ভল্ট থেকে সাড়ে ৩ কোটি টাকা সরিয়ে জুয়া খেলেছেন ক্যাশ ইনচার্জ

শামসুল ইসলাম
শামসুল ইসলাম

প্রিমিয়ার ব্যাংকের রাজশাহীর শাখার ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা সরাতেন। ভল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকত। তিনি সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে টাকা সরাতেন, যাতে কারও সন্দেহ না হয়। এই করে তিনি ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়েছেন। এরপর এই টাকা দিয়ে তিনি জুয়া খেলেছেন। একটি অ্যাপের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক জুয়াড়িচক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

আজ বিকেলে তিনি রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২–এর বিচারক সাদেকিন হাবিবের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দেন।

শামসুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই টাকা আত্মসাতের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত দেড়টার সময় মামলা করেন ব্যাংকের ওই শাখার ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা খান। মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যা ছয়টার দিকে দিনের লেনদেন শেষে ক্যাশ মিলাতে গিয়ে তারা ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকার হিসাবে মিলাতে পারেননি। তখনই ক্যাশ ইনচার্জ শামসুল ইসলামকে তাঁরা ধরে বসেন। রাত ১২টার দিকে ওই কর্মকর্তাকে নিয়ে থানায় আসেন।

নগরের বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিবারণ চন্দ্র বর্মণ বলেন, তাঁরা রাত ১২টার দিকে শামসুল ইসলামকে থানায় নিয়ে আসেন কথাবার্তা বলে মামলা করতে রাত দেড়টা বেজে যায়। থানায় আনার পরে তিনি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তিনি টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করেননি। এ জন্য তাঁকে গত সোমবার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। আজ বুধবার রিমান্ড শেষে দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালত তখন থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত তাঁকে ভাবার সময় দেন। চিন্তাভাবনা করে তিনি ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। প্রায় সাড়ে ৪টার দিকে তাঁর জবানবন্দি রেকর্ড শেষ হয়।

ওসি বলেন, জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন লোভে পড়ে তিনি ২০১৮ সাল থেকে কৌশলে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা সরিয়ে জুয়া খেলতে শুরু করেন । এই করে তিনি ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যাংক থেকে সরিয়েছেন।

শামসুল ইসলাম পুলিশকে জানিয়েছেন, জুয়া খেলতে ব্যাংকের ভল্ট থেকে টাকা চুরি করেছিলেন। ব্যাংকের রাজশাহী শাখার ভল্টে সব সময় প্রায় ১৫ কোটি টাকা থাকত। সামনের লাইন ঠিক রেখে পেছনের লাইন থেকে তিনি টাকাগুলো সরাতেন। এতে করে ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তার সন্দেহ হতো না। ক্যাশ ইনচার্জ হিসেবে তিনিই দৈনিক টাকার হিসাব রাখতেন। খাতা-কলমে টাকার কোনো গরমিল ছিল না। তিনি স্বীকার করেছেন, একটি অ্যাপের মাধ্যমে তিনি আন্তর্জাতিক জুয়াড়িচক্রের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন।

এদিকে টাকা আত্মসাতের ঘটনা তদন্তে এরই মধ্যে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয় থেকে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ্ আলমের নেতৃত্বে উচ্চপর্যায়ের একটি তদন্ত দল রাজশাহীতে এসে কাজ শুরু করেছে। শাহ্ আলম জানান, এই টাকা আত্মসাতের ঘটনায় শামসুল ইসলাম ওরফে ফয়সাল একাই, নাকি ব্যাংকের আরও কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী জড়িত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে ভল্টে টাকা সংরক্ষণ প্রক্রিয়ায় অন্তত দুজন কর্মকর্তার স্বাক্ষর থাকে। এ ক্ষেত্রে কী হয়েছে, তাও দেখা হচ্ছে।

শাখা ব্যবস্থাপক সেলিম রেজা খান বলেন, ২৩ জানুয়ারি ভল্টের সমস্ত টাকা গণনার পর ৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা কম পাওয়া যায়। এ সময় শামসুল ইসলাম টাকা সরানোর কথা স্বীকারও করেন। বিষয়টি তাঁরা ওই রাতেই ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। পরে তাঁদের নির্দেশনা অনুযায়ীই থানায় মামলা করেন এবং রাতেই তাঁকে পুলিশে হস্তান্তর করেন।