মাথায় ঢুকেছে চাকরি, অথচ ফ্রিল্যান্সিংয়ে লাখ টাকা আয়: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় যুব পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি। ছবি: পিআইডি
জাতীয় যুব পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি। ছবি: পিআইডি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অহেতুক চাকরির পেছনে না ছুটে যুবসমাজকে তাঁদের মেধা ব্যবহারের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার চায় এই মুজিব বর্ষে দেশে কেউ বেকার থাকবে না। মানুষের মাথায় একটা জিনিস ঢুকেছে যে চাকরি ছাড়া কিছুই করা যায় না। অথচ ফ্রিল্যান্সিং করে মাসে কয়েক লাখ টাকা আয় করা যায়।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) জাতীয় যুব পুরস্কার ২০১৯ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অনুষ্ঠানে ২২ জন আত্মকর্মী এবং ৫ যুবসংগঠকের মধ্যে এই পদক প্রদান করেন শেখ হাসিনা। ১৯৮৬ সাল থেকে প্রদান করা এই পুরস্কারে এ পর্যন্ত ৪৪৫ জন আত্মকর্মী সম্মানীত হয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, শুধু চাকরির মুখাপেক্ষী হয়ে বসে থাকলে চলবে না। তরুণদের মধ্যে যে সুপ্ত শক্তি রয়েছে একটা কিছু তৈরি করার, তার চিন্তা এবং মননকে বিকশিত করার, সেই কর্মদক্ষতাকে কাজে লাগাতে হবে। নিজে কাজ করবে এবং আরও ১০ জনকে কাজের সুযোগ করে দেবে।

শেখ হাসিনা তরুণদের উদ্দেশে বলেন, ‘চাকরি না করে চাকরি দেব বা দিতে পারব। সেই সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সেই চিন্তাটা মাথায় থাকতে হবে এবং আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। আত্মমর্যাদাবোধ থাকতে হবে। সেটা থাকলে আমার তো মনে হয় বাংলাদেশে আর কেউ বেকার থাকবে না।’ তিনি বলেন, আমাদের একটা লক্ষ্য হচ্ছে যে, এই মুজিব বর্ষকে ঘিরে বাংলাদেশে আর কেউ যেন বেকার না থাকে।

দুটি ঘটনার উদাহরণ টেনে চাকরি না করলেই কাউকে বেকার ভাবার মনমানসিকতাও পরিবর্তনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই মানসিকতাটা বদলাতে হবে। কারণ, আমাদের দেশের মানুষের মাথার মধ্যে ওই একটা জিনিস ঢুকে আছে, চাকরি ছাড়া যেন আর কিছুই করা যায় না। অথচ ফ্রিল্যান্সিং কাজ করে মাসে ২ থেকে ৩ লাখ পর্যন্ত টাকা আয় করা যায়।’ ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ কর্মসূচির মাধ্যমে প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রয়োজনে কর্মসংস্থান ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে একেকজন স্বাবলম্বী হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে কাজ করেই এখন ঘরে বসেই মানুষ অনেক টাকা রোজগার করতে পারছে।

যুবকদের প্রশিক্ষণে বর্তমান সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই প্রশিক্ষণটা একেবারে স্কুল পর্যায় থেকে শুরু করতে চাই। সে লক্ষ্যে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকেই যেকোনো একটা বিষয়ে হাতেকলমে শিক্ষা দেওয়া শুরু হবে। ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর এই পর্যন্ত আমরা ২ কোটি যুবসমাজের চাকরি এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরেছি।’

জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি। ছবি: পিআইডি
জাতীয় যুব পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে পুরস্কারপ্রাপ্তদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, তেজগাঁও, ঢাকা, ৩০ জানুয়ারি। ছবি: পিআইডি

স্টার্টআপে ১০০ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ
‘স্টার্টআপ’ প্রোগ্রামের (কাজটি শুরু করার) জন্য সরকার ১০০ কোটি টাকা ‘থোক বরাদ্দ’ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা স্বপ্রণোদিত হয়ে উদ্যোক্তা হবে, তারাই এখান থেকে ঋণ পাবে। কাজ করতে পারবে এবং শুরু করলেই কিন্তু ব্যাপকভাবে কাজ করা যায়।’ তিনি বলেন, তাঁর সরকার সারা দেশে যে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছে। সেখানে যেমন খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলা হবে, তেমনি উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণের সুবিধাও রাখা হবে। যেখানে ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মো. জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। যুব ও ক্রীড়াসচিব মো. আখতার হোসেন স্বাগত বক্তব্য দেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আখতারুজ্জামান খান কবির মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে আত্মকর্মী হিসেবে দেশে প্রথম স্থান অধিকারকারী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান এবং দেশের সেরা যুবসংগঠক (নারী) হিসেবে পুরস্কার লাভকারী পারভীন আক্তার নিজস্ব অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার বাসিন্দা প্রকৌশলী আতিক যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে হাঁস-মুরগি এবং গবাদিপশু প্রতিপালনের প্রশিক্ষণ এবং স্বল্পমূল্যের ঋণ নিয়ে অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ গড়ে তুলেছেন। যার প্রতিষ্ঠানের বর্তমান মূলধনের পরিমাণ ৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা এবং বার্ষিক আয় ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা।