দুই ওয়ার্ডে আ.লীগে বিদ্রোহী

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) নির্বাচনে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আরিফ হোসেন ওরফে ছোটন। এদিকে ৪৪ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আছেন। এতে এই দুটি ওয়ার্ডে দলের প্রার্থীর জয় কঠিন হবে বলে মনে করেন তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

৪৪ ও ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন যথাক্রমে আব্দুস সাহেদ ও আব্দুল কাদির। এই দুই বর্তমান কাউন্সিলরের বিদ্রোহী নেই। তাই বিপুল ভোটে জয়ের আশা করছেন বিএনপির এই দুই প্রার্থী।

৪৩ নম্বর ওয়ার্ড

নর্থব্রুক হল রোড, রূপলাল দাস লেন, পাতলাখান লেন, ফরাশগঞ্জ রোড, মালাকার টোলা লেন, ঈশ্বর দাস লেন, প্যারীদাস রোড, মোহিনী মোহন দাস লেন, আনন্দ মোহন দাস লেন, শুকলাল দাস লেন এলাকা নিয়ে ৪৩ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে ভোটার ২৩ হাজার ৪৩১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১২ হাজার ৩৫৬, নারী ১১ হাজার ৭৫ জন।

৪৩ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র কিনেছিলেন পাঁচজন। তাঁরা হলেন শেখ আলমগীর হোসেন, আরিফ হোসেন, শওকত হোসেন, কাজী সোহেল আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজুর রহমান বাদে বাকি তিন প্রার্থী আরিফ হোসেনকে সমর্থন দিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নেন।

আর ঋণসংক্রান্ত জটিলতায় বিএনপি–সমর্থিত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যায়। প্রার্থিতা ফিরে পেতে আপিলের সুযোগ থাকলেও তিনি তা করেননি। এতে গত ৯ ডিসেম্বর বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন আরিফ হোসেন। আরিফ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, গত সাড়ে চার বছরে এই ওয়ার্ডের প্রতিটি অলিগলিতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। 

৪৪ নম্বর ওয়ার্ড

কাঠের পুল লেন (বানিয়ানগর), ঠাকুর দাস লেন, জাস্টিস লালমোহন দাস লেন, বেগমগঞ্জ লেন, তনুগঞ্জ লেন, ওয়াল্টার রোড, রেবতী মোহন দাস রোড এলাকা নিয়ে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডটিতে ভোটার সংখ্যা ২০ হাজার ১৯৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১০ হাজার ৪১২ জন, নারী ৯ হাজার ৭৮৩ জন।

ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন দলটির ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি নিজাম উদ্দিন। রেডিও প্রতীকের এই প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ঘুড়ি প্রতীকের মশিউর রহমান খান। তবে বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়ে গেছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলী। তাঁর নির্বাচনী প্রতীক ঝুড়ি।

নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মোহাম্মদ আলী আমার কিছু ভোট নষ্ট করা ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। জনগণের ভোটে আমিই নির্বাচিত হব।’

৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির সমর্থন পেয়েছেন সংগঠনটির সূত্রাপুর থানা কমিটির সভাপতি আব্দুস সাহেদ ওরফে মন্টু। ঠেলাগাড়ি প্রতীকের এই প্রার্থী ১৯৯৪ সাল থেকে ওয়ার্ডের কমিশনার ও কাউন্সিলরের দায়িত্ব (তিনবার নির্বাচিত) পালন করছেন। এবারও তিনি জয়ের বিষয়ে শতভাগ আশাবাদী।

৪৫ নম্বর ওয়ার্ড

ডিস্টিলারি রোড, দীননাথ সেন রোড, কেশব ব্যানার্জি রোড, অক্ষয় দাস লেন, হরিচরণ রায় রোড, আলমগঞ্জ রোড, ঢালকানগর লেন, সতীশ সরকার রোড এলাকা নিয়ে ৪৫ নম্বর ওয়ার্ড। ওয়ার্ডে ভোটার ৩০ হাজার ৫৮৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫ হাজার ২৬১, নারী ১৫ হাজার ৩২৫ জন।

ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন সংরক্ষিত ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর হেলেন আক্তার। ঘুড়ি প্রতীকের এই প্রার্থীর বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনী মাঠে আছেন দলের গেন্ডারিয়া থানার সদস্য মো. শামসুজ্জোহা। তাঁর প্রতীক ঠেলাগাড়ি। 

গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেন, শামসুজ্জোহা প্রতিবছর ঈদুল আজহার সময় ধূপখোলা মাঠে পশুর হাট বসান। এই মাঠেই অবৈধভাবে মেলাও বসান তিনি। এতে মাঠের পরিবেশ নষ্ট হয়। খেলাধুলাবঞ্চিত হয় শিশু-কিশোরেরা।

মাঠে পশুর হাট এবং মেলা বসানোর কথা স্বীকার করছেন শামসুজ্জোহা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ইস্ট এন্ড ক্লাবের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ক্লাবের খরচ মেটাতেই ধূপখোলা মাঠে পশুর হাট ও মেলা বসাই।’ 

আর হেলেন আক্তার বলেন, এই ওয়ার্ডের জনগণ জনপ্রতিনিধি হিসেবে কোনো বিতর্কিত ব্যক্তিকে চান না। ৪৫ নম্বর ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী বর্তমান কাউন্সিলর আব্দুল কাদির। লাটিম প্রতীকের এই প্রার্থী দলের গেন্ডারিয়া থানা কমিটির সাধারণ সম্পাদক। তিনি মনে করছেন, আওয়ামী লীগে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় তাঁর জয় সহজ হবে।