ইসির ভেতরে সমস্যা থাকাটা প্রমাণিত

এম সাখাওয়াত হোসেন
এম সাখাওয়াত হোসেন

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সবচেয়ে শক্তিশালী। সংবিধানের ১১৮ থেকে ১২৬ ধারায় নির্বাচন করতে কমিশনকে নানাবিধ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। একাধিক কমিশনার নিয়োগ হলে একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) নিয়োগ পাবেন। সিইসি ও অন্য কমিশনাররা সমান। শুধু সভা হলে সভাপতিত্ব করেন সিইসি।

কমিশন সচিবের অনেক ঊর্ধ্বে একজন নির্বাচন কমিশনার। নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো তথ্য যদি একজন কমিশনার চান, তাহলে এমন কোনো আইন নেই যে তিনি দিতে পারবেন না। ইসি সচিবের সরাসরি না করার সুযোগ নেই। এ ক্ষেত্রে সচিব নির্বাচন কমিশনকে অবজ্ঞা করেছেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার হিসেবে মনে করি, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অবজ্ঞা করা হচ্ছে। সচিবের এ ধরনের জবাব দেওয়া মোটেই উচিত নয়। সচিব শুধু একজনকে নয়, পুরো কমিশনকে, সব কমিশনারকে অবজ্ঞা করেছেন। নির্বাচন কমিশনার যদি নির্বাচনসংক্রান্ত কোনো বিষয় দেখতে না পান, তাহলে তাঁর কাজটা কী? তাঁর কাজ কি শুধুই হাত তোলা?

বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ইতিহাসে এমন বিষয় প্রথম দেখছি। এটি মোটেই কাম্য নয়। বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে একজন সচিব অবজ্ঞা করছেন, এটি দুঃখজনক।

নির্বাচন কমিশনের ভেতরে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই বলে যে মন্তব্য নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার করেছেন, সেটি তাঁর ব্যক্তিগত মত। তবে তিনি (মাহবুব তালুকদার) তথ্য চাওয়ার পর সচিব যে উত্তর দিলেন, তা প্রমাণ করে ইসির ভেতরে সমস্যা রয়েছে।

ভেতরকার সমস্যার কারণে ইসির যেভাবে ফাংশন করার কথা, সেভাবে করতে পারছে না। ফলে এতগুলো মারামারি হলেও কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখলাম না। অভিযোগের পর অভিযোগ উঠল। কিন্তু অভিযোগগুলোর নিষ্পত্তি হতে দেখলাম না। পাল্টাপাল্টি অভিযোগে নির্বাচন কমিশন কেন ব্যবস্থা নিতে পারবে না? তাদের হাতে শক্তিশালী আইন আছে।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ৫৪ লাখের বেশি ভোটার। সরকারের জন্য, নির্বাচন কমিশনের জন্য, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গণতন্ত্রের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই।

মতভেদ সব নির্বাচন কমিশনেই ছিল। তাই বলে একজন, দুজনকে সাইড লাইন করা হবে কেন। এর আগেও দেখেছি চারজন নির্বাচন কমিশনার নিয়োগসংক্রান্ত বিষয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। এটি একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো নয়।

অতীতের নির্বাচনগুলো কমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। এই নির্বাচন কীভাবে তারা নিয়ন্ত্রণ করবে, সেটাও জানি না। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, নানা ধরনের শঙ্কা দেখছি। সংবিধান ইসিকে দায়িত্ব দিয়েছে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার। এই দায়িত্ব পালন না করতে পারলে জাতির কাছে তাদের দায়ী থাকতে হবে। ভালো নির্বাচন না হলে ইসি এখন যে অবস্থায় রয়েছে, তার চেয়ে বড় প্রশ্নের মুখে পড়বে।

ইভিএমের গণনা ঠিক হয়নি বা জোর করে ভোট দেওয়া হয়েছে, সেটির কোনো প্রমাণ পাওয়া যাবে না। প্রমাণ পাওয়া যেত যদি পেপার টেইল (ভোটার ভ্যারিয়েবল পেপার অডিট ট্রেইল বা ভিভিপিএটি, যন্ত্রে ভোট দেওয়ার পর তা একটি কাগজে ছাপা হয়ে বের হবে) থাকত। পেপার টেইল না থাকলে আইনের আশ্রয় নেওয়ার সুযোগ নেই। কেন ইভিএমে পেপার টেইল লাগানো হলো না, এর জবাব নির্বাচন কমিশনকেই দিতে হবে; যার কারণে ইভিএম নিয়ে এত সন্দেহ থাকছে।

আশা করি, ভোটের দিন ইসি তৎপর থাকবে। যেন কোনো বুথ দখল না হয়, প্রকৃত ভোটাররা যেন ভোট দিতে পারেন। ভোটারদের আসতে দেওয়া হচ্ছে কি না, ভোটকেন্দ্রের সামনে জটলা করে রাখা হয় কি না—এসব ইসির দেখার বিষয়। শুধু ইভিএম থাকলেই সব হবে না। বুথ দখল হলে, ভোটারদের আসতে না দিলে যন্ত্রের সুফল পাওয়া যাবে না।