জি কে শামীমের বান্দরবানের রিসোর্টের ২ অংশীদারকে জিজ্ঞাসাবাদ

ঠিকাদার গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামিমের বান্দরবানের সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোম্পানির দুই অংশীদারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাঁদের বিরুদ্ধে জি কে শামীমের সংশ্লিষ্টতায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার দুদকের পরিচালক এবং ক্যাসিনো-কাণ্ড ও বড় দুর্নীতির অনুসন্ধানে গঠিত দলের প্রধান সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি দল সকাল ১০টা থেকে বিকেল পর্যন্ত তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। যাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, তাঁরা হলেন সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোম্পানি লিমিটেডের দুই পরিচালক মিনারুল আলম চাকলাদার ও এস এইচ মোহাম্মদ মহসিন।

কোম্পানিটির তিন পরিচালক জামিল উদ্দিন শুভ, জিয়া উদ্দিন আবির ও জাওয়াদ উদ্দিন আবরারকে কাল বুধবার জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসিম উদ্দিন মন্টু এবং পরিচালক ফজলুল করিম চৌধুরী স্বপনকে বৃহস্পতিবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঠানো আলাদা আলাদা নোটিশে বলা হয়, জি কে শামীমসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নেওয়া হয়েছে। সেখানে অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় অর্জন করে বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান চলছে। সুষ্ঠু অনুসন্ধানের জন্য সবার বক্তব্য রেকর্ড করে পর্যালোচনা করা একান্ত প্রয়োজন।

সূত্র জানিয়েছে, বান্দরবান শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চিম্বুক সড়কে সাইঙ্গ্যাপাড়ায় ‘সিলভান ওয়াই রিসোর্ট অ্যান্ড স্পা কোম্পানি লিমিটেড’ নামের প্রস্তাবিত এই রিসোর্টের চেয়ারম্যান জি কে শামীম। প্রাথমিকভাবে শামীম ওই রিসোর্টে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগও করেছেন।

প্রস্তাবিত ওই রিসোর্টের বিরুদ্ধে পাহাড়িদের জমি দখল, মামলা দিয়ে হয়রানি ও ঝিরি-ঝরনা দখলের অভিযোগ আছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। এ নিয়ে রিসোর্টসংলগ্ন সাইঙ্গ্যাপাড়া ও লাইমিপাড়ার বাসিন্দারা জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এ নিয়ে প্রশাসন তদন্ত করছে বলেও জানা গেছে।

রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জসীম উদ্দিন গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, সাইঙ্গ্যাপাড়ায় পাঁচ তারকা হোটেল, বিনোদন ও খাদ্য পার্ক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কোম্পানির নয়জন অংশীদারের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের বোর্ড সভায় জি কে শামীমকে চেয়ারম্যান ও তাঁকে এমডি করা হয়। কোম্পানির শুরুতে ১০ কোটি টাকা বিনিয়োগের মধ্যে জি কে শামীম ২ কোটি টাকার বিনিয়োগে অংশীদার রয়েছেন।

এমডি জসীম উদ্দিন জানান, কোম্পানি গঠনের শুরুতে জি কে শামীম ছিলেন না। প্রকল্প ভালো মনে হওয়ায় তিনি যুক্ত হতে চেয়েছিলেন। এ জন্য তাঁকেও নেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরু হলে প্রথম দিনই রাজধানীর ইয়াংমেনস ফকিরাপুল ক্লাবে অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক (পরে বহিষ্কার করা হয়) খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন অভিযানে একে একে গ্রেপ্তার হন এস এম গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম, মোহামেডান ক্লাবের ডাইরেক্টর ইনচার্জ মো. লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট, সম্রাটের সহযোগী এনামুল হক আরমান, জাকির হোসেন, কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি মোহাম্মদ শফিকুল আলম (ফিরোজ), অনলাইন ক্যাসিনোর হোতা সেলিম প্রধান এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান (মিজান) ও তারেকুজ্জামান রাজীব।

গ্রেপ্তার হওয়া এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বিপুল অর্থের মালিক হওয়া, অর্থ পাচারসহ নানা অভিযোগ ওঠে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁদের অপকর্মে সহযোগী ও পৃষ্ঠপোষক হিসেবে সাংসদ, রাজনীতিক, সরকারি কর্মকর্তাসহ বিভিন্নজনের নাম উঠে আসে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের অবৈধ সম্পদের খোঁজে মাঠে নামে দুদক। গত ৩০ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনো-কাণ্ডে জড়িত ব্যক্তিদের সম্পদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুদক। পরিচালক সৈয়দ ইকবাল হোসেনের নেতৃত্বে সাত সদস্যের অনুসন্ধান দল গঠন করা হয়।

অনুসন্ধান দলের সদস্যরা গণমাধ্যমে আসা বিভিন্ন ব্যক্তির নাম যাচাই-বাছাই করে একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেন। সংস্থার গোয়েন্দা শাখার পক্ষ থেকে এসব তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়। পাশাপাশি র‍্যাব ও বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) প্রধানেরা দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করেন। সেসব তথ্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে এ পর্যন্ত ২০টি মামলা করে দুদক দল।