জীবনাচরণ বদলে এক-তৃতীয়াংশ ক্যানসার রোধ সম্ভব: অধ্যাপক জাফর মাসুদ

বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাফর মোহাম্মদ মাসুদ। ছবি: অধ্যাপক জাফর মোহাম্মদ মাসুদের ফেসবুক থেকে
বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলোজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাফর মোহাম্মদ মাসুদ। ছবি: অধ্যাপক জাফর মোহাম্মদ মাসুদের ফেসবুক থেকে
>

প্রতিবছর ৮ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বে ক্যানসার দিবস পালিত হয়। দিবসটির মূল প্রতিপাদ্য ক্যানসার সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি এবং এর প্রতিকারে করণীয় সম্পর্কে ধারণা দেওয়া।

কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশে ক্যানসারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। হঠাৎ করে ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা, এর চিকিৎসা ও গবেষণায় অর্জিত সাফল্য এবং করণীয় কী কী, তা নিয়ে সম্প্রতি প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকোলোজি (ক্যানসার বিজ্ঞান) বিভাগের প্রধান অধ্যাপক জাফর মোহাম্মদ মাসুদসাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রথম আলো ইংরেজি অনলাইন বিভাগের প্রধান আয়েশা কবির

প্রথম আলো: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশে ক্যানসারের প্রবণতা বেশ বেড়ে গেছে। এর কারণ কী?

জাফর মাসুদ: সাম্প্রতিক সময়ে ক্যানসার শুধু বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বেই বেড়েছে। দেশে প্রথমত, গত কয়েক বছরে ক্যানসার-আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। দ্বিতীয়ত, আগের তুলনায় রোগীরা এখন অনেক বেশি সচেতন। তৃতীয়ত, বিগত পাঁচ-দশ বছরের তুলনায় দেশে এখন ক্যানসার নির্ণয়ের প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা অনেক বেশি।

প্রথম আলো: ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট কোনো কারণ রয়েছে কী?

জাফর মাসুদ: ক্যানসারের একদম নির্দিষ্ট কিছু সাধারণ কারণ রয়েছে এবং এর সব কটি বাংলাদেশে বিদ্যমান। একজন ব্যক্তি সাধারণত দুই ভাবে ক্যানসার আক্রান্ত হতে পারেন। বংশগত, অর্থাৎ, কোনো ব্যক্তির বংশে মা-বাবা বা অন্য কারও ক্যানসার থাকলে ওই ব্যক্তির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আরেকটি কারণ হলো কার্সিনোজেন বা ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান।

ক্যানসার সৃষ্টিকারী এসব উপাদানের মধ্যে শহর অঞ্চলের বায়ুদূষণ অন্যতম। ঢাকা বিশ্বের অন্যতম বায়ুদূষণের শহর। আমরা যারা এই শহরের বাসিন্দা, তারা সবাই কোনো না কোনোভাবে এই বায়ুদূষণের শিকার। আমরা সবাই দিনের একটা বড় অংশ ঘরের বাইরে থাকি। রাস্তার যানজটে বসে থাকি ঘণ্টার পর ঘণ্টা। যতক্ষণ আমরা রাস্তায় থাকি, এই দূষিত বাতাস আমাদের শরীরে ঢোকে। ক্যানসারের অন্যতম কারণগুলোর মধ্যে এটি একটি।

দূষণের আরেকটি মারাত্মক উৎস পানি। পানিতে অতিরিক্ত মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্থিতির কারণে মানুষের শরীরে আরসেনিকসিস হয়, যা থেকে ফুসফুস, মূত্রাশয়, কিডনি এবং ত্বকের ক্যানসার হতে পারে।

দেশে আর্সেনিকের পরীক্ষা আর হয় না বললেই চলে। অথচ গত কয়েক বছরে আমরা অনেক আর্সেনিকসৃষ্ট ক্যানসারে আক্রান্ত রোগী পেয়েছি।

