কাজ অর্ধসমাপ্ত, জনদুর্ভোগ চরমে

সড়কে গর্ত, পাশে ফেলে রাখা হয়েছে মোটা পাইপ। সম্প্রতি মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে।  প্রথম আলো
সড়কে গর্ত, পাশে ফেলে রাখা হয়েছে মোটা পাইপ। সম্প্রতি মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে। প্রথম আলো

দিলকুশা, মতিঝিল, আরামবাগ, কমলাপুরসহ আশপাশের এলাকার নর্দমা ও সড়ক উন্নয়নের কাজ অর্ধসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এতে জনদুর্ভোগ চরমে উঠেছে। এলাকায় যানজটও বেড়ে গেছে।

কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল ক্যাসিনো–কাণ্ডে গ্রেপ্তার হওয়া যুবলীগের নেতা খালেদ ভূঁইয়ার ‘ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়া ডেভেলপার লিমিটেড’। তিনি গ্রেপ্তার হওয়ার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। ডিসেম্বরের শুরুতে ভূঁইয়া অ্যান্ড ভূঁইয়ার এ–সংক্রান্ত কাজের চুক্তি বাতিল করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এরপর পুনঃ দরপত্র আহ্বান করা হলেও নতুন করে কার্যাদেশ দেওয়া হয়নি। ডিএসসিসির দায়িত্বশীল সূত্র এ কথা জানিয়েছে।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, গত এপ্রিলে দরপত্র আহ্বানের পর দুটি প্যাকেজে খালেদ ভূঁইয়ার প্রতিষ্ঠানকে ৩০ কোটি টাকার এই উন্নয়নকাজ দেওয়া হয়। এলাকার জলাবদ্ধতা দূর করতে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছিল। একটি প্যাকেজ হচ্ছে ‘দিলকুশা এলাকার রাজউক ভবন থেকে পিপলস ভবন, আলিকো ভবন, জীবন বীমা চত্বর ভবন পর্যন্ত গভীর নর্দমা, ফুটপাত ও রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্প’। এর ব্যয় ১৮ কোটি ৬২ লাখ ১ হাজার টাকা। অপরটি ‘১০ নম্বর ওয়ার্ডের মতিঝিল চতুর্থ রেডিয়াল রোড সংস্কার ও পীরজঙ্গি মাজার হতে কমলাপুর রেলস্টেশন পর্যন্ত নর্দমা, ফুটপাত ও সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প’। এখানে বরাদ্দ ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। গত বছরের মে মাস নাগাদ কাজ শুরুর সময়েই খালেদ ভূঁইয়া ২০ শতাংশ বিল নিয়ে নেন। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানে খালেদকে গ্রেপ্তারের পর ধীরে ধীরে কাজ থেমে যায়।

ডিএসসিসির প্রকৌশল বিভাগের একটি সূত্রের ভাষ্য অনুযায়ী, খালেদ ভূঁইয়া গ্রেপ্তার হওয়ার পর কাজ থেমে গেলেও ডিএসসিসি প্রথমে এ বিষয়ে কোনো তৎপরতা দেখায়নি। অথচ দিলকুশা, মতিঝিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকার প্রধান সড়কগুলো বড় বড় গর্ত ভরা থাকায় যানবাহন চলাচলে মারাত্মক সমস্যা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে মাসের পর মাস ধরে এই গর্তগুলো পড়ে আছে। মোটা পাইপ আর মাটির স্তূপ এলাকার সৌন্দর্য নষ্ট করছে।

জনদুর্ভোগ চরমে

গতকাল সোমবার সকালে দেখা যায়, নটর ডেম কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সড়কজুড়ে গর্ত। ভেতরে সাড়ে পাঁচ ফুট প্রস্থের কিছু পাইপ বসানোর পর কাজ বন্ধ। গর্তগুলোতে বালু আর ইটের টুকরা ফেলা হয়েছে। এতে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

নটর ডেম ইউনিভার্সিটির বিবিএর ছাত্রী মাহফুজা খানম বলেন, ‘অনেক দিন ধরে এভাবে চলাচল করতে হচ্ছে। এ কাজ শেষ হবে কবে?’

