়েছে বলে তাঁরা মনে করেন।

নির্বাচনী আচরণবিধিতে বলা হয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর করপোরেশন এলাকায় কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক প্রকল্প অনুমোদন এবং আগে অনুমোদিত প্রকল্পে টাকা ছাড় করা যাবে না। অন্যদিকে ২০১৫ সালের সিটি নির্বাচনের সময় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জারি করা এক নির্দেশনায় বলা আছে, যেকোনো সিটি নির্বাচনের সময় ভোট হওয়ার আগ পর্যন্ত সিটি করপোরেশনের নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির সব ধরনের কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। এ সময়ে কোনো দরপত্র আহ্বান ও কার্যাদেশ দেওয়া যাবে না এবং কোনো উন্নয়নকাজের বিপরীতে টাকা পরিশোধ করা যাবে না। কোনো ধরনের ইজারা দেওয়া, এ–সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি দেওয়া বা কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করা যাবে না।

ওই নির্দেশনায় আরও বলা আছে, সিটি করপোরেশনের মালিকানায় কোনো সম্পত্তি, দোকান বরাদ্দ, ভাড়া, লিজ দেওয়া যাবে না বা এ–সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা যাবে না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লেনদেন করা যাবে না। কোনো প্রাক্কলন প্রস্তুত, অনুমোদন ও প্রকল্পের অনুমোদন ইত্যাদি তৈরি করা যাবে না।

সাবেক স্থানীয় সরকার সচিব আবু আলম মো. শহীদ খান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধিতে নিয়োগের বিষয়টি না থাকায় স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে এ–সংক্রান্ত নির্দেশনা আগেই জারি করা আছে। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, নির্বাচনের আগে সিটি করপোরেশন এসব কার্যক্রম চালাতে পারে না।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সচিব মোস্তফা কামাল মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা ঠিক, আমরা প্রকৌশলী নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষাসহ কয়েকটি নিয়োগের কার্যক্রম সম্পন্ন করেছি নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর। তবে এখনো তো আমরা নাম ঘোষণা করিনি।’

নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বদলি করতে হলেও নির্বাচন কমিশনের অনুমতি লাগে। তবে ঢাকা সিটি করপোরেশনের ওয়েবসাইটে দেখা গেছে, দক্ষিণ সিটি করপোরেশন প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খাদেমুল করিম ইকবালকে ১২ জানুয়ারি করপোরেশনের দায়িত্ব থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে উপপ্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা মো. আলমগীর চলতি দায়িত্বে রয়েছেন। এ ছাড়া ১৩ জানুয়ারি করপোরেশনের প্রধান ভান্ডার ও ক্রয় কর্মকর্তা মো. নুরুজ্জামানকে ওই পদ থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আগে ৬ জানুয়ারি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার ব্যক্তিগত সহকারী মইন উদ্দীনকে পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলে এবং আইন বিভাগের জাকির হোসেনের ব্যক্তিগত সহকারী জাকির হোসেনকে সচিবের দপ্তরে বদলি করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের অনুমোদন নেওয়া হয়নি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন প্রথম আলোকে বলেন, নিয়োগের মৌখিক পরীক্ষা বা যাচাই কমিটির বৈঠকের বিষয়টি তাঁর জানা নেই। এমন হওয়ার কথা নয় উল্লেখ করে মেয়র বলেন, করপোরেশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে দেখতে পারেন। তাঁরা বলতে পারবেন।