সবুজ পাহাড়ে লাল আমিলা

আমিলা পাতা তুলছেন এক নারী। খাগড়াছড়ির পানছড়ির দুদুকছড়ায়।  প্রথম আলো
আমিলা পাতা তুলছেন এক নারী। খাগড়াছড়ির পানছড়ির দুদুকছড়ায়। প্রথম আলো

বাংলায় ফলটির নাম চুকাই বা চুকুর। বিভিন্ন অঞ্চলে এটি মেসতা বা মেসতা গোলা নামেও পরিচিত। তবে পার্বত্য চট্টগ্রামে চাকমারা ফলটিকে আমিলা বলেই চেনে। এখন পাহাড়ের মানুষের কাছে ফলটি এই নামেই পরিচিত হয়েছে। তবে যে নামেই ডাকা হোক ভিটামিন সমৃদ্ধ ও ভেষজ ভরা এই ফলের কদর দিন দিনই বাড়ছে। বাণিজ্যিকভাবেও এর চাষ শুরু হয়েছে।

খাগড়াছড়ি কৃষি বিভাগের গবেষকেরা জানান, একসময় দেশের সর্বত্র দেখা মিললেও মালভেসি পরিবারের এই উদ্ভিদের সংখ্যা বেশ কমে গেছে। তবে সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে এখনো চুকাই বা আমিলার দেখা মেলে। এটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। গাছ দেখতে খাটো ও ঝোপালো হয়। ফুলের রং হলুদ, তবে মাঝের অংশ মেরুন রঙের। পাতা লালচে সবুজ, ফল লাল।

এটি ভিটামিন বি-সিক্স ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ঠোঁটের কোণে ঘা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবে জ্বালা-পোড়া, চর্মরোগসহ নানা রোগের উপশম করে এটি। চিংড়ির তরকারি বা টক ঝোলে আমিলা পাতা পড়লে রান্না সুস্বাদু হয়। পাহাড়িরা এই ফলের খোসা দিয়ে টক রান্না করে। প্রাকৃতিকভাবে পেকটিন সমৃদ্ধ বলে এই ফলের খোসা দিয়ে কোনো রাসায়নিক ছাড়া সহজেই জেলি তৈরি করা যায়।

পাহাড়ের বাসিন্দাদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় এই ফল দিয়ে তরিতরকারির স্বাদ যেমন বাড়ানো যায়, তেমনি জ্যাম আর চাটনি তৈরির জন্যও এই ফল অতুলনীয়। পাহাড়ের খাবার হোটেলগুলোতেও রান্না হয় আমিলা। খাগড়াছড়ি শহরের মহাজনপাড়ার এফএনএফ রেস্টুরেন্টের মালিক শাহেদ সুমন বলেন, আমিলা ফলের রান্না করা টকের চাহিদা রয়েছে প্রচুর। এ ছাড়া আমিলা দিয়ে ছোট মাছ, মাংসও রান্না করা হয়। স্যুপেও আমিলার ফল দেওয়া হয়।

খাগড়াছড়ি উপজেলার সাবেক নারী ভাইস চেয়ারম্যান বাঁশরী মারমা আমিলা সম্পর্কে বলেন, মারমারা এটিকে ‘পুং’ বলে, যার অর্থ টক। এই ফলের খোসা ছাড়িয়ে ঝোল করা হয়। ফলের বিচি যেকোনো জায়গায় বর্ষা মৌসুমে ফেলে দিলে নিজ থেকে চারা উঠে। তেমন পরিচর্চা করতে হয় না।

পাহাড়ে বাসিন্দারা একসময় শুধু নিজেদের খাওয়ার জন্য বাড়ির আঙিনার আশপাশে আমিলা রোপণ করতেন। তবে বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে এর চাষ হচ্ছে। অনেকে জুমে ও পতিত জমিতে আমিলার চাষ করছেন। পাতা ও ফল বিক্রি করে লাভের মুখও দেখছেন।

খাগড়াছড়ির বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক আঁটি আমিলা পাতা বিক্রি হচ্ছে ১০-১৫ টাকায়। আর ফল প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৮০ টাকায়।

মাটিরাঙ্গা বড়নাল ইউনিয়নের বাসিন্দা রণ জীবন ত্রিপুরা বলেন, ‘চার বছর আগে জুমের অন্য সবজির সঙ্গে আমিলা ফল বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে ভালো দাম পেয়েছি। এরপর থেকে জুমের একটি অংশে ও বাড়ির উঠানে প্রতিবছর আমিলা চাষ করি।’

পানছড়ি বাজারে আমিলা বিক্রি করতে এসেছিলেন মরাটিলা এলাকার বাসিন্দা চাইলাউ মারমা। ঘরের চারপাশে আমিলা চাষ করেছেন তিনি। এ বছর হাজার টাকায় আমিলা পাতা বিক্রি করেছেন। সামনে আরও ফল বিক্রি করতে পারবেন বলে জানালেন।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মর্ত্তুজ আলী বলেন, আমিলায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও লোহা রয়েছে। আমিলা চাষে কোনো সার ও সেচ দিতে হয় না। পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও সমতলেও সাথি ফসল হিসেবে আমিলা চাষ করা যায়। এর বাণিজ্যিক সম্ভাবনাও প্রচুর।