ক্যাসিনো-কাণ্ড: গৃহায়ণের দুই প্রকৌশলীকে তলব

অনিয়মের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের দুই প্রকৌশলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে গ্রেপ্তার ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীমসহ (জি কে শামীম) অন্যদের ঠিকাদারি কাজে অনৈতিক সহযোগিতার অভিযোগ আছে। আজ সোমবার দুদকের পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত চিঠিতে তাঁদের তলব করা হয়।

প্রথম আলোকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদকের মুখপাত্র প্রণব কুমার ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বরখাস্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মুনিফ আহমেদ ও সাময়িক বরখাস্ত উপসহকারী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান পলাশকে তলব করা হয়েছে। তাঁদের ১২ ফেব্রুয়ারি সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়েছে।

নোটিশে বলা হয়, ঠিকাদার জি কে শামীমসহ অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ নিয়ে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন। নির্দিষ্ট দিনে দুদকে হাজির হতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বক্তব্য নেই বলে গণ্য হবে বলেও চিঠিতে বলা হয়।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কৃত) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন কথিত যুবলীগ নেতা ও ঠিকাদার জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়। পরে আরও দুজনকে দলে যুক্ত করা হয়। দলের অন্য সদস্যরা হলেন উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম, মো. সালাহউদ্দিন, সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম, আতাউর রহমান ও মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে ইতিমধ্যে উনিশটি মামলা করে দুদক দল।

ঠিকাদার জি কে শামীমের তাঁর সঙ্গে যোগসাজশের মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গণপূর্ত অধিদপ্তর ও জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অনুসন্ধান করছে দুদক। তাঁদের মধ্যে সাবেক তিন প্রধান প্রকৌশলীর পাশাপাশি বেশ কয়েকজন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আছেন।

অভিযোগ অনুসন্ধানের অংশ হিসেবে দুদক ইতিমধ্যে ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। বাকিদেরও শিগগির জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে।