বাংলাদেশের নতুন চ্যালেঞ্জ ব্রেক্সিট

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কের ছেদ (ব্রেক্সিট) টেনেছে যুক্তরাজ্য। ছবি: রয়টার্স
ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কের ছেদ (ব্রেক্সিট) টেনেছে যুক্তরাজ্য। ছবি: রয়টার্স

গণভোটের সাড়ে তিন বছরের বেশি সময় পর ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে গত শুক্রবার আনুষ্ঠানিকভাবে সম্পর্কের ছেদ (ব্রেক্সিট) টেনেছে যুক্তরাজ্য। এই পরিস্থিতি ইইউ ও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের ভারসাম্যমূলক সম্পর্ক রাখার ক্ষেত্রে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে।

কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকেই যুক্তরাজ্য শুধু বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক অংশীদারই নয়, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানসহ উন্নয়ন ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন বহুপক্ষীয় ফোরামে সামনে থেকে বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়ে আসছে যুক্তরাজ্য। নতুন পরিস্থিতিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সম্পর্কের ধারাবাহিকতার প্রস্তুতি বাংলাদেশকে এখন থেকেই নিতে হবে।

ঢাকা ও লন্ডনের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, ব্রেক্সিটের ফলে যুক্তরাজ্যে অর্থনৈতিক মন্দার আভাস আছে। এটি ঘটলে বাংলাদেশের পণ্যের তৃতীয় প্রধান এই রপ্তানির গন্তব্যে বাণিজ্য ও প্রবাসী আয় কমার আশঙ্কা আছে। যুক্তরাজ্যের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা বিভিন্ন দেশে উন্নয়ন সহায়তা কমাতে যাচ্ছে।

এ নিয়ে জানতে চাইলে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সিনিয়র ফেলো মো. শহীদুল হক গতকাল শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ইইউর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাজনীতি, বাণিজ্য আর উন্নয়নে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার যুক্তরাজ্য। তাই পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জাতীয় স্বার্থ ঠিক রেখে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রক্ষার প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে।

দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, ব্রেক্সিটটা এমন এক সময় ঘটেছে, যে সময়টাতে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশের পথে এগোচ্ছে। তাই বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধরন পাল্টাতে পারে।

>

প্রায় ১১ মাসের একটি অন্তর্বর্তী সময় পাবে যুক্তরাজ্য। এ সময়ে আগের নিয়মে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা বিষয় পরিচালিত হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার পথে ইইউ থেকে বাংলাদেশ অগ্রাধিকারমূলক যে বাজার সুবিধা পায়, সেটা যুক্তরাজ্য থেকে পাবে কি না, সেই প্রশ্ন আছে। ২০২৩ সালের পর ইইউ বাংলাদেশকে আরও তিন বছর বাড়তি সময়ের জন্য এই সুবিধা দেবে। একই ধরনের সুবিধা যুক্তরাজ্যের কাছ থেকে পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রয়োজনে স্বল্পোন্নত অন্য দেশগুলোকে নিয়ে এখন থেকেই দর–কষাকষি শুরু করতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ব্রেক্সিটের সম্ভাব্য প্রভাবের পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বিশেষ করে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে রাজনৈতিক সম্পর্কটাকে বাংলাদেশ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে। রোহিঙ্গা সংকটের প্রসঙ্গ টেনে এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, ২০১৭ সালের আগস্টে রোহিঙ্গাদের ঢল নামার পর থেকেই জাতিসংঘ, ইইউসহ আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো অবস্থানে থেকেছে যুক্তরাজ্য। আবার ইইউতে বাংলাদেশের মানবাধিকার, সুশাসন ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের মতো বিষয়গুলো সামনে এনেছে যুক্তরাজ্য। সব মিলিয়ে এখন যুক্তরাজ্য নিজের স্বার্থ ঠিক রেখে বাংলাদেশের সঙ্গে কোন ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে, সেটাও দেখার আছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাঈদা মুনা তাসনীম গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, ব্রেক্সিটের পর প্রায় ১১ মাসের একটি অন্তর্বর্তী সময় পাবে যুক্তরাজ্য। এ সময়ে যুক্তরাজ্য আগের নিয়মে ব্যবসা–বাণিজ্যসহ নানা বিষয় পরিচালনা করবে। ভবিষ্যতে যাতে আমাদের ব্যবসা, বাণিজ্যসহ অন্য ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা অব্যাহত থাকে, তা নিয়ে মে মাসে দুই দেশের কৌশলগত সংলাপে আলোচনা হবে।