গৃহবধূর মৃত্যুতে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির কারাদণ্ড

গায়ে কেরোসিন ঢেলে গৃহবধূর মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। স্বামীকে পাঁচ বছর এবং শ্বশুর ও শাশুড়িকে তিন বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে করা এই মামলায় আজ বুধবার দুপুরে রাজশাহীর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মেহেদী হাসান তালুকদার এই দণ্ড দেন।

দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন গৃহবধূ অনুভা চক্রবর্তীর (২১) স্বামী অসিত চক্রবর্তী (২৫), শ্বশুর অনিল চক্রবর্তী (৫৫) ও শাশুড়ি মনজু রানী (৪০)। তাঁদের বাড়ি নওগাঁর মান্দা থানার পারইল গ্রামে। নিহত গৃহবধূর বাড়ি দিনাজপুরের নবাবগঞ্জ থানার দাউদপুর গ্রামে।

মামলার সূত্রে জানা যায়, অনুভার স্বামী রাজশাহীর মোহনপুরে একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করতেন। তাঁরা মোহনপুর উপজেলার খয়রা গ্রামে জনৈক আহমেদ আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। ওই বাড়িতেই ২০১৪ সালের ১৭ নভেম্বর রাতে অনুভা নিজের গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাঁর চিৎকারে আশপাশের লোকজন গিয়ে তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ নভেম্বর দুপুরে অনুভা মারা যান।

এ ঘটনায় অনুভার মামা অতুল কুমার চক্রবর্তী মোহনপুর থানায় একটি মামলা করেন। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, যৌতুকের কারণে মারধর, জ্বালা-যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে অনুভা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এর আগে তিনি তাঁর মামাকে মুঠোফোনে একটি খুদে বার্তা পাঠান। তাতে তিনি লিখেছিলেন, ‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার একটি চাকরির প্রয়োজন। দয়া করে আমাকে সাহায্য করুন। আমি অসহায়। এখন জীবনের জন্য টাকা প্রয়োজন। আমি আমার সাধ্যমতো চেষ্টা করব। তবে আপনার সাহায্যও প্রয়োজন। অসিত ভালো মানুষ না। তাঁর পরিবারের লোকজন লোভী।’

মামলায় তদন্ত শেষে অনুভার স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়ির বিরুদ্ধে আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ মিলেছে। ২০১৫ সালের ৩১ মে মোহনপুর থানার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাদের অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

আদালতে আটজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানি শেষে স্বামী অসিত চক্রবর্তীকে আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১৫ দিন বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। শ্বশুর ও শাশুড়িকে তিন বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড এবং তিন হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায় ঘোষণার সময় আসামিরা আদালতে হাজির ছিলেন। তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।

মামলায় বাদীপক্ষ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সরকারি কৌঁসুলি আহসান হাবীব। আসামিপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন মো. বেলাল উদ্দিন।