নারীদের ভোট কক্ষে ঢুকে পড়লেন আ.লীগের কাউন্সিলর প্রার্থী

কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ছবি: প্রথম আলো
কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ছবি: প্রথম আলো

এক নারী ভোটার কক্ষের পর্দা ঘেরা গোপন স্থানে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএমে) ভোট দিচ্ছিলেন। ওই সময় সেখানে হুট করে ঢুকে পড়লেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন ওরফে বাবুল। সাংবাদিকেরা তাঁকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তেড়ে এসে তিনি বলেন, ‘আপনাদের এখানে কী কাজ? এগুলো বোঝেন না? নাকি বুঝায়ে দিতে হবে?’ রাজধানীর কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আজ শনিবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।’

ওই কেন্দ্রে ভোটারদের উপস্থিতি রয়েছে বোঝাতে ভুয়া ভোটারদের এনে দাঁড় করিয়ে সাজানো লাইন বানানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল।

আজ সকাল ৮টা ৪০ মিনিটে কালাচাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে আসেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়াল। ওই সময় কেন্দ্রের ভেতরে ভোটারদের লাইন ছিল না। কেন্দ্রের বাইরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামের নৌকা প্রতীকের ব্যাজধারী লোকজন জটলা পাকিয়ে ছিলেন। তবে তাবিথ কেন্দ্রে প্রবেশের কিছুক্ষণ পর নৌকার ব্যাজধারী ওই লোকজন ব্যাজ খুলে ভোটার হিসেবে লাইনে দাঁড়ান। ওই সময় পুরুষ ও নারী ভোটারদের দুই লাইনেই কিছু ভোটার দেখা যায়। তখন সাংবাদিকেরা ভোটারদের কয়েকজনকে ভোটের স্লিপ বা জাতীয় পরিচয়পত্র সঙ্গে রয়েছে কি না, জানতে চাইলে তাঁরা লাইন থেকে বেরিয়ে যান। এমনই একটি লাইনে ১৩-১৪ বছরের এক কিশোরী দাঁড়িয়ে ছিল। তাকেও একই প্রশ্ন করা হলে সে জানায়, সে ভোটার স্লিপ ভোট কক্ষে গিয়ে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দেখাবে। তবে ওই কিশোরীকে অনুসরণ করে দেখা যায়, সে কোনো ভোট কক্ষে প্রবেশ করেনি। এক দরজা দিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেছে।

সাংবাদিকেরা বিএনপির মেয়র প্রার্থী তাবিথ আউয়ালকে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, এতক্ষণ এখানে কোনো ভোটার ছিল না। সাংবাদিকদের দেখে হঠাৎ একটি ভোটার লাইন তৈরি করা হয়েছে।

ওই কেন্দ্র থেকে সকাল নয়টার দিকে বেরিয়ে যান তাবিথ আউয়াল। তিনি বেরিয়ে যাওয়ার পর ওই কেন্দ্রে নৌকার ব্যাজধারী ৩০ জনের মতো পুরুষদের একটি দল প্রবেশ করে। এর মধ্যে কয়েকজন নারী ভোট কক্ষ ৭ ও ৮ নম্বরে ঢুকে পড়েন। তখন পর্দা ঘেরা গোপন স্থানে একজন নারীর ইভিএমে ভোট দেওয়া প্রক্রিয়া চলছিল। ব্যাজধারীদের একজন ওই স্থানে ঢুকে পড়েন। ওই সময় এই প্রতিবেদকসহ তিনজন সাংবাদিক ওই ব্যাজধারী ব্যক্তির পরিচয় জানতে চাইলে তিনি তেড়ে আসেন। পাল্টা প্রশ্ন করেন, ‘আপনাদের এখানে কী কাজ? এগুলো বোঝেন না? নাকি বুঝায়ে দিতে হবে?’ এরপর ওই ব্যক্তি তিন সাংবাদিককে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেন। ওই ব্যক্তিকে আশপাশের লোকজন ‘বাবুল ভাই’ বলে ডাকছিলেন।

পরে কেন্দ্র থেকে বের হয়ে আশপাশের পোস্টার ও ব্যানার দেখে ওই ব্যক্তির পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। তিনি হচ্ছেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর এবং এবার আওয়ামী লীগ সমর্থতি কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন ওরফে বাবুল। নারী কক্ষে যখন তিনি প্রবেশ করছিলেন তখন ওই কক্ষের কিছুটা দূরে দাঁড়িয়ে তা দেখছিলেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা আজিজুল হক মাহমুদ। তাঁর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উনি কাউন্সিলর প্রার্থী, আমি তো উনাকে মানা করতে পারি না।’