গ্রাহকের ছেলে ও বাবার বিরুদ্ধেও মামলা

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনাচ্ছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। পাশে তাঁর বাবা। গত রোববার রাতে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে।  ছবি: প্রথম আলো
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনাচ্ছেন মঞ্জুরুল ইসলাম। পাশে তাঁর বাবা। গত রোববার রাতে জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে। ছবি: প্রথম আলো

মো. মঞ্জুরুল ইসলাম জামালপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একজন গ্রাহক। ছোট একটি সাধারণ রাইস মিলের মালিক ছিলেন। মিলের বকেয়া বিল ছিল ৭৮ হাজার টাকা। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী অনুজ চন্দ্রকে ৪০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে এই বকেয়া বিল দিতে হবে না। কিন্তু ভবিষ্যৎ বিপদের কথা চিন্তা করে মঞ্জুরুল টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতেই ঘটে বিপত্তি। একে একে তাঁর নামে দায়ের করা হয় দুটি মামলা। তাঁকে ঘায়েল করতে তাঁর বাবা মো. সুরুজ আলীর নামেও মামলা করা হয়েছে। তিন মামলা নিয়ে চরম বিপদে পড়েছে গোটা পরিবার। 

জামালপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব অভিযোগ করেছেন মঞ্জুরুল (৫০)। গত রোববার রাত নয়টার দিকে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।

মঞ্জুরুলের বাড়ি জামালপুর সদর উপজেলার শরিফপুর এলাকার রামপুর গ্রামে। তিনি একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ছিলেন। প্রকৌশলী অনুজ চন্দ্রের করা মামলায় তিনি বর্তমানে সর্বস্বান্ত। এই মামলায় তিনি ১৫ দিন এবং তাঁর ছেলে শ্রাবণও (২৩) কারাগারে ছিলেন ৪ দিন।

প্রকৌশলী অনুজ চন্দ্রের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার আকুতি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে কান্নায় ভেঙে পড়েন মঞ্জুরুল। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছোট্ট একটি চালকল দিয়ে তাঁর সংসার চলত। হঠাৎ ব্যবসার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। বসতবাড়ি বিক্রি করে ধারদেনা পরিশোধ করেন। এর মধ্যে তাঁর চালকলের বিদ্যুৎ বিলের বকেয়া ছিল ৭৮ হাজার টাকা। হঠাৎ বাড়িতে উপস্থিত হন জামালপুরের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী অনুজ চন্দ্র। বকেয়া বিল পরিশোধ হওয়ার শর্তে তিনি ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে তিনি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অপর একজন প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে অনুজ চন্দ্রের ৪০ টাকা চাওয়ার বিষয়টি খুলে বলেন। ওই প্রকৌশলী টাকা না দেওয়ার এবং বকেয়া বিল কিস্তির মাধ্যমে পরিশোধের পরামর্শ দেন। প্রকৌশলীর পরামর্শ অনুযায়ী তিনি অনুজ চন্দ্রকে ৪০ হাজার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে তিনি চরমভাবে ক্ষিপ্ত হন। ২০১৯ সালের ২ মে তাঁদের বাড়িতে অনুজ চন্দ্রসহ কয়েকজন হাজির হন। বাড়িতে তাঁর ছেলে শ্রাবণের কাছে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। তাঁর ছেলেও টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অনুজ চন্দ্র মামলা করে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে তাঁদের বাড়ির দেয়ালে তিনটি পুরোনো মিটার লাগিয়ে অনুজ ছবি তোলেন। ২০১৯ সালের ৫ মে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলামকে বাদী করে আদালতে মঞ্জুরুল ও তাঁর ছেলে শ্রাবণের নামে ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৫১০ টাকার বিদ্যুৎ চুরির মামলা করেন। পরদিন একই ব্যক্তিকে বাদী করে সরকারি কর্মচারীকে তাঁর কর্তব্য পালনে বাধা দেওয়ার অভিযোগ এনে জামালপুর সদর থানায় আরও একটি মামলা করেন। তিনি ১৫ দিন ও তাঁর ছেলে ৪ দিন কারাগারে থেকে জামিনে মুক্ত হন। পরে তাঁদের হয়রানি করতে তাঁর বাবা সুরুজ আলীর (৭৫) নামেও ১ লাখ ৯০ হাজার ১৫৯ টাকার বিদ্যুৎ চুরির মামলা করেন। তাঁর বৃদ্ধ বাবার নামে আদালত থেকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। তিনি এই বৃদ্ধ বয়সে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

মঞ্জুরুল বলেন, ‘তাঁর (অনুজ চন্দ্র) হাত থেকে আমি মুক্তি চাই।’

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী অনুজ চন্দ্র দাবি করেন, ওই ব্যক্তির কাছে টাকা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের একটি দল তাঁর বাড়িতে গিয়ে বিদ্যুৎ চুরির বিষয়টি হাতেনাতে ধরে। ওই ব্যক্তি বাজার থেকে মিটার কিনে সেটা লাগিয়ে বিদ্যুৎ লাইন চালাচ্ছিলেন। বাজার থেকে কেনা মিটারটি বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সার্ভারে ছিল না। ওই মিটারে তিনি প্রায় ৬ হাজার ৪০০ ইউনিট বিদ্যুৎ অবৈধভাবে ব্যবহার করেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই তাঁর নামে মামলা করা হয়েছে।

মামলার বাদী বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মো. সাজ্জাদুল ইসলাম গতকাল সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, তিনি জানেন না, ওই ব্যক্তির কোনো বকেয়া বিল ছিল কি না। তবে দাবি করেন, ঘটনার দিন মঞ্জুরুলের বাড়িতে গিয়ে অবৈধ লাইন ব্যবহারের সরঞ্জাম পাওয়া যায়। তিনি বাজার থেকে কেনা মিটার ব্যবহার করে বিদ্যুৎ লাইন চালাচ্ছিলেন। হাতেনাতে তাঁর বিদ্যুৎ চুরি ধরা হয়। পুলিশের উপস্থিতিতে বিদ্যুৎ চুরির সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। বিদ্যুৎ চুরির সঠিক তথ্যপ্রমাণসহ তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, তাঁর ছেলে অনুজ চন্দ্রের ওপর হামলা করে মুঠোফোন ভেঙে ফেলেন। কারণ, ওই মুঠোফোনে বিদ্যুৎ চুরির তথ্য ছিল। ওই ব্যক্তি এখন যেসব অভিযোগ করছেন, সেগুলো তাঁর মনগড়া ও সাজানো মিথ্যা কথা।

জামালপুরের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী এস এম কামরুজ্জামান বলেন, ‘আমি এ জেলায় নতুন যোগদান করেছি। এসব বিষয়ে আমার কিছুই জানা নাই। তবে ওই ব্যক্তি অভিযোগ দিলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’