সেই গাজপ্রমের সঙ্গে গ্যাস উত্তোলনে দুই এমইউ সই

রাশিয়ার গাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের আবিষ্কৃত ভোলা গ্যাসক্ষেত্র পুনর্মূল্যায়নে আজ এক সমঝোতা স্মারক সই (এমইউ) হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো
রাশিয়ার গাজপ্রমের সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের আবিষ্কৃত ভোলা গ্যাসক্ষেত্র পুনর্মূল্যায়নে আজ এক সমঝোতা স্মারক সই (এমইউ) হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় তেল-গ্যাস প্রতিষ্ঠান বাপেক্সের আবিষ্কৃত ভোলা গ্যাসক্ষেত্র পুনর্মূল্যায়নে একটি সমঝোতা স্মারক (এমইউ) সই হয়েছে রাশিয়ার গাজপ্রমের সঙ্গে। এ ছাড়া রাষ্ট্রীয় আরেক সংস্থা পেট্রোবাংলার সঙ্গে পৃথক আরেকটি এমইউ করেছে গাজপ্রম। আজ মঙ্গলবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার পেট্রোবাংলায় এ–সংক্রান্ত দুটি এমইউ সই হয়।

গাজপ্রমকে ২০১২ সালে দেশের ১০টি গ্যাসকূপ বিনা দরপত্রে খননের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, সে অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো ছিল না। গাজপ্রমের ওই প্রথম দফায় খনন করা গ্যাসকূপগুলোর পাঁচটিই (তিতাস-২০, তিতাস-২১, সেমুতাং-৬, বেগমগঞ্জ-৩ ও শাহবাজপুর-৪) বালু ও পানি উঠে বন্ধ হয়ে যায়। সেগুলো পরে বাপেক্সকেই মেরামত করে গ্যাস উত্তোলনের উপযোগী করার দায়িত্ব নিতে হয়।

গাজপ্রমকে প্রতিটি কূপ খননে অতীতে দেওয়া হয়েছে গড়ে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা। আর বাপেক্সের প্রতিটি কূপ খননে ৬০ থেকে সর্বোচ্চ ৮০ কোটি টাকা খরচ হয়। তবে যৌথ অংশীদারত্বের ভিত্তিতে গ্যাস উত্তোলন করলে বাপেক্স ও গাজপ্রমের মধ্যে গ্যাসের ভাগাভাগি হবে। সে ক্ষেত্রে আবিষ্কৃত একটি গ্যাসক্ষেত্রের একটি বড় অংশের গ্যাস ফের সরকারকেই বেশি দামে কিনতে হবে গাজপ্রমের কাছ থেকে।

বাংলাদেশের স্থল ও সাগরভাগে গ্যাস উত্তোলনের জন্য রাশিয়ার গাজপ্রমের সঙ্গে দুটি এমইউ সই হয়েছে। এই এমইউর ভিত্তিতে পরবর্তী সময়ে সুনির্দিষ্ট চুক্তি সই হবে। তাতে রাশিয়ার গাজপ্রম কত অর্থ বিনিয়োগ করবে, তার ভাগে কত গ্যাস থাকবে, সেটি নির্দিষ্ট করা হবে। গাজপ্রমকে বিনা দরপত্রে বিশেষ আইনের অধীনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কাজ দেওয়া হবে।

তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের জন্য প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট (পিএসসি) বা উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তিতে সই করতে হয়। এ জন্য ডাকা হয় আন্তর্জাতিক দরপত্র। তবে গাজপ্রমের ক্ষেত্রে বিনা দরপত্রে সরকারি জরুরি জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিশেষ আইনের মাধ্যমে চুক্তি করা হবে।

এমইউ সম্পর্কে জানতে চাইলে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরীর বলেন, পেট্রোবাংলার সঙ্গে একটি কৌশলগত এমইউ হয়েছে। এতে বলা হয়েছে গাজপ্রম বাংলাদেশের স্থল ও সাগর ভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করবে। আর বাপেক্সের সঙ্গে এমইউটি হলো, ভোলা দ্বীপের গ্যাসক্ষেত্রে গাজপ্রম উন্নয়ন ও অনুসন্ধান কূপ খননের কাজ করবে, সেখান থেকে পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাবও তাদের রয়েছে।

এমইউ সই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জ্বালানি বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আনিছুর রহমান, পেট্রোবাংলা, বাপেক্স ও গাজপ্রমের প্রতিনিধিরা।


বাপেক্সের আবিষ্কার ভোলা ক্ষেত্রে গ্যাজপ্রম
বাপেক্স ১৯৯৫ সালে দ্বিমাত্রিক জরিপ করে ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছিল। কারও সহায়তা ছাড়াই ২০০৯ সালে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে বাণিজ্যিকভাবে গ্যাস উত্তোলন করছে বাপেক্স। ভোলা-উত্তর নামে দেশের ২৭তম গ্যাসক্ষেত্র হিসেবে ২০১৮ সালে ভোলায় নতুন আরেকটি গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হয়। বাপেক্সের ত্রিমাত্রিক জরিপে এটি আবিষ্কৃত হয়। ভোলার এক হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় দুই ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস আছে বলে মনে করা হচ্ছে। এই গ্যাস বাংলাদেশের দুই বছরের মজুদের সমান। ভোলা দ্বীপের ওপর বাপেক্সের করা ত্রিমাত্রিক জরিপ ফের নতুন করে মূল্যায়ন করবে গাজপ্রম। মূল্যায়নের পর কূপ খনন ও পাইপলাইন নির্মাণের প্রস্তাব দিবে রাশিয়ার বৃহৎ এই কোম্পানি। বাপেক্সের সঙ্গে যৌথভাবে এই কূপ খনন করবে তারা।

যেখানে বাপেক্সে সফলভাবে গ্যাস উত্তোলনে সক্ষম সেখানে গ্যাজপ্রমের সঙ্গে যৌথ অংশীদারত্বের প্রয়োজন কেন পড়ছে—এমন প্রশ্নের জবাবে তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী বলেন, ‘এটি ঠিক, বাপেক্স ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করেছে। বাপেক্স গ্যাস উত্তোলন করতে গেলে অনেক সময় লাগবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আমাদের গ্যাস দরকার। আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো বিদ্যুৎ, শিল্পে দ্রুত গ্যাস দিতে হবে। বাপেক্স করলে পাঁচ বছর লেগে যাবে। গ্যাজপ্রম করলে দ্রুত হবে।’