আরেকটি বড় কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে আমরা ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতন নই। আপনারা খেয়াল করে থাকবেন, এখন বাংলাদেশে বয়স্কদের তুলনায় তরুণেরা ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। যেসব ক্যানসার ৫০-৬০ বছর বয়সের পরে হওয়ার কথা, তা ৩০ বছরের একজন মানুষের হতে দেখা যাচ্ছে। এর একটি বড় কারণ তরুণদের খাদ্যাভ্যাস। বেশির ভাগ তরুণেরই ফাস্ট ফুডের প্রতি আসক্তি রয়েছে। ফাস্ট ফুডে নাইট্রেটের পরিমাণ বেশি থাকে। ফাস্ট ফুড বানাতে ব্যবহৃত হয় সংরক্ষিত মাংস বা বেশি রান্না করা মাংস। এসব উপাদানে তৈরি বার্গার, হটডগ বা ক্যানে সংরক্ষিত নানান উপাদানে অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যানসার সৃষ্টিকারী নাইট্রেট থাকে, যা পরে নাইট্রাস ইউরিয়ায় পরিবর্তিত হয়। এর থেকে মলাশয় ও মলদ্বারের ক্যানসার হয়। তরুণদের মধ্যে এই দুই ধরনের ক্যানসারের প্রবণতা অনেক বেশি।

ক্যানসারের আরেকটি বড় কারণ আমাদের জীবনযাপনের ধরন। কেউই ক্যানসার প্রতিরোধক কোনো খাবার খায় না। একদিকে ক্যানসার প্রতিরোধ করে এমন খাবার না খাওয়া, অন্যদিকে ক্যানসার সৃষ্টি করতে পারে এমন খাবার খাওয়া ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়। আঁশযুক্ত এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট খাবারের প্রধান উৎস ফল। বাজারে গেলাম আর এক প্রকারের ফল কিনে বাড়ি ফিরলাম, এমন নয়। সব ফলই আলাদা আলাদা কাজ করে শরীরে। মানুষের মধ্যে এ নিয়ে সচেতনতার ঘাটতি রয়েছে।

অনেকে মনে করেন, আমের সময়ে দিনে চার-পাঁচটি আম খেলেন, ব্যস হয়ে গেল। ব্যাপারটা আসলে সে রকম না। দিনে অন্তত চারবার চার ধরনের ফল অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত। ক্যানসার প্রতিরোধে ফল খাওয়ার ডায়েটটা এ রকম, যেটা আমাদের দেশে একেবারেই প্রচলিত নয়।

আমাদের শরীরের জন্য আঁশ অত্যন্ত জরুরি উপাদান। আঁশযুক্ত খাবারের মধ্যে রয়েছে লাল আটা, তাজা শাকসবজিসহ আরও অনেক খাবার। আমাদের দেশে নতুন এক ভয়ের আমদানি হয়েছে বেশ কিছু বছর ধরে। ফরমালিন, কার্বাইড বা অনেক ধরনের রাসায়নিকের ভয়। তাজা সবজি বা ফলে এসব রাসায়নিক উপাদান রয়েছে বলে অনেকেই এসব খাবার খেতে চান না। তাহলে শরীরে ক্যানসার প্রতিরোধ হবে কীভাবে?

আবার শারীরিক ব্যায়ামের দিকটাও দেখুন। একজন সুস্থ সবল মানুষের সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন সহনীয় গতিতে দৈনিক ৪০ মিনিট হাঁটা প্রয়োজন। এখানে অবশ্য অন্য ঝামেলাও রয়েছে। মেয়েদের বেলায় নিরাপত্তার প্রশ্ন থাকে। আবার ঘর থেকে হাঁটতে বেরিয়ে আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে বিষাক্ত বাতাস গ্রহণ করতে হচ্ছে। তাই অনেকেই হাঁটতে বেরোতে চান না। কিন্তু দৈনিক ৪০ মিনিটের হাঁটা আমাদের কয়েক ধরনের ক্যানসার থেকে বাঁচায়, বিশেষত মেয়েদের স্তন ক্যানসার, মলাশয় এবং পাকস্থলীর ক্যানসার।

শুধু দৈনন্দিন জীবনাচরণ বদলে ফেললে এক-তৃতীয়াংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাকি দুই ভাগের এক ভাগ নিরাময়যোগ্য এবং আরেক ভাগ দুরারোগ্য। সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান তা-ই বলে।

প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসারকেও আমরা হারাতে পারছি না, তার কারণ আমাদের জীবনাচরণ। একদিকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান আছে এমন খাবার খাচ্ছি, অন্যদিকে ক্যানসার প্রতিরোধক খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকছি, ব্যায়াম করছি না।

পর্যাপ্ত পানি পান করাও ক্যানসার রোধে কার্যকর। একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করা উচিত।

প্রথম আলো: সরকারি বা বেসরকারি উদ্যোগে ক্যানসার বিষয়ে কোনো সচেতনতামূলক প্রচার আছে কি?

জাফর মাসুদ: যেটুকু রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপর্যাপ্ত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে বেশ কিছু উদ্যোগ রয়েছে। ব্যক্তিবিশেষ, এনজিও বা চিকিৎসকদের কেউ কেউ এ ধরনের সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়েছেন। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, ক্যানসার একটা বিপর্যয়ের নাম। বিশ্ব ক্যানসার দিবসে হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দু-একটা অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়। অথচ এসব প্রচার নিয়মিত এবং ব্যাপক পরিসরে হওয়া জরুরি।

স্কুল বা কলেজ থেকেই সবার মধ্যে ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে তোলা দরকার। নারীদের ক্ষেত্রে সাধারণত ৪০ বছরে স্তন ক্যানসার পাওয়া যেত। এখন ২৫-৩০ বছরেই স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকে।

ক্যানসারের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রকার হলো মলাশয়ের ক্যানসার। মোট ক্যানসার আক্রান্তের ৩০-৪০ শতাংশ রোগীই মলাশয় বা মলদ্বারের ক্যানসারে আক্রান্ত, যাঁদের বেশি ভাগের বয়স ৪০-এর নিচে। তাই স্কুল, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এই ধরনের প্রচার চালাতে হবে।

তারপর আছে জরায়ুর ক্যানসার। ৭০ শতাংশের বেশি জরায়ুর ক্যানসার শুধু প্রতিষেধক টিকা দিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত প্রচারের অভাবে অনেকেই এই টিকা সম্পর্কে জানতেই পারেন না। জনসচেতনতার কোনো বালাই নেই। অথচ স্তন ক্যানসারের পরই জরায়ুর ক্যানসার নারীদের জন্য অন্যতম ভয়াবহ ক্যানসার হিসেবে গণ্য হয়।

আমি প্রায়ই আমার রোগীদের ক্যানসারের প্রাথমিক উপসর্গসংবলিত লিফলেট দিই। শুধু রোগীর জন্য নয়, চিকিৎসকদের জন্যও এটা জরুরি। আমাদের কাছে অনেক সময় কিছু রোগী আসেন অসুস্থতার একদম শেষ পর্যায়ে। এর কারণ সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব এবং চিকিৎসক তথা অনকোলজিস্টদের সচেতনতার অভাব। শুধু সচেতন থাকলেই চিকিৎসকেরা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যানসার শনাক্ত করতে পারেন।

প্রথম আলো: চিকিৎসা ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি সত্ত্বেও দেশের মানুষ ক্যানসার বা বড় কোনো অসুখে দেশের বাইরে যান চিকিৎসা নিতে। বিশেষ করে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য। এর কারণ কী?

জাফর মাসুদ: আগে লোকে দেশের বাইরে যেতেন হৃদ্‌রোগের চিকিৎসা করাতে। দেশে হৃদ্‌রোগের ভালো চিকিৎসার ব্যবস্থা হওয়ার পর থেকে রোগীদের দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতাও কমে গেছে।

ক্যানসারের ক্ষেত্রেও হৃদ্‌রোগের মতো ৭০ শতাংশ রোগী পার্শ্ববর্তী দেশসহ সিঙ্গাপুর বা ব্যাংককে যান চিকিৎসার জন্য, আর বাকি ৩০ শতাংশ রোগী দেশেই চিকিৎসা নেন। এই ৭০ শতাংশের প্রায় সবাই উচ্চবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত শ্রেণির।

তার মানে কি দেশে ক্যানসারের ভালো চিকিৎসা নেই? মোটেও তা না। সরকার দেশে সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্যানসার বিভাগ চালু করেছে।

তবে এটা সত্য, দেশে এখনো পর্যাপ্তসংখ্যক ক্যানসার বিশেষজ্ঞ নেই। প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য মাত্র ৪০০ থেকে ৫০০ অনকোলোজিস্ট। তবে অন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। যেমন আগে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য মানুষকে ঢাকায় ছুটতে হতো। এখন সরকারি সব মেডিকেল কলেজে ক্যানসার সেন্টার রয়েছে।

ঢাকার বাইরে বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে যেমন সিরাজগঞ্জের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজে, চট্টগ্রামে একটি, সিলেটের নর্থ ইস্ট হাসপাতালসহ আরও অনেক হাসপাতালে ক্যানসার সেন্টার রয়েছে।

প্রশ্ন উঠতে পারে, এরপরও মানুষ দেশের বাইরে কেন যায়। এর অন্যতম কারণ দেশে ওয়ান-স্টপ সার্ভিসের সুব্যবস্থা নেই। দেশে ক্যানসার বিশেষজ্ঞ আছেন, আছে রেডিওথেরাপি এবং কেমোথেরাপির সুব্যবস্থা। বেশ ভালো। কিন্তু যদি ক্যানসার শনাক্তই না হয়, তবে রোগী আসবে কোত্থেকে?

