নড়বড়ে সাঁকোটিই ভরসা

বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই রাংসা নদী পার হন পাঁচ গ্রামের মানুষ। সম্প্রিত তারাকান্দার গোয়ালকান্দি গ্রামে। ছবি: আনোয়ার হোসেন
বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে এভাবেই রাংসা নদী পার হন পাঁচ গ্রামের মানুষ। সম্প্রিত তারাকান্দার গোয়ালকান্দি গ্রামে। ছবি: আনোয়ার হোসেন

ময়মনসিংহের তারাকান্দার গোয়ালকান্দি গ্রামে রাংসা নদীর ওপর সাঁকোটি নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। এই সাঁকো দিয়েই দৈনিক পারাপার হচ্ছে ছয় গ্রামের মানুষ। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন গ্রামবাসী।

রাংসা নদীর ওপর সাঁকোটির এক পাড়ে গোয়ালকান্দি ও অপর পাড়ে হিরারকান্দা গ্রাম। দুই গ্রামের মানুষ ছাড়াও দর্জিগাতি, নন্দীপুর, নারায়ণপুর ও বনপলাশিয়া গ্রামের মানুষ এই সাঁকো দিয়ে পারাপার হয়। নদীটির ওপর একটি সেতু নির্মাণের দাবি প্রায় দুই যুগের। কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। এমন অবস্থায় সেতু না হওয়ায় নদী পারাপারের জন্য এই সাঁকোই ভরসা। সাঁকোটি নিয়মিত সংস্কার না হওয়ায় বর্তমানে এটি ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

গোয়ালকান্দি ও হিরারকান্দা গ্রামের মানুষের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা সাঁকোর বদলে সেতু নির্মাণের আশ্বাস দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে আর সেতু নির্মাণ হয় না। ২০০৩ সালে সেতু নির্মাণের কাজও শুরু হয়েছিল। সে সময় সেতুর ইট-সিমেন্টের পিলার নির্মাণ হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর সেতু নির্মাণ হয়নি। পরে ইট-সিমেন্টের পিলারের ওপর রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে সরকারি অর্থায়নে সাঁকোটির সংস্কার করা হয়। তবে দীর্ঘদিন ধরে সেই সংস্কারও বন্ধ আছে।

গ্রামবাসী জানান, সাঁকোটি পার হয়ে ছয় গ্রামের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করে। গ্রামের মানুষ নিজেদের উৎপাদিত সবজিসহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য বাজারে সরবরাহে সাঁকোটি ব্যবহার করে। মানুষ কোনো রকমে হেঁটে পার হতে পারলেও মালবোঝাই ভ্যান ও মোটরসাইকেল নিয়ে পার হওয়া কঠিন।

গোয়ালকান্দি গ্রামের আবু তাহের বলেন, সাঁকোটির খুব কাছে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা। এই দুটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সবাই শিশু। সাঁকো থেকে নদীর গভীরতা অনেক। এ অবস্থায় শিশুরা খুব বেশি ঝুঁকি নিয়ে সাঁকোটি পার হয়।

সাঁকোটি সুপারিগাছ ও বাঁশ দিয়ে নির্মিত। আনুমানিক ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যের সাঁকোটির পাটাতনে থাকা বাঁশ ও সুপারিগাছের অংশ নড়বড়ে। বাঁশ সরে গিয়ে বড় বড় ফাঁকার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাঁকোটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, হিরারকান্দা গ্রামের কৃষক আল আমিন একটি ভ্যানে করে পাঁচ বস্তা ধান বিক্রির জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। সাঁকোর এক পাড়ে এসে তিনি বস্তাগুলো ভ্যান থেকে নামিয়ে মাথায় করে পার হচ্ছেন। অপর পাড়ে গিয়ে আবার বস্তাগুলো ভ্যানে তুলছেন। আল আমিন বলেন, শুধু তিনিই নন; গ্রামের সব কৃষকই এ রকম কষ্ট করে নিজেদের ধান বিক্রি করতে নিয়ে যান। সাঁকোর বদলে একটি সেতু হলে এই দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

গোয়ালকান্দি গ্রামের তাজুল ইসলাম বলেন, গত ২২ বছরের বেশি সময় ধরে গ্রামের মানুষ একটি সেতুর স্বপ্ন দেখছে। কিন্তু সেতু আর হচ্ছে না।

এ বিষয়ে রামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মদন চন্দ্র সিংহ রায় বলেন, গোয়ালকান্দি গ্রামে রাংসা নদীর ওপর সেতু নির্মাণের প্রক্রিয়া অনেক এগিয়ে গেছে। তবে সেতু নির্মাণের আগে সাঁকোটি সংস্কার করা হবে।