শাপলার হ্রদে 'পাখির বাড়ি'

শাপলা আর পাখির নিরাপদ আশ্রয়।  ছবি: প্রথম আলো
শাপলা আর পাখির নিরাপদ আশ্রয়। ছবি: প্রথম আলো

২২ একর জমিজুড়ে আঁকাবাঁকা হ্রদ। পাশঘিরে ছোট ছোট চা-গাছের টিলা। হ্রদভর্তি শাপলা। আর সেখানে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির আবাস। জায়গাটি ‘পাখির বাড়ি’ নামেই স্থানীয় মানুষের কাছে পরিচিত। এটি মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল চা-বাগানে। উপজেলা সদর থেকে ওই স্থানের দূরত্ব প্রায় ১০ কিলোমিটার।

 সেদিন সকাল সাতটার দিকে বাগানে ঢোকার পর পথে দেখি চার-পাঁচজন নারী চা-শ্রমিক কনকনে শীতে কাজে যাচ্ছেন হেঁটে।

হ্রদটিতে পৌঁছাব কীভাবে, তা জানতে চাইলে তাঁদের একজন হেসে বললেন, ‘পাখির বাড়ি যাইবেন?’ 

তাঁরা রাস্তা দেখিয়ে দিলেন।

হ্রদে পৌঁছানোর আগেই দূর থেকে শোনা যায় পাখির কিচিরমিচির। বাগানের কারখানার পেছনে হ্রদে ফুটেছে শাপলা। টলটলে পানিতে খাবার খুঁজে বেড়াচ্ছে বালি হাঁস, চখাচখি, ভুঁতি হাঁস, লেঞ্জা হাঁস, পানকৌড়িসহ নানা প্রজাতির পাখি। মানুষের সাড়া পেলে তারা ঝাঁক বেঁধে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে উড়ে যায়। হ্রদের এক পাড়ে টিলার ওপর একটি বাংলো। শাপলা আর পাখি দেখতে টিলার ঢালে বাঁশ দিয়ে সিঁড়ি ও বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর পাশে টিনের ছাউনির একটি পাকা ঘর ও বাঁশের তৈরি বেঞ্চ।

জানা গেল, হ্রদে বাগান কর্তৃপক্ষÿ ১৫-২০ বছর ধরে মাছ চাষ করছে। সেখানে শাপলা ও কিছু পাখি সারা বছরই থাকে। তবে শীতের সময় বেশি দেখা যায়। এখানে পাখি শিকার ও ফুল ছেঁড়া নিষিদ্ধ। বিভিন্ন জায়গা থেকে লোকজন এখানে বেড়াতে আসে। তবে বাগান কর্তৃপক্ষেরÿ অনুমতি ছাড়া সেখানে ঢুকতে দেওয়া হয় না। সকাল ও শেষ বিকেলে হ্রদে পাখি বেশি থাকে।

বাগানের ব্যবস্থাপক সুজিত কুমার সাহা বলেন, বাগানটি ১৮৩৮ সালে স্থাপিত। ২০১৪ সাল থেকে এটি দেশের অন্যতম শিল্পপ্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপ পরিচালনা করছে। তারা বাগান পরিচালনা শুরুর পর শাপলা ও পাখির আবাসস্থল রক্ষায় হ্রদে মাছ ধরা বন্ধ করে দেয়। এরপর পাখির সমাগম বাড়তে থাকে। পাখি সেখানে ডিম ফোটায়। বাচ্চা জন্ম দেয়। স্থানটি পাখির অভয়াশ্রম।

হ্রদটি পাহারার জন্য কয়েকজন শ্রমিককে নিয়োজিত করা হয়েছে।