'অন্তত ভোটের দিন ইসি যেন ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখায়'

সুলতানা কামাল। ফাইল ছবি
সুলতানা কামাল। ফাইল ছবি

গণতন্ত্রের সবচেয়ে মৌলিক উপাদান হলো নির্বাচন। যাঁরা ক্ষমতায় থাকেন, জনগণের কাছে তাঁদের জবাবদিহি করার জন্য নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। সেই কারণে নির্বাচন জনগণের কাছে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ও আকাঙ্ক্ষিত একটি বিষয়।

রাত পোহালেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ। যেহেতু নির্বাচনে এবার বিএনপি অংশ নিচ্ছে এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির মেয়র পদপ্রার্থীরাও জোরেশোরে প্রচার চালিয়েছেন, তাই একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনের আশা করা যায়। প্রচারণার শেষ দিন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ মোটামুটি শান্ত ছিল। কয়েকটি হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও সহিংসতা আশঙ্কার তুলনায় কম হয়েছে। তবে নির্বাচনের পরিবেশ প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। সামগ্রিক পরিবেশ নিয়ে এর মধ্যেই বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি দল ও বিরোধী
দল—উভয় পক্ষই নির্বাচন কমিশনে গেছে নানা অভিযোগ নিয়ে। দেখা গেছে, বেশির ভাগ আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় নির্বাচন কমিশন কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, বরং নির্বাচন কমিশনের ভেতরকার নানা বিরোধের খবর পত্রপত্রিকায় এসেছে। নাগরিক হিসেবে প্রত্যাশা থাকবে, অন্তত ভোটের দিন নির্বাচন কমিশন যেন তার ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগ দেখাতে পারে। বিন্দুমাত্র অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটলে নির্বাচন কমিশনকে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে ভোটাররা ভয়ভীতিমুক্ত পরিবেশে অবাধে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। নির্বাচন কমিশনও একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ নির্বাচনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

এবারের নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা হচ্ছে। নানা বিতর্ক আছে বিষয়টি নিয়ে। ইসি বারবার বলছে, ইভিএমে কারচুপির সুযোগ নেই। অপরদিকে বিরোধীপক্ষ সন্দেহ-সংশয় প্রকাশ করে আসছে। এই নির্বাচন ইভিএমের মাধ্যমে ভোট গ্রহণে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরির বড় সুযোগ। মানুষ যেন ভোট দিতে পারে, ভোটাধিকার প্রয়োগে কেন্দ্রের ভেতর-বাইরে যাতে প্রতিবন্ধকতার মুখে না পড়ে, সেই সুযোগ সৃষ্টির দায়িত্ব নির্বাচন কমিশন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিবর্গের।

নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা নানা ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন। ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে ভোটাররাও নিশ্চয় প্রার্থীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো বিবেচনায় নেন। যে কারণে প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতিগুলো খুবই অর্থবহ এবং বাস্তবায়নযোগ্য হওয়া প্রয়োজন। যাঁরা নির্বাচিত হবেন, বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখার সুযোগ তাঁরা পাবেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে ইশতেহারে প্রার্থীদের কাছ থেকে নানা অঙ্গীকার ও আশ্বাস উচ্চারিত হলেও এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট, বাস্তবসম্মত দিকনির্দেশনা পাওয়া যায়নি।

 ঢাকা এখন বিশ্বের অন্যতম দূষিত নগরী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। নির্বাচন সামনে রেখে পলিথিনে মোড়ানো পোস্টারে ছেয়ে গেছে রাজধানী। প্রচারের সময় দিন-রাত উচ্চ শব্দে চলেছে মাইকে প্রচার–প্রচারণা। প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারের সময় পরিবেশ রক্ষার বিষয়ে যারপরনাই উদাসীনতা দেখিয়েছেন, ঢাকাকে আরও বিপর্যস্ত করেছেন। তাই এই শঙ্কা থেকেই যায় যে যাঁরা এই নির্বাচনে জয়ী হয়ে নগরী পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন, তাঁরা বাসযোগ্য ঢাকা গড়তে কতটুকু আন্তরিক হবেন।

বাসযোগ্য ঢাকা গড়ার পাশাপাশি নারীবান্ধব ঢাকা গড়ার বিষয়েও জোর দিতে হবে। যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁদের এ বিষয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। পাশাপাশি সাধারণ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে যাঁরা জয়ী হবেন, তাঁরা যেন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারেন, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। তাঁদের কাজ করার, সামনে এগিয়ে আসার সুযোগ দিতে হবে।

লেখক: মানবাধিকারকর্মী