আমাদের দেশে ক্যানসার শনাক্তকারী সরঞ্জামগুলোর বিশেষ অভাব রয়েছে। শুধু বায়োপসি যথেষ্ট নয়। কয়েক পদের রক্ত পরীক্ষা, ইমিউনোহিস্টকেমিস্ট্রি, টিউমার মার্কারসহ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা। ঢাকায় মাত্র দু-এক জায়গা ছাড়া বাংলাদেশে কোথাও এসব পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই।

আমাদের দেশে সাধারণ প্যাথলজিগুলোতে এসব পরীক্ষা করা হয়। অথচ ভারতে ক্যানসার সন্দেহের ক্ষেত্রে অনকো-প্যাথলজিস্টরা বায়োপসি রিপোর্ট পরীক্ষা করেন। বাংলাদেশে এখনো ক্যানসার প্যাথলজি গড়ে ওঠেনি। ক্যানসার শনাক্তকরণের একটা বেশ বড় ঘাটতি রয়ে গেছে। দেশে ক্যানসার চিকিৎসায় সবচে বড় বাধা ক্যানসার শনাক্তকরণে দরকারি সরঞ্জাম এবং দক্ষ জনশক্তির অভাব।

ক্যানসার শুধু একজন ব্যক্তির নয়, তার পুরো পরিবারের জন্য বিপর্যয় বয়ে আনে। শুধু শারীরিক নয়, মানসিক এবং অর্থনৈতিক বিপর্যয়ও বটে। বিভিন্ন দেশে ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর জন্য সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা থাকে, বেশ ভালো অঙ্কের সাহায্য। আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা নেই। সরকারি সাহায্যের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পাশাপাশি অনেক ক্যানসার সেন্টারে কেমোথেরাপির ওষুধ দেওয়া হয়। ১০ থেকে ২০ শতাংশ রোগীকে বিনা মূল্যে রেডিওথেরাপি দেওয়া হয়ে থাকে। অনেকের পক্ষে ক্যানসারের চিকিৎসা এক বড় বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। থেরাপিগুলো বেশ সময়সাপেক্ষ। ছয় মাস থেকে এক বছর সময় নেয়।

ক্যানসারের চিকিৎসায় শুধু অনকোলোজিস্টই যথেষ্ট নয়। প্রয়োজন অনকো-সার্জনের। দেশে এখন সর্বসাকল্যে ১০ থেকে ১৫ জন অনকো-সার্জন রয়েছেন। সাধারণ সার্জনরা অনকো-সার্জারি করছেন। যদিও তাঁরা ভালো করছেন, তবে এতে বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতি জরুরি।

এ ছাড়া মাল্টিডিসিপ্লিনারি সেবাকেন্দ্র প্রয়োজন। যেমন এক জায়গাতেই একজন সার্জন থাকবেন, থাকবেন একজন রেডিয়েশন অনকোলোজিস্ট, একজন মেডিকেল অনকোলোজিস্ট, একজন অনকো-প্যাথলজিস্ট ও একজন ইমেজিং বিশেষজ্ঞ।

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন নিকট ভবিষ্যতে এ অবস্থার উন্নতি হবে?

জাফর মাসুদ: ইতিমধ্যেই পরিস্থিতি বদলাতে শুরু করেছে। দেশের করপোরেট হাসপাতালগুলো ইতিমধ্যে সব সুবিধা সমন্বিত ক্যানসার সেন্টার গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। সরকারের পক্ষ থেকেও অনেক রকম চেষ্টা করা হচ্ছে।
আমাদের দেশের সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হলো প্রয়োজনীয় সব ওষুধ দেশেই তৈরি হচ্ছে। মাত্র ১০ বছর আগেও প্রায় ৮০ শতাংশ ওষুধ বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। বাংলাদেশ থেকে এখন ক্যানসারের ওষুধ বিদেশে রপ্তানিও করা হয়। এই ওষুধগুলো যেমন সহজলভ্য, তেমন দামেও সস্তা।

আমাদের যেটা দরকার তা হলো ক্যানসার নির্ণয়ে মলিকুলার ডায়াগনোসিস, যা আমাদের নেই। আমাদের দেশে কোনো মলিকুলার ল্যাবও নেই। ব্যাপারটা অনেকটা গুলিবিহীন বন্দুকের মতো। এগুলোর সুব্যবস্থা জরুরি।

*ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন ফারজানা লিয়াকত