'বহিরাগত' ধরতে অভিযান

নির্বাচন সামনে রেখে বহিরাগতদের ধরতে বিশেষ অভিযানে নেমেছে পুলিশ। গত মঙ্গলবার রাত থেকে প্রাথমিকভাবে এ অভিযান শুরু হয়েছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, ঢাকার প্রবেশপথ, বস্তি, আবাসিক হোটেল ও মেসগুলোতে অভিযান চলবে। ঢাকার ভোটার নন বা রাজধানীতে অবস্থানের যৌক্তিক কারণ নেই, এমন কাউকে পেলে গ্রেপ্তার করা হবে।

গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে ১৪৫ জনকে আটক করা হয়েছে। চলমান অভিযানের পাশাপাশি ভোটের দিনে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ওই দিন ২০ হাজারের বেশি নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন থাকবে।

ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম এ বিষয়ে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশের কাছে খবর ছিল, নির্বাচন সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা ঢাকায় জড়ো হচ্ছে। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে অভিযান হচ্ছে। অপরাধী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপি বহিরাগতদের এনে ঢাকায় জড়ো করছে। এদের মধ্যে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, দাগি সন্ত্রাসীরাও রয়েছে। খবর আছে, নির্বাচনের দিন কেন্দ্রে পাহারার নামে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পরিবেশ বিঘ্নিত করতে পারে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বিএনপির প্রার্থী ইশরাক হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নয়, বাইরে থেকে লোক এনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আওয়ামী লীগ। কারণ, আওয়ামী লীগ যা করে, তা আগে থেকে ঘোষণা দিয়ে করে। তিনি বলেন, যেসব কেন্দ্রে বিএনপির ভোট বেশি, সেসব কেন্দ্র বহিরাগতদের দিয়ে দখল করার চেষ্টা করা হতে পারে। আর যেসব কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের ভোট বেশি, সেসব কেন্দ্রে সাধারণ ভোটারদের ঠেকাতে কৃত্রিম লাইন তৈরি করা হবে। পুলিশের অভিযানের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বহিরাগতদের ধরার নামে যেন বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি করা না হয়।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন ঢাকা উত্তরে বিএনপির প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘অতীতে এ ধরনের অভিযানে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরই লক্ষ্য করা হয়েছে। এবারও সে রকম আশঙ্কা করছি। এমন অভিযান শুধু অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে হওয়া উচিত, কোনো দলের কর্মীদের বিরুদ্ধে নয়।’

বিএনপির নেতারা বলছেন, অন্যবারের মতো এ নির্বাচনেও ক্ষমতাসীন দল ভোটার উপস্থিতি কমানো এবং বিএনপির এজেন্টদের কেন্দ্রে ঢুকতে না দেওয়ার পুরোনো কৌশল নেবে। এমনও হতে পারে, ভোটকেন্দ্রের বাইরে অকারণে মারামারি বাধিয়ে দিতে পারে।

>ঢাকার ভোটার নন বা রাজধানীতে অবস্থানের যৌক্তিক কারণ নেই, এমন কাউকে পেলে গ্রেপ্তার করা হবে

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ১ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণ। সময় যত ঘনিয়ে আসছে, নির্বাচনী প্রচারাভিযান ততই জমে উঠছে, একই সঙ্গে বাড়ছে উত্তেজনাও। প্রায় প্রতিদিনই কারও না কারও বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তোলা হচ্ছে। আবার একই দলের দুই পক্ষের মধ্যেই ছোটখাটো সহিংস ঘটনা ঘটছে। গতকালও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত মেয়র পদপ্রার্থী আতিকুল ইসলামের সমাবেশে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। ঢাকা উত্তরের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ-সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. নাসির ও দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী মো. জাহিদুর রহমানের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। পুলিশের ধারণা, এমন ছোটখাটো সহিংস ঘটনার সূত্র ধরে বড় ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। এ জন্য তারা সতর্ক রয়েছে।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম গতকাল রাজারবাগ পুলিশ লাইনস মিলনায়তনে দুই সিটি করপোরেশনে নির্বাচনে দায়িত্ব পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের করণীয় সম্পর্কে অবহিত করেন। সেখানে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবুল কাশেম ও দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বক্তব্য দেন। ডিএমপির উপপরিদর্শক থেকে উপকমিশনার এবং ডিএমপি সদর দপ্তরের উপকমিশনার থেকে অতিরিক্ত কমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত একজন পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার ভোটার নন এমন অনেক বহিরাগত দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় ঢুকছে বলে সভায় আলোচনা হয়। বলা হয়, যারাই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করবে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের আগে ও পরে যাতে কোনো সহিংসতা না ঘটে, সে জন্য পুলিশকে অভিযান চালাতে নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য সন্ত্রাসীরা যাতে ঢাকার কোনো আবাসিক হোটেলে অবস্থান নিতে না পারে, সে জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে অভিযান চলছে। নির্বাচন শেষ হওয়ার পরদিন পর্যন্ত তা চলবে।

ডিএমপি কমিশনারের বরাত দিয়ে একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সিটি নির্বাচন সামনে রেখে পুলিশের নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে ও টহল জোরদার করা হবে। নির্বাচনী এলাকায় অপরিচিতদের আনাগোনা পর্যবেক্ষণ করবে পুলিশ। ভোটারদের হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হতে পারেন, তা নিশ্চিত করবে পুলিশ। ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র চিহ্নিত করে সেখানে বেশি সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন ডিএমপি কমিশনার।

জানতে চাইলে পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মোখলেসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ হলো, মানুষ যেন অশান্তি, বিবাদ ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা। অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ যা-ই উঠুক না কেন, পুলিশের দায়িত্ব তা তলিয়ে দেখে নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে ব্যবস্থা নেওয়া।