চাপ দিতেই গুঁড়োগুঁড়ো হাজারি গুড়

শীত এলেই গ্রামবাংলার ঘরে ঘরে পিঠা-পায়েস তৈরির ধুম পড়ে। আর এই পিঠা তৈরির অন্যতম অনুষঙ্গ হলো খেজুরের গুড়। তাই শীতের পিঠার সঙ্গে খেজুরের গুড়ের রয়েছে এক অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক। শুধু কি তা–ই! পায়েস তৈরিতেও খেজুরের গুড়ের জুড়ি নেই। আর হাজারি গুড় হলে তো কথাই নেই! একবার খেলে এর মনমাতানো সুগন্ধ আর স্বাদ ভোলার নয়।

যুগ যুগ ধরে ঐতিহ্য বহন করে আসছে মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের হাজারি গুড়। স্বাদের পাশাপাশি এই গুড়ের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, হাতে নিয়ে চাপ দিতেই এই গুড় গুঁড়োগুঁড়ো হয়ে যায়। শুধু দেশেই নয়, এই গুড়ের সুনাম ছড়িয়ে আছে দেশের বাইরেও। এ কারণে এই গুড়ের নামেই জেলার ব্র্যান্ডিং করা হয়েছে, ‘হাজারি আর বাউল গান, মানিকগঞ্জের আসল প্রাণ।’

গুড় তৈরির প্রক্রিয়া জানতে সম্প্রতি কথা হয় হরিরামপুরের গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের দুই ভাই মোজাফফর হাজারি ও শফিকুল হাজারির সঙ্গে। তাঁরা জানালেন, গুড় তৈরির আগের দিন বিকেলে হাঁড়ি ধুয়ে গাছে বাঁধা হয়। পরদিন ভোরে হাঁড়ি থেকে রস সংগ্রহ করে তা আগুনে জ্বাল দেওয়া হয়। ৪০–৪৫ মিনিট রস জ্বাল দেওয়ার পর তা মাটির হাঁড়িতে ঢালা হয়। এরপর তা জোরে জোরে ঘুটতে হয়। ১৫ থেকে ২০ মিনিট ঘোটার পর রসের ঘনত্ব বেড়ে আঠালো হয়। এরপর সেই রস ছোট পাত্রে ঢালার কিছুক্ষণ পর ‘হাজারি’ লেখাসংবলিত সিল দেওয়া হয়।

এই গুড় কিনতে হলে অন্তত এক সপ্তাহ আগে অর্ডার দিতে হয়। প্রতি কেজি হাজারি গুড় ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। হরিরামপুরের ঝিটকা শিকদারপাড়া ও গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামের ৩০টির মতো পরিবার এখনো এই গুড় তৈরির সঙ্গে জড়িত।

হাজারি গুড়। গত শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর  উত্তরপাড়া গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
হাজারি গুড়। গত শুক্রবার সকালে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গোপীনাথপুর উত্তরপাড়া গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো