পড়ালেখা শিখে সরকারি কর্মকর্তা হতে চায় তুহিন

শ্রুতলেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মৌত্তাছিম মিল্লা। গত সোমবার শেরপুর শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাইস্কুল উপকেন্দ্রে।  প্রথম আলো
শ্রুতলেখকের সহায়তায় এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মৌত্তাছিম মিল্লা। গত সোমবার শেরপুর শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাইস্কুল উপকেন্দ্রে। প্রথম আলো

মো. মৌত্তাছিম মিল্লা তুহিন শারীরিক প্রতিবন্ধী। সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত তার পুরো শরীরই প্রায় অবশ। একা হাঁটতে পারে না। অন্যের সাহায্য নিয়ে চলতে হয়। কিন্তু এ প্রতিবন্ধিতা তাকে দমাতে পারেনি। সে এ বছর এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

শেরপুর শহরের আইডিয়াল প্রিপারেটরি অ্যান্ড হাইস্কুল উপকেন্দ্রের একটি কক্ষে একজন শ্রুতলেখকের সহযোগিতায় পরীক্ষা দিচ্ছে মৌত্তাছিম। সে সদর উপজেলার ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।

শেরপুর সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের মুকসুদপুর গ্রামের মো. আলাল উদ্দিন ও মমতাজ বেগম দম্পতির ছেলে মৌত্তাছিম। তার দুটি হাতই বাঁকা ও শক্তিহীন। ঘাড়ও খানিকটা বাঁকা। দুই পা সোজা করে দাঁড়াতে পারে না। হাত অচল।

কিন্তু পড়ালেখার প্রতি প্রবল আগ্রহ মৌত্তাছিমের। শ্রুতলেখকের সাহায্য নিয়ে এত দূর এসেছে সে। হাল ছাড়েননি তার মা-বাবাও। ছয় বছর বয়সে ছেলেকে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করিয়ে দেন মাঝপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। ২০১৪ সালে জিপিএ-৩.০৮ পেয়ে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় পাস করে সে। এরপর ভর্তি হয় ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে জিপিএ-৪.২৯ পেয়ে জেএসসি পরীক্ষায় পাস করে। একই বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে মৌত্তাছিম।

মৌত্তাছিমের বাবা আলাল উদ্দিন একজন কৃষিজীবী আর মা মমতাজ ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের আয়া। মায়ের হাত ধরেই বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেছে সে।

আলাল উদ্দিন বলেন, তাঁর পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে মৌত্তাছিম সবার ছোট। জন্ম থেকেই সে শারীরিক প্রতিবন্ধী। তার কথাও অস্পষ্ট। অনেক চিকিৎসা করিয়েও লাভ হয়নি। তাঁর অন্য ছেলেমেয়েরা পড়ালেখা করেছে। তাই মৌত্তাছিমকে অন্ধকারে রাখতে চাননি তিনি। শারীরিক প্রতিবন্ধী বলে সে যেন সমাজের বোঝা না হয়, সে জন্য তাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পড়ালেখা করাচ্ছেন।

গত সোমবার পরীক্ষাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, শ্রুতলেখনপদ্ধতিতে এসএসসি পরীক্ষা দিতে মৌত্তাছিমকে সহযোগিতা করছে তারই বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী খাইরুল ইসলাম। তুহিন প্রশ্নের উত্তর বলার পর তার সহযোগী খাইরুল খাতায় উত্তর লিখে দিচ্ছে। এ জন্য ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড থেকে অনুমতি নিতে হয়েছে। প্রতিবন্ধী পরীক্ষার্থী হিসেবে নির্ধারিত সময় ৩ ঘণ্টার চেয়ে ২০ মিনিট বেশি পায় সে।

বাংলা প্রথম পত্রের পরীক্ষা শেষে কথা হয় মৌত্তাছিমের সঙ্গে। পরীক্ষার ফল কেমন হবে, বড় হয়ে কী হতে চায়—এসব প্রশ্নে মৌত্তাছিম বলে, ভালো ফলের আশা তার। পড়ালেখা শিখে স্বনির্ভর জীবন যাপন করতে ও সরকারি কর্মকর্তা হতে চায় সে।

ধাতিয়াপাড়া উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. গোলাম মোস্তফা প্রথম আলোকে বলেন, শারীরিক প্রতিবন্ধী মৌত্তাছিম মেধাবী। তার পড়ালেখার ব্যাপারে বিদ্যালয় থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। সরকারি পর্যায়ে তাকে সহযোগিতা দেওয়া হলে সে পরবর্তী সময়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারবে।