চার তরুণের উদ্যোগে পরিচ্ছন্ন রাস্তা

স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের পাশের আগাছা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। গত ২৭ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের গল্লাসঙ্গণে।  প্রথম আলো
স্বেচ্ছাশ্রমে সড়কের পাশের আগাছা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কার করছেন স্থানীয় ব্যক্তিরা। গত ২৭ জানুয়ারি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের গল্লাসঙ্গণে। প্রথম আলো

গ্রামীণ পাকা সড়কের দুই পাশে ঝোপঝাড়। কোথাও একদম সড়কের ওপর চলে এসেছে গাছ, লতাপাতা। এসবের কারণে সড়কের দুই পাশে কোনো জায়গা খালি নেই। মূল সড়ক দিয়েই চলাচল করতে হয় পথচারীদের। যানবাহন এলে পথচারীদের আর সরে দাঁড়ানোর জায়গা থাকে না। অন্যদিকে পথে পথে অনেক বাঁক। ঝোপঝাড়ের কারণে বাঁকের উল্টো দিকে কী আছে, দেখার সুযোগ নেই। এ রকম অবস্থায় পথচারী ও যানবাহনের চলাচল যেমন বিঘ্নিত হয়, তেমনি প্রায়ই ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটে।

এই পরিস্থিতিতে সড়কের দুই পাশকে উন্মুক্ত করতে এগিয়ে আসেন এলাকার চার তরুণ। তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রবাসী ও স্বেচ্ছাকর্মীরা। প্রায় দেড় মাস ধরে চলছে ঝোপঝাড় পরিষ্কারের অভিযান। ঘটনাটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার

নিজবাহাদুরপুর ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের।

গ্রামবাসী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে মুড়াউল-চান্দগ্রাম সড়ক, কালীবাড়ি বাজার-ইউনিয়ন অফিস সড়কসহ সাত-আটটি গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়ক গেছে। এই সড়কগুলো বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সড়কগুলো দিয়ে রাতদিন হাজারো পথচারী ও ছোট–বড় অসংখ্য যানবাহন চলাচল করে, কিন্তু সড়কের দুই পাশে ঘরবাড়ির সীমানাপ্রাচীর ও ঘন ঝোপঝাড়ের কারণে সড়কের পরিসর ওই পাকা অংশটুকু পর্যন্তই ছিল। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছিল। অন্যদিকে সড়কগুলোয় আছে ঘন ঘন বাঁক। ঝোপঝাড়ের কারণে বাঁকের সামনে কী আছে, তা দেখা যায় না। একসঙ্গে পাশাপাশি দুটি বড় গাড়ি চলাচল করতে পারে না। ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে চলা এ সড়কগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার।

এ অবস্থায় সড়কের পাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করার জন্য গল্লাসাঙ্গন গ্রামের চার তরুণ—তাহের খান, আজাদুর রহমান, আশরাফুল ইসলাম ও নাহিদ আহমদ এগিয়ে আসেন। তাঁদের সঙ্গে শামিল হন এলাকাবাসী। এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দা স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য রশিদ আহমদ। এ নিয়ে গ্রামে বৈঠক করা হয়। বৈঠকে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে গ্রহণ করা হয় কাজের পরিকল্পনা। যুক্ত হন এলাকার প্রবাসীরাও। প্রাথমিক পর্যায়ে ব্যক্তিগতভাবে কিছু আর্থিক সহযোগিতা করেন রশিদ। আর্থিক সহযোগিতা করেন প্রবাসীরা। এরপর গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর কাজ শুরু হলে এলাকার তরুণ, মুরব্বি, ইউপি সদস্যরা নেমে পড়েন কাজে। প্রতিদিন কাজ চলছে সড়কগুলোতে। এতে প্রায় ৫০ জন স্বেচ্ছাকর্মী অংশ নিচ্ছেন। নিয়মিত শ্রমিক আছেন ১০ থেকে ১২ জন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, সকাল হলেই কেউ দা, কেউ কোদাল, কেউ বাঁশ, ছোট গাছ ও ঝোপ কাটার যন্ত্র নিয়ে হাজির হচ্ছেন। ঝাঁপিয়ে পড়ছেন কাজে। চলছে আগাছা ও ঝোপঝাড় পরিষ্কারের কাজ। তরুণ স্বেচ্ছাকর্মীদের সঙ্গে শ্রমিকেরা টুকরিতে আগাছা ও মাটি ভরে অন্যত্র নিয়ে ফেলছেন। ইউপি সদস্য ও এলাকার মুরব্বিরা কাজ তদারক করছেন। এরই মধ্যে ১২ কিলোমিটারের মতো পরিষ্কার করা হয়ে গেছে।

রশিদ আহমদ বলেন, ঝোপঝাড় ও বাঁকের কারণে ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চলাচল করত। এতে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটত। এখন রাস্তা বড় হয়েছে। ঝোপ পরিষ্কার করায় বাঁকের অপর দিক দেখা যাচ্ছে। তিনি জানান, সড়কগুলোর দুই পাশ পরিষ্কার করার পর ওয়ার্ডের প্রবেশমুখে চারটি তোরণ নির্মাণ, দিকনির্দেশক চিহ্ন ও বাতি স্থাপনের পরিকল্পনা আছে। এসব কাজে পাঁচ লাখ টাকার মতো খরচ হবে।

উদ্যোক্তাদের একজন আজাদুর রহমান বলেন, ‘সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করছি। কেউ তাঁদের বাড়ির সীমানা কেটে দিচ্ছেন। কিছু এলাকায় জলাভূমি আছে, রাস্তা ভেঙে পড়েছে, সেখানে মাটি ভরাট করছি। এ কাজে আমরা সবাই এক। এরই মধ্যে ১২ কিলোমিটার পরিষ্কার করা শেষ।’

এদিকে স্বেচ্ছাশ্রমের এ কার্যক্রম দেখতে গতকাল রোববার দুপুরে গল্লাসাঙ্গন এলাকা পরিদর্শন করেছেন বড়লেখা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সোয়েব আহমদ, ভাইস চেয়ারম্যান তাজ উদ্দিন, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. ময়নুল হক প্রমুখ। এ সময় উপজেলা চেয়ারম্যান স্বেচ্ছাকর্মীদের দুপুরের খাবারের আয়োজন করেন।