পিএইচডি ডিগ্রি অনুমোদনের বিষয় অনুসন্ধানে ইউজিসিকে নির্দেশ

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি ও সমমানের ডিগ্রি কীভাবে অনুমোদন করা হয়, তা অনুসন্ধান করে তিন মাসের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনকে (ইউজিসি) আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ নির্দেশ দেন।

একই সঙ্গে ‘ঢাবির শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮ শতাংশ নকলের’ বিষয়টি তদন্ত করে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে ‘ঢাবি শিক্ষকের পিএইচডি গবেষণার ৯৮% নকল’ শিরোনামে ২১ জানুয়ারি প্রথম আলো অনলাইন সংস্করণে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ৯৮ শতাংশ হুবহু নকল পিএইচডি গবেষণা অভিসন্দর্ভের (থিসিস) মাধ্যমে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। এই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে ২৬ জানুয়ারি রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মনিরুজ্জামান। অন্যদিকে ২৮ জানুয়ারি ওই শিক্ষককে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে মো. মনিরুজ্জামান নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। শিক্ষার্থী বা গবেষকদের পিএইচডি বা সমমানের ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে জালিয়াতি রোধে থিসিসের প্রস্তাব চূড়ান্ত করার আগে আইসিটি বিশেষজ্ঞ নিয়োগের মাধ্যমে থিসিস প্রস্তাব যাচাইয়ে পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। শিক্ষাসচিব বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ বিবাদীদের এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

২০১৪ সালের দিকে ‘টিউবারকিউলোসিস অ্যান্ড এইচআইভি কো-রিলেশন অ্যান্ড কো-ইনফেকশন ইন বাংলাদেশ: অ্যান এক্সপ্লোরেশন অব দেয়ার ইমপ্যাক্টস অন পাবলিক হেলথ’ শীর্ষক ওই নিবন্ধের কাজ শুরু করেন আবুল কালাম লুৎফুল কবীর। তাঁর এই গবেষণার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক আবু সারা শামসুর রউফ আর সহতত্ত্বাবধায়ক ছিলেন বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজ শুরু করার এক থেকে দেড় বছরের মাথায় ২০১৫ সালে অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করে ফেলেন লুৎফুল কবীর। একটি পিএইচডি অভিসন্দর্ভের কাজ শেষ করার জন্য সাধারণত তিন থেকে সাড়ে তিন বছর লাগে। কিন্তু দ্রুত কাজ শেষ করে প্রথমে সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর ছাড়াই ডিগ্রির জন্য অভিসন্দর্ভটি জমা দেন লুৎফুল কবীর। সহতত্ত্বাবধায়কের স্বাক্ষর না থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবন থেকে তা ফিরিয়ে দেওয়া হয়। পরে লুৎফুল কবীর গবেষণার সহতত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ফারুককে ‘অনেক অনুনয়-বিনয়’ করে তাঁর কাছ থেকে স্বাক্ষর নিয়ে এলে ২০১৫ সালেই বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল ও সিন্ডিকেটে তা অনুমোদিত হয়।

গবেষণায় ৯৮ শতাংশ হুবহু নকলের বিষয়টি নজরে আসার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে একজন গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের কাছে বিষয়টি নিয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ছাড়া লুৎফুল কবীরের অভিসন্দর্ভে নিজের একটি গবেষণা থেকে চৌর্যবৃত্তির অভিযোগ ও তাঁর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানকে একটি চিঠি দিয়েছেন সুইডেনের গোথেনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জোনাস নিলসন।

পরে গত ২৮ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওষুধপ্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আবুল কালাম লুৎফুল কবীরকে প্রশাসনিক ও শিক্ষা কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।