করোনাভাইরাস শনাক্তে স্থলবন্দরে সক্রিয় চিকিৎসা দল

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের শূন্যরেখা–সংলগ্ন এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল ডেস্কে যাত্রীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় থার্মোমিটার ও স্টেথোস্কোপ যন্ত্র দিয়েই পরীক্ষা করা হয়। গতকাল বিকেলে।  ছবি: প্রথম আলো
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া সীমান্তের শূন্যরেখা–সংলগ্ন এলাকায় স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল ডেস্কে যাত্রীদের স্বাস্থ্য বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এ সময় থার্মোমিটার ও স্টেথোস্কোপ যন্ত্র দিয়েই পরীক্ষা করা হয়। গতকাল বিকেলে। ছবি: প্রথম আলো

বিমানবন্দর ছাড়াও দেশের স্থলবন্দরগুলোয় করোনাভাইরাস শনাক্তে চিকিৎসা দল কাজ করছে। এসব সীমান্ত দিয়ে যাঁরা আসছেন, তাঁদের জ্বর ও কাশির পাশাপাশি অন্য কোনো উপসর্গ আছে কি না, তা দেখা হচ্ছে। গতকাল রোববার বন্দরগুলোয় কর্মরত চিকিৎসক ও তাঁদের সহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সন্দেহজনক কিছু তাঁদের চোখে পড়েনি।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা, লালমনিরহাটের বুড়িমারী, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া, চুয়াডাঙ্গার দর্শনা, যশোরের বেনাপোল ও সাতক্ষীরার ভোমরা এবং সিলেটের তিনটি স্থলবন্দরে হেলথ স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চলছে। কারও জ্বর, কাশি ও অন্যান্য উপসর্গ দেখা দিলে হাসপাতালের পৃথক কক্ষে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহের পর রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানে পাঠানোর প্রস্তুতিও রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধায় গত মঙ্গলবার চিকিৎসা দল কাজ শুরু করে। গতকাল বিকেল পর্যন্ত দলটি ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে আসা মোট ১ হাজার ২৫৪ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে। পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মো. ফজলুর রহমান বলেন, জেলার আধুনিক সদর হাসপাতালে ‘পৃথকীকরণ কক্ষ’ চালু করা হয়েছে। জ্বর ও কাশি নিয়ে কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করলে তাঁদের ওই কক্ষে রাখা হবে। পরে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিনিধিদল এসে নমুনা সংগ্রহ করবে। তবে এখনো এমন উপসর্গ নিয়ে কোনো রোগী বাংলাদেশে আসেননি।

লালমনিরহাটের বুড়িমারী থেকেও ভারত, নেপাল ও ভুটান থেকে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক যাত্রী বাংলাদেশে আসেন। গতকাল রোববার বুড়িমারী স্থলবন্দরের আন্তর্জাতিক অভিবাসনচৌকিতে (আইসিপি) গিয়ে দেখা গেছে, অভিবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের পাশেই উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা আইয়ুব আলী সরকারসহ দুই স্বাস্থ্যকর্মীর মুখে মাস্ক। যাত্রীদের জ্বর, মাথাব্যথা, কাশি, গায়ে ব্যথাসহ অন্য কোনো উপসর্গ আছে কি না, খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। জ্বর হলো কি না, তা থার্মোমিটার দিয়ে মেপে দেখা হচ্ছে।

এদিকে যশোরের বেনাপোলে ১৫ দিনে ১৭ হাজারের বেশি মানুষের পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেখানকার থার্মাল স্ক্যানার ঠিকমতো কাজ করছে না। স্ক্যানার ঠিক থাকলে জ্বরে ভোগা ব্যক্তির চেহারা মনিটরে ভেসে ওঠার কথা। সেটি হচ্ছে না। তাই কার তাপমাত্রা কত, তা বুঝে উঠতে সময় লাগছে। সিভিল সার্জন শেখ আবু শাহীন বলেন, ‘মনিটরটি মেরামতের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। কিন্তু এই মনিটর মেরামতের কারিগর বাংলাদেশে নেই। তাই তাৎক্ষণিকভাবে এটা মেরামত করা যাচ্ছে না বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

সাতক্ষীরা ভোমরায় স্যানিটারি ইন্সপেক্টর ও উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তার সমন্বয়ে পাঁচ সদস্যের চিকিৎসা দল ভোর ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কাজ করছে। সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন হুসাইন শাফায়াত জানান, গত ১০ দিনে ভোমরা সীমান্তে ৪৯৮ জন ভারত থেকে এসেছেন। কারও কারও সর্দি, কাশি ও গলাব্যথা ছিল। তবে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এই জেলায় সচেতনতা সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রচারপত্র বিলি করা হচ্ছে।

বেনাপোল স্থলবন্দরে সতর্কতা। মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা। শনিবার দুপুরে।  প্রথম আলো
বেনাপোল স্থলবন্দরে সতর্কতা। মাপা হচ্ছে শরীরের তাপমাত্রা। শনিবার দুপুরে। প্রথম আলো

চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় ২৭ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬ দিনে মোট ৪ হাজার ২৯২ জন যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছে চিকিৎসা দল। দুজন চিকিৎসা কর্মকর্তা (৩৯তম বিসিএসে যোগদানকারী এমবিবিএস চিকিৎসক), একজন উপসহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা ও একজন সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক এই দলে রয়েছেন। চিকিৎসা কর্মকর্তারা সকাল থেকে দুপুর এবং অন্যরা দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করছেন। তবে দায়িত্ব পালনকারী চিকিৎসা দলের পরনে নিরাপদ পোশাক দেখা যায়নি।

সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায় প্রথম আলোকে জানান, গতকাল রোববার সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত সিলেটে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে তা মোকাবিলায় সব ধরনের আগাম প্রস্তুতি নিয়ে রাখা হয়েছে। হাসপাতালে আট শয্যাবিশিষ্ট আইসোলেশন কর্নার চালু করা হয়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় চিকিৎসা দলের সদস্য উপজেলার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার ফোরকান আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা শুরুতেই যাত্রীদের ভ্রমণ ইতিহাস শুনছেন। তিন-চার মাসের মধ্যে কেউ চীন সফর করেছেন কি না, খোঁজ নিচ্ছেন। যদি চীনফেরত হয়ে থাকেন, তাহলে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। এখন পর্যন্ত দুজন চীনফেরত ব্যক্তি শনাক্ত হয়েছেন। তাঁরা সুস্থ আছেন।

সিলেটের সিভিল সার্জন প্রেমানন্দ মণ্ডল জেলার গোয়াইনঘাটের তামাবিল, বিয়ানীবাজারের শেওলা ও জকিগঞ্জে অস্থায়ী মেডিকেল ক্যাম্প বসানোর তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গত ২৭ জানুয়ারি এ কার্যক্রম শুরু হলেও সংক্রমণের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

(প্রতিবেদনের তথ্য দিয়েছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, সাতক্ষীরা, যশোর অফিস, প্রতিনিধি, সিলেট, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড়, ব্রাহ্মণবাড়িয়াপাটগ্রাম, লালমনিরহাট)