নিজ দোকানে চুরির নাটক সাজিয়ে এখন কারাগারে

প্রতীকী ছবি। এএফপি
প্রতীকী ছবি। এএফপি

পরিকল্পনা মাফিক চুরির ঘটনাটি সাজানো হয়েছিল। দোকানের পেছনের দরজার তালা ভেঙে ঢোকে সিন্ধুকের (ভল্ট) তালা ভেঙে সোনা ও রুপার অলংকার চুরি করে চোরের দল। সবই ঠিকঠাক ছিল। কিন্তু বাদ সাধল পুলিশ। তদন্তে নেমে পুলিশ ধরে ফেলল দোকান মালিক, তাঁর স্ত্রী, সহোদর ভাই ও দোকানের এক কর্মচারীকে। দোকান মালিকের বাড়ি থেকেই উদ্ধার করা হয় চুরি জিনিসও।

গত সোমবার রাতে সাজানো চুরির ঘটনাটি ঘটে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার আমাইতাড়া বাজারের ‘উমর জুয়েলার্স’ নামের জুয়েলারি দোকানে। পুলিশের দাবি, দোকান মালিক মোকাররম হোসেন (৩৪), তাঁর ভাই আতোয়ার হোসেন (৩৬) ও দোকানের কর্মচারী মোরছেদ আহমেদকে (২৮) নিয়ে চুরির এই নাটক সাজিয়েছেন।

দোকান মালিক মোকাররম হোসেন থানায় লিখিত অভিযোগ না করলেও সাংবাদিক ও পুলিশের কাছে দাবি করেন তাঁর দোকান থেকে ৩৫ ভরি স্বর্ণ ও ৯০ ভরি রুপা অলংকার এবং নগদ ৬০ হাজার টাকা চুরি করে নিয়ে গেছে চোরের দল। লিখিত অভিযোগ না পেলেও তদন্ত শুরু করে ধামইরহাট থানা-পুলিশ।

আজ বুধবার দুপুরে নওগাঁ পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকিবুল আক্তার বলেন, ‘দোকান মালিকের কাছ থেকে দোকানের ২২ লাখ টাকার অলংকার চুরি হওয়ার ঘটনা শুনে আমরা তদন্তে নামি। চুরির ঘটনার পর দিন ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, দোকান ঘরটির সামনের দরজা তালাবদ্ধ এবং পেছনের দরজা দোকানের ভেতর দিকে পাশ থেকে কাটা হয়েছে। এ ছাড়া দোকানের ভেতরে অবস্থিত লোহার সিন্ধুক চাবি দিয়ে খোলার পর একপাশে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে চুরির ঘটনাটি প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়।’

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আরও বলেন, প্রথমে ঘটনাস্থল পরিদর্শনেই একটা সন্দেহ জাগে। এরপর ওই বাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপ করে তথ্য পাওয়া যায়, ওই দোকানে খুব বেশি মালামাল ছিল না। দোকানটি গত এক-দেড় বছর ধরে অধিকাংশ সময়ই বন্ধ থাকত। দোকানের মালিক মোকাররম হোসেন একজন ঋণগ্রস্ত মানুষ। এসব তথ্য পাওয়ার পর তদন্তকারীরা পুলিশ দোকান মালিক মোকাররমের বাড়িতে অনুসন্ধানে যান।

জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে মোকাররমের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (২৬) চুরির ঘটনাটি সাজানো বলে স্বীকার করেন। ঋণ দাতাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য চুরির এই নাটক সাজানো হয়। চুরির দিন সন্ধ্যার ৭টার দিকে মোকাররম দোকান থেকে বাড়ি ফেরেন। রাত ১১টার দিকে তিনি আবার বাড়ি থেকে বের হয়ে দোকানে যান এবং রাত ৩টার দিকে বাড়িতে ফেরেন। এই সময় মোকাররম তাঁর বড় ভাই আতোয়ার হোসেন ও দোকানের কর্মচারী মোরছেদ আহমেদ সাজানো চুরির ঘটনাটি ঘটান।

মোকাররমের স্ত্রী মৌসুমীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, মোবারকের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ সোনা ও রুপার অলংকার উদ্ধার করে পুলিশ।

ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শামীম হোসের সরদার জানান, আজ বুধবার পুলিশ এ ঘটনায় প্রতারণার অভিযোগে বাদী হয়ে মামলা করে। পরে চারজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।