দেলোয়ারের বাগানে বাহারি ক্যাপসিকাম

গাছে ঝুলছে ক্যাপসিকাম। গত শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
গাছে ঝুলছে ক্যাপসিকাম। গত শুক্রবার গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

গাজীপুরের শ্রীপুরে জারবেরা ফুল চাষে সফলতা পান দেলোয়ার হোসেন। এবার উপজেলার কেওয়া পূর্বখণ্ড গ্রামে ক্যাপসিকাম চাষ করে তিনি চমক দেখিয়েছেন। ফুলের মৌসুম শেষ হওয়ার পর নিজ বাড়ির আঙিনায় শুরু করেন উচ্চফলনশীল ক্যাপসিকাম চাষ। প্রথম বছরেই সফলতা পেয়েছিলেন। এবার ব্যাপকভাবে ক্যাপসিকাম চাষের উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।

গত শুক্রবার দেলোয়ারের ক্যাপসিকামের বাগান ঘুরে দেখা যায়, একটি বিশেষায়িত শেডের নিচে শত শত গাছে লাল, হলুদ ও সবুজ রঙের ক্যাপসিকাম ঝুলে আছে। একসময় এই শেডের নিচে তিনি জারবেরা ফুলের চাষ করতেন। এখন উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষ করছেন। পরিচ্ছন্ন বাগানজুড়েই পাতার ফাঁকে উঁকি দিচ্ছে ক্যাপসিকাম। শেডের ভেতরে কাজ করছেন কয়েকজন কর্মী। দেলোয়ার নিজেও গাছের পরিচর্যায় কাজ করছেন। আবাদ করা ক্যাপসিকাম বাগানের পাশে তৈরি করা হচ্ছে আরও কয়েকটি শেড। সেখানে ব্যাপক আকারে ক্যাপসিকাম চাষের প্রস্তুতি চলছে। বাগানের ভেতর অসংখ্য ছোট ছোট কালো রঙের পানির নল। সেগুলো থেকে নির্দিষ্ট সময় অন্তর স্বয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছড়িয়ে পড়ছে গাছে গাছে। কর্মীরা কেউ কেউ ঝুড়ি নিয়ে বাগান ঘুরে পরিণত ক্যাপসিকাম তুলে রাখছেন।

বাগানে দাঁড়িয়ে কথা হয় ক্যাপসিকাম–চাষি দেলোয়ারের সঙ্গে। তিনি জানান ক্যাপসিকাম চাষে যুক্ত হওয়ার গল্প। তাঁর বাগানের নাম মৌমিতা ফ্লাওয়ারস। তিনি আগে থেকেই ফুল চাষ করেন। ফুল চাষে যুক্ত থাকার কারণে তিনি বিভিন্ন দেশ ঘুরেছেন। সর্বশেষ ভারতের কয়েকটি স্থানে তিনি ফুল চাষ দেখতে গিয়ে ভিন্ন একটি বিষয় জানলেন। ফুল চাষ শেষ হওয়ার পর তাঁরা সেখানে অন্যান্য সবজির আবাদ করছেন। পরবর্তী ফুল চাষের মৌসুম আসার আগে বাড়তি হিসেবে এই সবজিতে বড় অঙ্কের ব্যবসা করার বিষয়টি তাঁকে আকর্ষণ করে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি নেদারল্যান্ডস থেকে কিছু উন্নত জাতের ক্যাপসিকাম–বীজ এনে নিজের ফুলের শেডে শুরু করেন চাষাবাদ।

দেলোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ফুল চাষের একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে। এই সময় শেষে ভারতীয়রা জমিতে রিপ্ল্যান্টিং করে। সেখানে দেখলাম, কেউ ক্যাপসিকাম লাগাচ্ছে, কেউ লেটুস–পাতা চাষ করছে। আবার কেউ কেউ স্ট্রবেরি চাষ করছে। সেখানে কালার ক্যাপসিকাম দেখে আগ্রহী হলাম। এগুলো চাষপদ্ধতিও একদম জারবেরা চাষের মতো। জারবেরা ফুল গাছ যেভাবে চাষ করতে হয়, যতটুকু দূরত্ব মেনে লাগাতে হয়, ক্যাপসিকামও একই পদ্ধতিতে চাষ করতে হয়। এটি দেখে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, ক্যাপসিকাম চাষ করব। পরবর্তী সময়ে নেদারল্যান্ডস থেকে কিছু ক্যাপসিকাম–বীজ নিয়ে আসি। এগুলো উচ্চফলনশীল জাতের। নিজের জমিতে চাষ শুরু করি। সফলতা পাই।’

দেলোয়ার বলেন, উচ্চফলনশীল জাতের ক্যাপসিকাম চাষে এক একর জমিতে ১২ হাজার গাছের প্রয়োজন হয়। এক কেজিতে তিনটা থেকে সাড়ে তিনটা ক্যাপসিকাম ধরে। কিন্তু অন্য জাতেরগুলো এক কেজিতে ছয় থেকে আটটা ধরে। তিনি বলেন, ‘আমাদের এসব ক্যাপসিকামে ওয়াটার সয়েলেবল ফার্টিলাইজার দরকার। কিন্তু এখনো এই ফার্টিলাইজারের ব্যবস্থা করতে পারিনি। তবু যথেষ্ট ভালো ফলন পাচ্ছি। একটি গাছ থেকে তিন থেকে চার কেজির মতো ফলন পাওয়া যায়। এপ্রিল, মে, জুন পর্যন্ত গাছ থেকে ক্যাপসিকাম পাওয়া যায়। একটি গাছ ছয় থেকে আট ফুট লম্বা হয়। এই জাতের ক্যাপসিকাম বর্তমানে বাজারে ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যায়। এক গাছে তিন কেজি ক্যাপসিকাম ধরলে তার দাম পড়ে ১ হাজার ২০০ টাকা। একটি গাছের দাম ১০ থেকে ১২ টাকা। অন্যান্য খরচ মিলিয়ে একটি গাছের পেছনে খরচ হয় ১৫০ টাকার মতো। ভালো ফলন পেলে লাভ অনেক বেশি। তাঁর বাগানে এক হাজার গাছ আছে।

দেলোয়ার বলেন, কৃষির বাণিজ্যিকীকরণ করতে সরকার চেষ্টা চালাচ্ছে। এ লক্ষ্য সফল করতে হলে এ ধরনের উচ্চফলনশীল ফসল চাষ করতে হবে। ক্যাপসিকাম, লেটুস, স্ট্রবেরির মতো ফসল চাষ করার উদ্যোগ নিলে কৃষির বাণিজ্যিকীকরণের উদ্যোগ সফল করা সহজ হবে। ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে ক্যাপসিকাম চাষ করার ইচ্ছা তাঁর।

শ্রীপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এ এস এম মূয়ীদুল হাসান বলেন, ‘দেলোয়ারের বাগানে উচ্চফলনশীল ক্যাপসিকামের খুব ভালো ফলন হয়েছে। তিনি কৃষিকাজে স্বীকৃতিস্বরূপ বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার পেয়েছেন। এবার তিনি ক্যাপসিকাম চাষে সফলতা পেয়েছেন। আশা করি, তাঁর হাত ধরে এ এলাকায় ক্যাপসিকাম চাষে অনেকেই উদ্বুদ্ধ হবেন।’