নির্বাচনকে সামনে রেখে আ. লীগ-বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংঘাত বাড়ছে

নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে, কামরাঙ্গীরচরের ওয়ার্ডগুলোতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর মধ্যে সংঘাত ততই দৃশ্যমান হচ্ছে। এ ছাড়া বিএনপি–সমর্থিত কাউন্সিরল প্রার্থীদের ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের মধ্যে ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে কামরাঙ্গীরচরের ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের দ্বন্দ্ব বেশ তীব্র। সম্প্রতি এই ওয়ার্ডের দল–সমর্থিত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন (ঘুড়ি)। তাঁর বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন আওয়ামী লীগের কামরাঙ্গীরচর থানা কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাইদুর রহমান ওরফে রতন (ঠেলাগাড়ি)। মোহাম্মদ হোসেন জাতীয় সংসদের ঢাকা-২ আসনের সাংসদ কামরুল ইসলামের অনুসারী। সাইদুর রহমান কেরানীগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের অনুসারী। ঢাকা-২ আসনে দলীয় প্রার্থিতা নিয়ে কামরুল ইসলাম ও শাহীন আহমেদের মধ্যে পূর্বশত্রুতা বা মতবিরোধ রয়েছে বলে জানা গেছে।

আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা জানান, কামরাঙ্গীরচর সংসদীয় আসন ঢাকা-২–এর আওতাধীন। এই আসনের নিজের অবস্থান মজবুত করতেই সাইদুর রহমানকে দলের সমর্থনে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন শাহীন আহমেদ। কামরুল ইসলামও এই ওয়ার্ডে নিজের প্রভাব বজায় রাখতে পরোক্ষভাবে মোহাম্মদ হোসেনের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন।

কামরাঙ্গীরচরের ৫৫ ও ৫৭ নম্বর ওয়ার্ডে এই ধরনের কোনো ঝামেলা নেই। তবে এই দুটি ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

ঝাউচর, ঝাউলাহাটি, নয়াগাঁও, হাসাননগর, মুন্সীহাটি, মুনসুরবাগ, নবীনগর, আমিনবাগ এলাকা নিয়ে ৫৫ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর নূরে আলম (ঠেলাগাড়ি)। দলীয় নেতা–কর্মীদের নিয়ে তিনি নিয়মিত ঝাউচর, হাসাননগর, খোলামুড়া এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। তবে ঝাউচরে গণসংযোগ করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বিএনপির প্রার্থী মো. সামির (ঘুড়ি)। তাঁর অভিযোগ, কোনো কারণ ছাড়াই নূর আলমের লোকজন তাঁর গণসংযোগে হামলা করেছেন।

>কামরাঙ্গীরচরে ডিএসসিসির তিনটি ওয়ার্ড
এখানে নাগরিক সুবিধা তেমন উন্নত নয়

তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন নূরে আলম। তিনি বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে তাঁর দলের কেউ জড়িত নয়।

এই ওয়ার্ডে জসিম উদ্দিন (করাত), আপেল মাহমুদ (মিষ্টিকুমড়া) ও মো. শহিদুল হক (লাটিম) নামে আরও তিনজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা নিজেদের প্রতীক নিয়ে ভোটারদের কাছে ভোট চাইছেন। রসুলপুর, বড়গ্রাম, ইসলামনগর, আলীনগর, হুজুরপাড়া, পশ্চিম আশ্রাফাবাদ এলাকা নিয়ে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ড।

এখানে কাউন্সিলর পদে মোহাম্মদ হোসেনকে (ঘুড়ি) সমর্থন দিয়েছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু পরদিন বিদ্রোহী হিসেবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নেন সাইদুর রহমান (ঠেলাগাড়ি)। ৯ জানুয়ারি প্রতীক বরাদ্দের পরদিন থেকে তাঁরা উভয়েই জোরালোভাবে নিজ প্রতীকে প্রচারণা শুরু করেন। এর মধ্যে পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে মোহাম্মদ হোসেন ও সাইদুর রহমানের পক্ষের নেতা–কর্মী এবং সমর্থকদের মধ্যে কয়েক দফা সংঘর্ষ হয়।

এই ওয়ার্ডে বিএনপির প্রার্থী মো. নাঈম (কাঁটাচামচ)। তাঁর নির্বাচনী প্রচারে মোহাম্মদ হোসেনের লোকজন একাধিকবার হামলা চালিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন তিনি। নাঈম বলেন, ‘যখনই প্রচারে নামি, পেছন থেকে মোহাম্মদ হোসেনের লোকজন হামলা করে। সবশেষ গত শুক্রবার বিকেলে তাদের হামলায় আমার সাতজন কর্মী আহত হয়েছেন।’

এই হামলার সঙ্গে নিজের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি করেছেন মোহাম্মদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘তারা নিজের মধ্যে হট্টগোল তৈরি করে আমার ওপর দায় চাপাচ্ছেন।’

এই ওয়ার্ডে আরও চারজন স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন আওলাদ হোসেন (লাটিম), বিল্লাল হোসেন সরদার (টিফিন ক্যারিয়ার), আমিনুল ইসলাম (ট্রাক্টর) ও মাহমুদা ফেরদৌস (মিষ্টিকুমড়া)।

মদিনাবাগ, আশ্রাফাবাদ, দুখুরিয়া, জঙ্গলবাড়ী, কুমিল্লাপাড়া, রহমতবাগ, রফিকুল ইসলাম রোড, হাসলাই, মুসলিমবাগ এলাকা নিয়ে ৫৭ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সাইদুল ইসলাম (ঘুড়ি)। এখানে তাঁর বিদ্রোহী প্রার্থী নেই। বিএনপির প্রার্থী পারভেজ মিয়া (কাঁটাচামচ) তাঁর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

তবে পারভেজ মিয়ার অভিযোগ, তাঁকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচনী প্রচার চালাতে দিচ্ছেন না সাইদুল ইসলামের কর্মীরা। তাঁরা পোস্টার ছিঁড়ে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলছেন। তিনি বলেন, ‘এখন ওয়ার্ডে আমার কোনো পোস্টার নেই। এ ছাড়া তাঁরা কর্মী-সমর্থকদের হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন।’

এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সাইদুল ইসলাম। তিনি বলেন, পারভেজ মিয়ার অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। তবে গতকাল বুধবার এই ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে পারভেজ মিয়ার নির্বাচনী পোস্টার দেখা যায়নি।

এই ওয়ার্ডে আরও চারজন স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন। তাঁরা হলেন কুরবান আলী (মিষ্টিকুমড়া), মো. আমিনুল (করাত), মো. সাহাদাত (রেডিও), মোশাররফ হোসেন সরকার (লাটিম)।