পোস্টার অপসারণ হচ্ছে, পলিথিনের কী হবে?

সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পোস্টার অপসারণ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তেজগাঁও রেলগেট এলাকা, ২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার
সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পোস্টার অপসারণ করছেন পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা। তেজগাঁও রেলগেট এলাকা, ২ ফেব্রুয়ারি। ছবি: দীপু মালাকার

দুই সিটির নির্বাচন শেষে নগরজুড়ে লাগানো প্রার্থীদের কাগজের সাধারণ ও ক্ষতিকর পলিথিনে মোড়ানো বিশেষ ধরনের পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু করেছে দুই সিটি করপোরেশন। কিন্তু পুনর্ব্যবহারযোগ্য কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সংগৃহীত পোস্টার ও পলিথিন শেষ পর্যন্ত ভাগাড়েই ফেলা হবে জানিয়েছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ। আর উত্তর সিটির নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম, পোস্টারের পলিথিন পুনর্ব্যবহারযোগ্য করার কথা বললেও তা কীভাবে করা হবে, সেটা স্পষ্ট করেননি।

গত একাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও পলিথিনে মোড়ানো কিছু পোস্টার দেখা গিয়েছিল। তবে এবার সিটি ভোটে প্রায় সব প্রার্থীই এ ধরনের বিপুল পরিমাণ পোস্টার ব্যবহার করেন। পরিবেশবিষয়ক বেসরকারি সংস্থা এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (এসডো) গবেষণার তথ্য অনুসারে, নির্বাচনী প্রচারণার প্রথম ১২ দিনেই পোস্টারসহ অন্য প্রচারসামগ্রী থেকে আড়াই হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য উৎপন্ন হয়। এ ক্ষেত্রে নাগরিক ও পরিবেশকর্মীরা প্রার্থীদের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আর পোস্টারে পলিথিনের ব্যবহার বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরকেও কোনো ভূমিকা নিতে দেখা যায়নি।

১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের পরদিন থেকেই দুই সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ঢাকার প্রধান সড়কসহ অলিগলি ও পাড়া-মহল্লায় ঝোলানো পোস্টার অপসারণের কাজ শুরু হয়।

গত রোববার বনানীর নির্বাচনী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে উত্তরের নবনির্বাচিত মেয়র আতিকুল ইসলাম তিন দিনের মধ্যে সব পোস্টার সরিয়ে ফেলার ঘোষণা দেন। এমনকি পোস্টার অপসারণের কাজেও তাঁকে হাত লাগাতে দেখা যায়। তবে পোস্টার না পোড়ানোর আহ্বান জানিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটা করবেন না। এটা রিসাইকেল করা হবে। পলিথিন ও কাগজ আলাদা করা হবে।’ তবে ঠিক কী উপায়ে পোস্টার থেকে আলাদা করা পলিথিন পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা হবে, তা জানার জন্য গতকাল সোমবার আতিকুল ইসলামের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।

আর এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডিএনসিসির প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এম মঞ্জুর হোসেনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এদিকে রোববার গ্রিন রোডের কার্যালয়ে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সোমবারের মধ্যে পোস্টারসহ সব ধরনের প্রচারসামগ্রী অপসারণের জন্য সব কাউন্সিলর ও নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, লেমিনেটেড পোস্টারের প্লাস্টিক বর্জ্য ধ্বংসে এখন যে উপায় আছে, তা-ই ব্যবহার করা হবে। তবে দায়িত্ব নেওয়ার পর উন্নত বিশ্বের মতো প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে আধুনিক পদ্ধতি নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে গতকাল দক্ষিণ সিটির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপদেষ্টা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জানান, পোস্টার ও প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহের জন্য প্রতি ওয়ার্ডে তিন-চারটি করে দল কাজ করছে। এর মধ্যে বেশির ভাগ এলাকা থেকে পোস্টার সরিয়ে ফেলা হয়েছে। সবশেষে এগুলো মাতুয়াইলের ভাগাড়ে ফেলা হবে। সে ক্ষেত্রে প্লাস্টিক বর্জ্যের কী হবে, জানতে চাইলে এই উপদেষ্টা প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্লাস্টিক বর্জ্য রিসাইকেলের জন্য আমাদের আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। এ ক্ষেত্রে অন্য বর্জ্যের মতো এগুলোও ডাম্পিংয়ে ফেলা হবে।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, বিষয়টা শেষ পর্যন্ত এমন হওয়ারই আশঙ্কা ছিল। প্রার্থীরা দায়িত্বশীল কোনো আচরণ করেননি। কেবল প্লাস্টিক না, যে কাগজগুলো ভাগাড়ে ফেলা হবে, তাতে থাকা কালিও তো পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এ ক্ষেত্রে প্রথাগত প্রচারণা পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে এসে রাজনৈতিক দলসহ অন্যদের বিকল্প কিছু ভাবা উচিত।