সরেজমিনে দেখা যায়, কলেজের ডান পাশে সড়কের ওপর স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাথর। তার খানিক উত্তরে বিশাল গর্ত। তবে পাইপ বসানো হয়নি। ঝুঁকি নিয়ে কলেজের শিক্ষার্থী ও পথচারীরা যাতায়াত করছে। আরামবাগ ডালাস স্টুডিও থেকে শুরু করে গ্রিন লাইন পরিবহনের কাউন্টার পর্যন্ত কোথাও মাটির স্তূপ আর খালি পাইপ এলোপাতাড়িভাবে ছড়ানো। জনতা ব্যাংক আরামবাগ শাখার সামনে তিনটি পাইপ ও মাটির স্তূপ। টিঅ্যান্ডটি স্কুলের সামনেও বড় বড় পাইপ এলোমেলো ছড়ানো। সেগুলোর ভেতরে হকারদের সামগ্রী। গর্ত ও নির্মাণসামগ্রী রাখার কারণে সড়কের প্রস্থ কমে গেছে। এতে পুরো এলাকায় যানজট আগের তুলনায় আরও বেড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে থেকে জীবন বীমা ভবন পর্যন্ত সড়কে ফেলে রাখা হয়েছে বড় পাইপ। গত জুলাই মাসে এগুলো আনা হয়। পাইপ বসানোর জন্য কিছু গর্ত খোঁড়া হয়েছে। তবে পাইপ বসানো হয়নি।

অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা গৌরাঙ্গ সাহা বললেন, এই এলাকায় ২৫ বছর চাকরি করেছেন। কিন্তু এ ধরনের অবস্থা কখনো দেখেননি।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও সেনা কল্যাণ ভবনের সামনে থেকে দক্ষিণ কমলাপুর পর্যন্ত সড়কটি খোঁড়া হয় গত মে মাসে। সেখানে চওড়া পাইপও বসানো হয়েছে। কিন্তু মেরামত না করায় এখন প্রায় পুরো সড়কই কাঁচাবাজারে পরিণত হয়েছে। এতে পথচারী চলাচলে সমস্যা হচ্ছে।

দিলকুশা বাণিজ্যিক এলাকায় পিপলস ইনস্যুরেন্স ভবনের সামনে থেকে পশ্চিম দিকে জীবন বীমা ভবন পর্যন্ত খোঁড়াখুঁড়ি করা হয়েছে গত জুন ও জুলাইয়ে। গতকাল দেখা যায়, বেশির ভাগ গর্তে কিছু মাটি ফেলা হলেও উঁচু–নিচু হয়ে আছে। যানবাহন চলছে ঝাঁকুনি খেতে খেতে। বিসিআইসি ভবনে অবস্থিত বেসরকারি একটি ব্যাংকের কর্মকর্তা দিলারা আলম ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এখানে চলতে গিয়ে সুস্থ মানুষও অসুস্থ হয়ে যাবে। মাসের পর মাস এই অবস্থায় অফিস করতে হচ্ছে। মনে হয়, দেখার কেউ নেই।

এলাকাগুলো ডিএসসিসির ২ নম্বর অঞ্চলে পড়েছে। অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী ও কাজের তত্ত্বাবধায়ক হারুনুর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ঠিকাদারের সমস্যার কারণে কাজ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। এলাকায় চলাচলে জনসাধারণের দুর্ভোগ হচ্ছে, এটি সত্য। আর এ জন্য সংশ্লিষ্ট সবাই চিন্তিত। তিনি বলেন, কাজের অগ্রগতিসংক্রান্ত নথি তিনি ডিএসিসির প্রধান কার্যালয়ে অনেক আগেই দাখিল করেছেন। তিনি এর বাইরে কিছু বলতে পারবেন না।