চীন ফেরতদের আনতে প্রস্তুত বাস-ট্রাক

চীন থেকে দেশে ফেরত আসছেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। বিমানবন্দর থেকে হজ ক্যাম্পে নিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বাস। হজ ক্যাম্প, ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
চীন থেকে দেশে ফেরত আসছেন বাংলাদেশি নাগরিকেরা। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। বিমানবন্দর থেকে হজ ক্যাম্পে নিতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে বাস। হজ ক্যাম্প, ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে নতুন করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিস্থিতিকে আন্তর্জাতিক জরুরি অবস্থা বলে ঘোষণা করেছে। ভাইরাস উপদ্রুত চীনের উহান থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনতে উড়োজাহাজ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। দেশে এনে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে তাঁদের হজ ক্যাম্পে ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হবে।

বাইরে কারও সঙ্গে তাঁদের দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। গতকাল বিকেল পাঁচটায় বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ উড়োজাহাজ বাংলাদেশিদের আনতে চীনে গেছে। আজ বেলা ১১টার দিকে ৩৬১ জন বাংলাদেশিকে নিয়ে উড়োজাহাজটি দেশে ফিরছে বলে জানান সরকারি কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে আছে ১৯টি পরিবার, ১৮টি শিশু। ২টি শিশুর বয়স দুই বছরের কম।

গত রাতে তাদের আসার কথা ছিল, তবে ফ্লাইটটি আজ বেলা ১১টার দিকে শাহজালাল বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। চীন থেকে আনা এসব বাংলাদেশিকে রাখা হবে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কাছে আশকোনা হজ ক্যাম্পে। গতকাল সারা দিন চীন ফেরতদের রাখার জন্য ক্যাম্প প্রস্তুত করার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা গেছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের। সন্ধ্যায় ক্যাম্পের প্রস্তুতি দেখতে গিয়েছিলেন রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক ও অন্য কর্মকর্তারা। আজ সকালে হজ ক্যাম্পের সামনে আটটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত বাস ও দুটি ট্রাক দেখা যায়। বাসচালকদের বিশেষ পোশাক ও মাস্ক দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা গত রাতে প্রথম আলোকে বলেছেন, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে উড়োজাহাজ থেকে যাত্রীদের সরাসরি হজ ক্যাম্পে নেওয়া হবে। সেখানে তাঁদের ‘কোয়ারেন্টাইন’ করে রাখা হবে, কারও সঙ্গে দেখা করার সুযোগ দেওয়া হবে না। ‘কোয়ারেন্টাইন’ অবস্থায় সেনাবাহিনী ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মেডিকেল টিম তাঁদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে। স্বাস্থ্য পরীক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের খরচ বহন করবে বাংলাদেশ সরকার। ক্যাম্পে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও পুলিশ তাঁদের নিরাপত্তা দেবে।

সরকারি কর্মকর্তারা অনুরোধ করেছেন, চীন ফেরত নাগরিকদের আত্মীয়স্বজন যেন ক্যাম্পে ভিড় না করেন। ক্যাম্পে অবস্থানরত নাগরিকদের পরিস্থিতি নিয়মিত জানানোর আনুষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকবে। প্রয়োজনে তাঁরা এসব নম্বরে ফোন করে খবর জানতে পারবেন: ০১৯২৭৭১১৭৮৪; ০১৯২৭৭১১৭৮৫; ০১৯৩৭০০০০১১; ০১৯৩৭১১০০১১।

চীন থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। তাঁদের হজ ক্যাম্পে নিতে তাঁদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বাস। হজ ক্যাম্প, ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ
চীন থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে হজ ক্যাম্পে রাখা হবে। তাঁদের হজ ক্যাম্পে নিতে তাঁদের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে বাস। হজ ক্যাম্প, ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি। ছবি: তানভীর আহাম্মেদ

গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত বাংলাদেশে চীনা নাগরিক বা চীন ফেরত বাংলাদেশি নাগরিকের করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা।

আইইডিসিআর সূত্র জানিয়েছে, ২১ থেকে ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৪ হাজার ২৬০ জন যাত্রী চীন থেকে বাংলাদেশে এসেছেন। এঁদের মধ্যে সন্দেহভাজন ২৩ জনের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। অন্তত তিনজন ঢাকা ও চট্টগ্রামের দুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ৯ জানুয়ারি চীনের উহানে প্রথম এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়। গতকাল পর্যন্ত মারা গেছে ২১৩ জন। আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার। এরই মধ্যে ভাইরাসটি চীন ছাড়াও এ পর্যন্ত ২৪টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে।

এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ৩০ জানুয়ারি (বাংলাদেশে ৩১ জানুয়ারি) বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে। সংস্থাটি বলেছে, একাধিক দেশে এই ভাইরাস মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমণের নজির পাওয়া গেছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতির অর্থ হচ্ছে, ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত, অস্বাভাবিক, মারাত্মক ও হঠাৎ করে ঘটেছে। চীন সীমান্তের বাইরে এ ঘটনার প্রভাব আছে। জরুরি অবস্থা ঘোষণার অর্থ ভাইরাস মোকাবিলায় বৈশ্বিক উদ্যোগের প্রয়োজন হতে পারে।