অবকাঠামো উন্নয়নে জোর প্রার্থীদের

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) ৪৩, ৪৪ ও ৪৫ ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকায় এখনো গ্রামীণ পরিবেশ। রাস্তাগুলো খানাখন্দে ভরা। আছে পানি ও গ্যাসের সমস্যা। খেলার মাঠ নেই। অসংখ্য ডোবা-নালা ও জলাশয় মশার নিরাপদ প্রজননস্থল। নাগরিক এমন নানা সমস্যায় জর্জরিত ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা অবকাঠামো উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন।

তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী ১০ জন। বড় দুই দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। জাতীয় পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের একজন করে এবং স্বতন্ত্র হিসেবে দুজন নির্বাচনে লড়ছেন।

ওয়ার্ড নম্বর ৪৩

তলনা, ঢেলনা, নকুনী, মৈঞ্জারটেক, মস্তল, পাতিরা, ডুমনী, কাঁঠালদিয়া, বাগদিয়া, আমদিয়া এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড। মোট ভোটার ১১ হাজার ৭৮১ জন। পুরুষ ভোটার ৬ হাজার ৪ জন ও নারী ভোটার ৫ হাজার ৭৭৭ জন। জনসংখ্যা প্রায় ৬০ হাজার।

আওয়ামী লীগ থেকে ওয়ার্ডে সমর্থন দেওয়া হয়েছে শরিফুল ইসলাম ভূঞাকে। লাটিম প্রতীকে তিনি নির্বাচন করছেন। খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগের এই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সাবেক ডুমনি ইউনিয়ন পরিষদের সর্বশেষ চেয়ারম্যান ছিলেন।

শরিফুল ইসলাম বলেন, ইউনিয়নের অধীনে বেশ কিছু বড় কাজ করা সম্ভব হয়েছে। আবার অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। বিশেষ করে নগরবাসীর যে ধরনের সেবা পাওয়ার কথা, সেসবের কিছুই নেই এই ওয়ার্ডে। তিনি বলেন, সবচেয়ে জরুরি কাজ আধুনিক পয়োনিষ্কাশন ও পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থা।

এ ছাড়া রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ঠিক করতে হবে। নির্বাচিত হলে সবাইকে নিয়ে তিনি কাজগুলো করতে চান। এখানে বিএনপি থেকে আক্তার হোসেনকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক।

আক্তার হোসেন বলেন, এই ওয়ার্ড অনুন্নত ও অবহেলিত। পানি ও গ্যাস অনেক এলাকায় নেই। বিদ্যুৎ থাকে না। আছে মাদক সমস্যা। মাদককে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধ কার্যক্রম হয়। রাস্তাঘাট ভাঙাচোরা। নির্বাচিত হলে তিনি এসব সমস্যার সমাধান করতে চান।

৪৩ নম্বর ওয়ার্ড জাতীয় পার্টির সভাপতি সেলিম মালিক এখানে নির্বাচনে লড়ছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। সেলিম মালিক বলেন, সত্যিকার অর্থে এলাকার পরিবেশ শহরের অধীনে যাওয়ার মতো নয়। চারপাশে ডোবা-নালা ও জলাশয়। এলাকাগুলো একটি থেকে অন্যটি বিচ্ছিন্ন। এমন এলাকাও আছে যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। বাঁশের সাঁকোয় খাল পার হয়ে সেখানে যেতে হয়। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে হলে এখানে অবকাঠামোগত ব্যাপক উন্নয়ন করতে হবে। এই সবকিছু তাঁর পরিকল্পনায় আছে।

এ ছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে কবির হোসেন ব্যাডমিন্টন প্রতীকে এবং ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রেজাউল করিম টিফিন ক্যারিয়ার প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে লড়ছেন।

ওয়ার্ড নম্বর ৪৪

আমাইয়া, বড়বাড়ী, চামুরখান, কাঁচকুড়া, সড়বানঘাটা, ভাটুরিয়া, পলাশিয়া, ছোট পলাশিয়া, পোড়াদিয়া, রাতুটি, ভারারদি, আক্তারটেক, বাওথার, বেতুলী, করিমের বাগ, দোবাদিয়া নিয়ে এই ওয়ার্ড। মোট ভোটার ১৬ হাজার ৫৫৫ জন। পুরুষ ভোটার ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ৮ হাজার ৭২ জন। জনসংখ্যা ৭০ হাজারের বেশি। এখানে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন মো. শফিকুল শফিক। তিনি বর্তমান কাউন্সিলর। ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি।

মো. শফিকুল শফিক বলেন, নাগরিক সেবা বলতে এই ওয়ার্ডে কোনো কিছুই নেই। বাসিন্দাদের দুর্ভোগ লাঘবে জরুরিভাবে রাস্তাঘাট ও পয়োনিষ্কাশনের নালা, ফুটপাত নির্মাণ ও সড়কবাতি লাগাতে হবে। তিনি নির্বাচিত হলে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এসব কাজ করবেন। পরে নাগরিকদের প্রয়োজনীয় অন্যান্য চাহিদা পূরণে কাজ করবেন তিনি।

ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী সমর্থন পেয়েছেন আনোয়ার হোসেন ওরফে আয়নাল মেম্বার। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঘুড়ি। তিনি উত্তরখান ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য।

আনোয়ার হোসেন বলেন, সিটি করপোরেশনের অধীনে এলেও বাসিন্দারা এখনো নাগরিক সেবার কিছুই পাননি। ওয়ার্ডবাসীর কাছে সেবা দ্রুত পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে তিনি কাজ করবেন। গণসংযোগে বাধা দেওয়ার অভিযোগ করে তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে প্রচারণায় তত বাধা আসছে। নেতা–কর্মীদের বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। পোস্টার-ব্যানার কিছুই রাখা যাচ্ছে না। এলাকায় নিযুক্ত ম্যাজিস্ট্রেট ও থানায় লিখিত অভিযোগের পর এগুলো কিছুটা কমেছে।

ওয়ার্ড নম্বর ৪৫

উত্তরখান মাজার, কাজীপাড়া, হেলাল মার্কেট, মধ্যপাড়া, মাস্টারপাড়া, আদর্শপাড়া, কুড়িপাড়া, শায়েরটেক, সুজারপাড়া, শান্তিনিকেতন, বুড়িরটেক নোয়ারপাড়া, শ্যামলবাগ এলাকা নিয়ে এই ওয়ার্ড। ভোটার ২৪ হাজার ৬১৯ জন। পুরুষ ভোটার ১২ হাজার ৫৮৫ জন ও নারী ভোটার ১২ হাজার ৩৪ জন। ওয়ার্ডে প্রায় দুই লাখ মানুষের বসবাস।

আওয়ামী লীগ থেকে এখানে আবারও সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঠেলাগাড়ি। তিনি উত্তরখান থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। 

জয়নাল আবেদীন বলেন, নতুন এলাকার জন্য যেসব পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে রাস্তাঘাট, পয়োনালা নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য যে পরিকল্পনা হচ্ছে, সেগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে উন্নত ওয়ার্ড গড়ে তুলতে চান তিনি। এখানে বিএনপির সমর্থন দেওয়া হয়েছে জাহাঙ্গীর আলমকে। ঘুড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী উত্তরখান থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রথমেই রাস্তাঘাটের উন্নয়ন ও পয়োনালা নির্মাণের কাজ করতে চান। যুবসমাজকে মাদক থেকে ফিরিয়ে আনতে কাজ করবেন তিনি। এ ছাড়া নারীদের নিরাপদ চলাফেরা নিশ্চিত করতে ও নারী উত্ত্যক্তকরণ বন্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরিতে কাজ করবেন।

ওয়ার্ডে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন আতিকুল ইসলাম। তাঁর প্রতীক ট্রাক্টর।