চীন থেকে জ্বর নিয়ে এসে সারা রাত বিমানবন্দরে

হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। ফাইল ছবি

চীন থেকে আসা এক বাংলাদেশি যুবক তীব্র জ্বর নিয়ে বিমানবন্দরে রাত কাটিয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে তাঁকে সরকারি কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। তাঁর ভর্তির বিলম্বের দুই রকম ব্যাখ্যা দিয়েছেন সরকারি কর্মকর্তারা।

৩৪ বছর বয়সী ওই যুবক ২৯ জানুয়ারি রাত ১১টা ১০ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় তাঁর জ্বর শনাক্ত হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, সন্দেহভাজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসার জন্য কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল ও সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতাল প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কুর্মিটোলা তুলনামূলকভাবে বিমানবন্দরের কাছে। তবে দ্রুত তাঁকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়া হয়নি।

অন্যদিকে চীনফেরত দুই শিক্ষার্থীকে চট্টগ্রামের একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা দেশে আসেন ২৪ জানুয়ারি। এই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রথম আলোরসীতাকুণ্ড প্রতিনিধিকে জানিয়েছে, বুধবার রাতে ভর্তি করার পর দুই শিক্ষার্থীর লালার নমুনা রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে (আইইডিসিআর) পাঠানো হয়।

চীন থেকে ২৯ তারিখ আসা যুবক জানিয়েছেন, তিনি পেশায় সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। চীনা কর্তৃপক্ষ তিনবার তাঁর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষে বিমানবন্দরে কর্মরত মুখ্য স্বাস্থ্য কর্মকর্তা শাহরিয়ার সাজ্জাদ এই তথ্য প্রথম আলোকে জানিয়ে বলেন, ‘আমরা বুঝতে পারছি না, চীনা কর্তৃপক্ষ এ পরিস্থিতিতে তাঁকে কেন ছাড়ল।’

যুবককে কেন রাতেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি, এ প্রশ্নের উত্তরে শাহরিয়ার সাজ্জাদ বলেন, বিমানবন্দরে পর্যবেক্ষণ কক্ষ আছে, তাঁকে সেখানে রাখা হয়েছিল। গতকাল সকালে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কেন রাতেই ভর্তি না করে পরদিন ভর্তি করা হলো? জবাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কি না, এটা নিশ্চিত হয়ে ভর্তি করানো হবে, নাকি সন্দেহভাজন যে কাউকে ভর্তি করানো হবে, তা নিয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝির কারণে বুধবার রাতে চীনফেরত যুবককে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়নি।

>

২৪ ঘণ্টায় চীন থেকে আরও এসেছেন ৪০৬ জন
সন্দেহভাজন দুই শিক্ষার্থী চট্টগ্রামের হাসপাতালে

গতকাল রাতে বারবার মুঠোফোনে চেষ্টা করেও হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। খুদেবার্তা পাঠিয়েও কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি।

অন্যদিকে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে জ্বর নিয়ে ভর্তি হওয়া চীনা নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। ওই হাসপাতালের দুজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেছেন, আইইডিসিআর পরীক্ষা করে দেখেছে, ওই চীনা নাগরিক সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। তিনি হাসপাতাল ছেড়ে চলে গেছেন।

 গত সোমবার জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে একজন চীনা নাগরিক একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁকে বিশেষ একটি কক্ষে রেখে চিকিৎসা দিয়েছিল।

২১ থেকে ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১০ দিনে চীন থেকে এসেছেন ৩ হাজার ৭৫৪ জন। তাঁদের মধ্যে ২১ জন সন্দেহভাজনের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৪০৬ জন এসেছেন, তাঁদের ৭ জনের লালা পরীক্ষা করা হয়েছে। তবে কারও করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা।

নজরদারির বাস্তব চিত্র

এক সপ্তাহ ধরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা বলে আসছে, করোনাভাইরাস প্রতিরোধে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। ২৩ জানুয়ারি লিখিতভাবে বলা হয়েছিল, দেশের বিভিন্ন স্থল-নৌ-বিমানবন্দরের অভিবাসন ডেস্কে ও আইএইচআর (ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশন ২০০৫) স্বাস্থ্য ডেস্কে সতর্কতা ও নজরদারি জোরদার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোরের বেনাপোল বন্দরে থার্মো স্ক্যানার যন্ত্র দিয়ে রোগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। তবে সিলেট বিমানবন্দরের স্ক্যানার যন্ত্র দেড় বছর ধরে নষ্ট। থার্মোমিটার দিয়ে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় থার্মোমিটার ব্যবহার করা হচ্ছে আখাউড়া স্থলবন্দর ও সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে।