সাঈদ খোকনের আরেক এপিএসসহ ৩ জনকে তলব

ক্যাসিনো-কাণ্ডে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের আরেকজন সহকারী একান্ত সচিবসহ (এপিএস) তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ ছাড়া যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম প্রধান এবং একজন খাদ্য পরিদর্শককেও তলব করা হয়েছে।

দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। যাঁদের তলব করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মেয়র সাঈদ খোকনের এপিএস আবুল কালাম আজাদ, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম প্রধান মো. সাজ্জাদুল ইসলাম এবং টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক খোরশেদ আলম। তাঁদের ১০ ফেব্রুয়ারি সকালে সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার দুদকের পরিচালক এবং ক্যাসিনো-কাণ্ড ও বড় দুর্নীতির অনুসন্ধানে গঠিত দলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেন তাঁদের তলব করে আলাদা চিঠি পাঠিয়েছেন। মেয়রের এপিএসকে হাজির হওয়ার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মেয়র বরাবর চিঠি পাঠানো হয়েছে। অন্য দুজনকে দুদকে হাজির হতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং টাঙ্গাইলের খাদ্য নিয়ন্ত্রককে চিঠি পাঠানো হয়।

তাঁদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদ মেয়র সাঈদ খোকনের রাজনৈতিক এপিএস। সাজ্জাদুল ইসলাম একসময় গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাজ করেছেন।

তাঁদের পাঠানো আলাদা আলাদা নোটিশে বলা হয়, জি কে শামীমসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য সবার বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

এর আগে গত ২২ জানুয়ারি একই অভিযোগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকনের এপিএস শেখ কুদ্দুসকে দুদকে ডেকে দিনভর জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কার করা হয়) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করে। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করে দুদক দল।