নামের মিলে মামলার বেড়াজালে নির্দোষ খোরশেদ

খোরশেদ আলম
খোরশেদ আলম

২০১২-২০১৩ সালের দিকে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে মহানগর ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলমের নেতৃত্বে নাশকতার অভিযোগ আছে। পুলিশ তাঁর বদলে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার রামনগর এলাকার মাদ্রাসাছাত্র খোরশেদ আলমের বিরুদ্ধে ওই সময় সদর ও ফতুল্লা মডেল থানায় নাশকতার ৮টি মামলা করেন। সেই মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে দুই দফায় পাঁচ মাস ৬ দিন জেল খাটেন তিনি।

গ্রেপ্তার খোরশেদ যে ছাত্রশিবিরের খোরশেদ নয়, আদালতে পুলিশ সে প্রতিবেদন দেয়। তবে নির্দোষ হয়েও মামলার বেড়াজাল থেকে মুক্তি মিলছে না খোরশেদের। আর গত সাত বছরেও ছাত্রশিবিরের নেতা খোরশেদকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

মাদ্রাসাছাত্র খোরশেদ আলমের আইনজীবী আওলাদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, এই খোরশেদ শিবিরের খোরশেদ নয়। শুধু নামের মিল থাকার কারণে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস দমন আইনে ৮টি মামলা করা হয়েছে। এর মধ্যে চারটি মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। একটা মামলার তদন্ত চলছে। আর তিনটি মামলায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বিনা দোষে পাঁচ মাস ৬ দিন জেল খেটেছেন তিনি।

এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালে বক্তাবলী ইসলামিয়া সিনিয়র আলিম মডেল মাদ্রাসার আলিম পরীক্ষার্থী ছিলেন খোরশেদ। তাঁর বাবার নাম আসাদুল্লাহ। একই এলাকায় ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি নাসির উল্লাহর বাড়ি। এই বাড়িতে যাওয়া-আসা করতেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্রশিবিরের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম। ২০১৩ সালের ২৩ মার্চ শিবিরের সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ মনে করে পুলিশ মাদ্রাসাছাত্র খোরশেদকে ধরে নিয়ে যায়।

খোরশেদ আলম বলেন, প্রথম দফায় গ্রেপ্তার হয়ে তিনি ১০৯ দিন জেল খাটেন। কারাগারে থেকে আলিম পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হন। পরে জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান। ২০১৯ সালের ১১ নভেম্বর গ্রেপ্তার হয়ে চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় ৫৭ দিন জেল খাটেন। এই মামলা নিয়েই তিনি মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক (সম্মান) পাস করেছেন। তবে দ্বিতীয় দফায় ৫৭ দিন জেলে থাকার কারণে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হতে পারেনি বলে জানালেন তিনি।

খোরশেদ আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমার জীবনের ওপর দিয়ে অনেক বড় ঘটনা ঘটে গেছে। এই হয়রানির ঘটনায় ২০১৪ সালে বাবা আসাদুল্লাহ স্ট্রোক করে বর্তমানে শয্যাশায়ী। পুলিশের ভুলের কারণে আমাদের পরিবারটা তছনছ হয়ে গেছে। মিথ্যা মামলায় আদালতের বারান্দায় দৌড়াতে হচ্ছে।’ তাঁর মা হালিমা আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলে এসবের সঙ্গে জড়িত না। তবুও আমার ছেলেকে আসামি করা হয়েছে। বিনা দোষে জেল খেটেছে সে। আমরা চাই আমার ছেলেকে সব মামলা থেকে খালাস দেওয়া হোক।’

এ বিষয়ে বক্তাবলীর ইউনিয়ন পরিষদের ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাসেল চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, খোরশেদ কখনো শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল না। তাঁর পরিবারের কেউ জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। শুধু নামের মিলের কারণে ছেলেটাকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

২০১৩ সালের ৩ জুন আদালতের নির্দেশে ফতুল্লা মডেল থানার তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুল্লাহ আল মাসুম তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেন। ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, খোরশেদকে যেসব মামলায় আসামি করা হয়েছে, সেগুলো শুধু নামের মিল থাকার কারণে হয়েছে।

এ ছাড়া গ্রেপ্তার খোরশেদ আলম ছাত্রশিবিরের নেতা খোরশেদ নয় মর্মে প্রত্যয়নপত্র দিয়েছেন ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বক্তাবলী ইউপির চেয়ারম্যান শওকত আলী। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা খোরশেদকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার জন্য আবেদন করব। আমরা শিবিরের খোরশেদকে গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’

নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) ওয়াজেদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, খোরশেদ জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। তাঁর বিরুদ্ধে যেহেতু অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে, এই মুহূর্তে তাঁকে মামলা থেকে বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। অভিযোগ গঠনের আগে তাঁকে অব্যাহতির আবেদন করতে হবে। না হলে সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে প্রমাণ করতে হবে এই খোরশেদ সেই খোরশেদ নয়। নইলে তাঁকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মনিরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটি অনেক আগের ঘটনা। আমরা বিষয়টি নিরীক্ষা করে দেখছি। মিথ্যা মামলায় কেউ যাতে হয়রানির শিকার না হয়, জেলা পুলিশ সতর্ক থাকবে।’