টেস্টে ফেল করেও যেভাবে এসএসসি পরীক্ষা দিল ২ ছাত্রী

ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড
ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড

ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে টেস্ট পরীক্ষায় অকৃতকার্য দুই পরীক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরণ করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের খবরে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে কৌশলের আশ্রয় নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেওয়ায় বিভিন্ন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

এ নিয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড ও বিদ্যালয়সংশ্লিষ্ট সবাই হতবাক। পরীক্ষা চলাকালে বিভিন্ন আলোচনা–সমালোচনা হলেও সেই দুই ছাত্রী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে পরীক্ষা দিয়েই হল ত্যাগ করেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য দুজন পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র গত রোববার গৌরীপুর রাজেন্দ্র কিশোর সরকারি উচ্চবিদ্যালয় পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে। তাৎক্ষণিক কেন্দ্রসচিব মোছা. লুৎফা খাতুন ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নরোত্তম চন্দ্র রায়কে মুঠোফোনে বিষয়টি জানান।

নরোত্তম চন্দ্র রায় বলেন, খবর পেয়ে তিনি সেদিনই এ বিষয়ে ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত বক্তব্যে আপত্তি জানান। যেহেতু দুজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়েছে, ফরম পূরণ করেনি এবং সোনালি সেবার মাধ্যমে টাকাও জমা দেয়নি—এরপরও কীভাবে তাদের প্রবেশপত্র অনুমোদন হয়েছে, সে বিষয়ে তিনি হতবাক। পরে দুই শিক্ষার্থীকে তলব করা হলে তারা জানায়, ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডের কর্মচারী মহসিন আলম ওরফে রনি তাদের ফরম পূরণ করতে সহায়তা করেছেন।

এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার আগে বিদ্যালয়টির চূড়ান্ত পরীক্ষায় মোট ১৪ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছিল। তাই তাদের ফরম পূরণ করতে দেয়নি বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপরও অন্য উপায়ে এই দুজন ফরম পূরণ করে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করে পরীক্ষায় অংশ নেয়। এ ঘটনায় অকৃতকার্য ১৪ জনের মধ্যে অপর ১২ শিক্ষার্থী গতকাল সকালে বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার দাবিতে প্রধান শিক্ষকের কার্যালয়ের সামনে হট্টগোল করে।

ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও ডৌহাখলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহীদুল হক জানান, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা প্রধান শিক্ষকের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়ারও হুমকি দিচ্ছে। অকৃতকার্য দুজনকে পরীক্ষা দেওয়ার সঙ্গে জড়িত বোর্ডের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সুষ্ঠু তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিদ্যালয়ের ৩৮ জন এসএসসি পরীক্ষার্থী তাদের প্রবেশপত্র পরীক্ষার এক দিন আগে অর্থাৎ গত রোববার হাতে পায়। কিন্তু বোর্ডের কতিপয় কর্মচারী বিদ্যালয়ের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে অকৃততার্য দুই পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণ ও প্রবেশপত্র দিতে গিয়ে বিদ্যালয়ের ৩৮ জন পরীক্ষার্থীর ডেটা মুছে ফেলেন। এতে ভোগান্তিতে পড়েন এসব পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকেরা।

নিতাই চন্দ্র নামের এক অভিভাবক অভিযোগ করেন, যাঁরা অনৈতিক কাজের সঙ্গে জড়িত, তাঁরাই কৌশলে দুই শিক্ষার্থীকে প্রবেশপত্র দিতে গিয়ে অন্য পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র দেওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতার সৃষ্টি করেছেন।

অভিভাবক তোফাজ্জল হোসেনের দাবি, ময়মনসিংহ বোর্ডের কতিপয় কর্মচারীর ভুলের কারণে তাঁর সন্তানের লেখাপড়া বিঘ্ন হয়েছে। তাঁদের দিন কেটেছে হতাশায়, সন্তানেরা দিনভর কেঁদেছে।

ডৌহাখলা উচ্চবিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির মোট ২৫৯ জন শিক্ষার্থী ছিল। তাদের মধ্যে চূড়ান্ত পরীক্ষায় কৃতকার্য হয় ২৪৫ জন। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এসব শিক্ষার্থীর যথানিয়মে ফরম পূরণ সম্পন্ন করে। তবে গত ২৩ জানুয়ারি বোর্ড থেকে প্রবেশপত্র সংগ্রহ করার পর দেখা যায়, ৩৮ জন নিয়মিত পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র আসেনি। এরপর ৩৮ জনের প্রবেশপত্রের জন্য বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সহযোগিতায় শিক্ষক ও অভিভাবকেরা শিক্ষা বোর্ডে কয়েকবার যোগাযোগ করে গত শনিবার ৩১ জনের ও রোববার অবশিষ্ট ৭ জনের প্রবেশপত্র সংগ্রহ করেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেঁজুতি ধর বলেন, বোর্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। যেহেতু দুই শিক্ষার্থীর নামে প্রবেশপত্র ইস্যু হয়েছে, তাই তাদের পরীক্ষা দিতে কোনো বাধা নেই।

শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান গাজী হাসান কামালের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হচ্ছে এবং বোর্ডের কোনো কর্মচারী জড়িত আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কেউ জড়িত থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।