প্রশান্তের কয়েক শ কোটি টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জব্দ

প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার
প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রশান্ত কুমার হালদারের নিজ নামে ও স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে থাকা স্থাবর সম্পদ জব্দ এবং অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েস এই আদেশ দিয়েছেন।

আদেশ সূত্রে জানা গেছে, এ বিষয়ে গত ২২ জানুয়ারি আদালতে আবেদন করেন দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। তাঁর আবেদন বিবেচনা করে আদালত এ আদেশ দেন। আদেশের কপি আজ বৃহস্পতিবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোয় পাঠানো হয়েছে।

আদালতের আদেশে প্রশান্ত ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের নামে থাকা ৫৮টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ (ফ্রিজ) করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশান্ত কুমার হালদারের ৪০টি, তাঁর মা লীলাবতি হালদারের ৩টি, হাল ট্রাভেল সার্ভিসেসের ১০টি, হাল এন্টারপ্রাইজের ১টি, সুখদা লিমিটেডের ১টি, প্রাইম ফাইন্যান্স ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্টের ১টি, ফার্স্ট কমিউনিকেশনসের ১টি এবং প্রিতিশ কুমার হালদারের ১টি হিসাব রয়েছে।

১৭টি কোম্পানিতে থাকা প্রশান্ত ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের শেয়ারও অবরুদ্ধ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রেপটাইলস ফার্মে পিএন্ডএল ইন্টারন্যাশালে রাজিব সৌম ও শিমু রায়ের শেয়ার; সুখদা লিমিটেডে প্রশান্ত হালদার, অবন্তিকা বড়াল, প্রীতিশ কুমার হালদার ও সুস্মিতা সাহার শেয়ার; নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ও অমিতাভ অধিকারীর শেয়ার; সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজে সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান, নিয়াজ রহমান সাকিব, ইশতিয়াক রহমান ইমরান ও ইনসান আলী শেখের শেয়ার; আজিজ ফেব্রিক্সে পিঅ্যান্ড এল ইন্টারন্যাশনালের শেয়ার (প্রতিনিধি রাজীব সৌম); আনান ক্যামিকেলে অভিজিত অধিকারী তীর্থ ও প্রীতিশ কুমার হালদারের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

ক্লীউইস্টন ফুড অ্যান্ড অ্যাকোমোডেশন কোম্পানিতে আব্দুল আলিম চৌধুরী, জাহাঙ্গীর আলম, সিদ্দিকুর রহমান, রতন কুমার বিশ্বাস, পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল, অমিতাভ অধিকারী, সিমটেক্স টেক্সটাইল, জেড এ অ্যাপরেলস, আলমগীর হোসেন, পিঅ্যান্ডএল এগ্রো ফার্মস, আনান ক্যামিকেল, উইনমার্ক, নাত্রিকুল, আর্থস্কোপ, মাহফুজা রহমান বেবী, নিয়াজ রহমান সাকিব ও ইনসান আলি শেখের শেয়ার অবরুদ্ধ হয়েছে। রহমান কেমিকেলসে পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল, রেপটাইল ফার্মস, আর্থস্কোপ, রতন কুমার বিশ্বাস, রাজীব সৌম, অমিতাভ অধিকারী, রহমান কেমিকেলস, নাত্রিকুল, আনন্দ মোহন রায়, প্রশান্ত কুমার হালদার ও প্রশান্ত কুমার চক্রবর্তীর শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়।

এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনাল ও রেপটাইল ফার্মের শেয়ার; পিঅ্যান্ডএল ইন্টারন্যাশনালে উদ্দাব মল্লিক, মৈত্রেয় রাণী বেপারি ও সোমা ঘোষের শেয়ার; কেএইচবি সিকিউরিটিজে রাজীব সৌম, উদ্দাব মল্লিক ও গোলাম সারওয়ারের শেয়ার; ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে বিআর ইন্টারন্যাশনাল, শ ওয়ালেনস, নিউ টেক এন্টারপ্রাইজ ও ন্যাচার এন্টারপ্রাইজের শেয়ার; শ ওয়াশেনসে নুরুল আলম ও আবুল হাসেমের শেয়ার, নিউ টেক এন্টারপ্রাইজে পাপিয়া ব্যানার্জি ও নাসিম আনোয়ারের শেয়ার; বিআর ইন্টারন্যাশনালে বাসুদেব ব্যানার্জি ও মমতাজ বেগমের শেয়ার এবং হাল ট্রাভেলস সার্ভিসে প্রশান্ত কুমার হালদার, তাজবীর হাসান ও হাল ক্যাপিটালের শেয়ার অবরুদ্ধ করা হয়েছে।

স্থাবর সম্পদের মধ্যে কক্সবাজারে ২ একর, রাজধানীর তেজতুরীবাজারে ১১০ শতাংশ জায়গা, ময়মনসিংহে ৪৮২ শতাংশ জমি ক্রোক করা হয়েছে।

আদালতের আদেশে সংশ্লিষ্ট জেলা রেজিস্ট্রার, ভূমি অফিস ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের এমডিসহ সবার কাছে আদেশের অনুলিপি দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

প্রশান্ত কুমার হালদারের দুর্নীতি অনুসন্ধান করে গত ৮ জানুয়ারি মামলা করেন দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী। মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২৭৪ কোটি ৯১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়। মামলাটির তদন্ত করছেন উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন। তদন্তের অংশ হিসেবে তিনি সম্পদ জব্দের আবেদন করেন।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রশান্ত ও তাঁর স্বার্থসংশ্লিষ্টদের পরিচালিত ঋণ হিসাব ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক হিসাবে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৫ লাখ টাকা জমা হয়েছে। এ ছাড়াও তাঁর নিজের ব্যাংক হিসাব থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে পরিচালিত হিসাবে টাকা জমা এবং ওই সব হিসাব থেকে তাঁর হিসাবে টাকা জমা করার তথ্যও পাওয়া গেছে।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রশান্ত কুমার হালদার ও তাঁর স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ব্যাংক হিসাবে যে সন্দেহজনক ( ১ হাজার ৬৬৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে www.prothomalo.com/bangladesh/article/1633341/) এর মধ্যে তাঁর নিজ নামে পরিচালিত হিসাবগুলোতে ২৪০ কোটি ৮৭ লাখ টাকা ছিল। এ ছাড়া তাঁর মা লীলাবতী হালদারের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে ১৬০ কোটি টাকা এবং তার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে বিভিন্ন সময়ে ১ হাজার ২৩৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা জমা হয়। দুদক বলছে, কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি, কর ফাঁকির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অবৈধ অর্থের মালিক হয়েছেন প্রশান্ত কুমার হালদার।

গত সেপ্টেম্বরে দেশে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। এর পরপরই গোলাম কিবরিয়া শামীম ওরফে জি কে শামীম ও অন্যান্য ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি কর্মকর্তাদের শত শত কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে বড় বড় ঠিকাদারি কাজ পাওয়ার অভিযোগ ওঠে। এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ, ক্যাসিনো ব্যবসা করে শত শত কোটি টাকা অবৈধ প্রক্রিয়ায় আয়পূর্বক বিদেশে পাচার ও জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন সংক্রান্ত যে অভিযোগ আসে। এসব বিষয়ে অনুসন্ধান শুরুর পর প্রথম তালিকাতেই প্রশান্তের নাম ছিল।

আরও পড়ুন: