গৎবাঁধা অভিযোগ ছেড়ে বাস্তবতা মেনে নিন

রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংকের পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: প্রেস বিজ্ঞপ্তি
রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংকের পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিচ্ছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। ছবি: প্রেস বিজ্ঞপ্তি

বিএনপিকে গৎবাঁধা অভিযোগ ছেড়ে বাস্তবতা মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ। ইভিএমে যেভাবে ভোট হয়েছে, এর চেয়ে স্বচ্ছ–ভালো ভোট বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কখনো হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

আজ বুধবার রাজধানীতে জাতীয় প্রেসক্লাবে বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংকের পঞ্চম বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তথ্যমন্ত্রী। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাতিল করার বিএনপির দাবির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি বলব এই গৎবাঁধা কথাগুলো বাদ দিয়ে বাস্তবকে মেনে নেওয়ার জন্য।’ একই সঙ্গে তিনি ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া দেওয়া শুরু করেছেন, যা যথার্থ নয়।

‘ইভিএমে যেভাবে ভোট হয়েছে, এর চেয়ে স্বচ্ছ–ভালো ভোট বাংলাদেশের ইতিহাসে অতীতে কখনো হয়নি’ উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘ইভিএম প্রতিটি দলের জন্য পোলিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এখানে কারও ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মিললে ভোট দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।’

ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া দেওয়া শুরু করেছেন উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেব নন, আমাদের দেশে বিভিন্ন বিষয়ে কোনো কোনো মাওলানা যেভাবে ফতোয়া দেন, ঐক্যফ্রন্টের কিছু নেতাও নির্বাচন নিয়ে ফতোয়া শুরু করেছেন।’

‘বিএনপি লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করছে’ জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ২৯ শতাংশ আর উত্তরে ২৫ শতাংশ ভোট পড়েছে। সেই ভোটের মধ্যে আমাদের প্রার্থীরা দ্বিগুণ ভোটে জয়লাভ করেছে। এখন এই লজ্জা ঢাকার জন্য তাদের নানা কথা বলতে হয়। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবরা সেই কথাগুলোই বলছেন।’

বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকানোর জন্য বলে হাছান মাহমুদ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভোট দেওয়ার যোগ্য মানুষের মধ্যে ৬০ শতাংশ ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়, আর তার ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ভোট পড়ে। অর্থাৎ মোট ভোট দেওয়ার যোগ্য মানুষের মধ্য থেকে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে।’

বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর হওয়ায় তার মুক্তির দাবিতে বিএনপি আহুত সমাবেশ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘খালেদা জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। আদালত ছাড়া তাঁর মুক্তি দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের নেই। তারা বারবার সরকারের কাছে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি জানিয়ে আইন ও আদালতের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করেছেন। সমাবেশ তারা অতীতেও করেছে, আমরা দেখেছি খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে তারা সমাবেশ করতে গিয়ে হাঙ্গামা করেছে, মানুষের ওপর আক্রমণ করেছে, গাড়িঘোড়া ভাঙচুর করেছে।’

সমাবেশের অনুমতি মিলবে কি না—প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সমস্ত বিচার–বিশ্লেষণ করে অনুমতি দেবে কি না, সিদ্ধান্ত নেবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দেখবে তাদের উদ্দেশ্যটা কী, সমাবেশ করা, নাকি সমাবেশের নামে বিশৃঙ্খলা তৈরি করা।’

স্কুলে ট্রাফিক আইন শেখানো প্রয়োজন
এর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসাদাতা বেসরকারি সংস্থা ট্রমা লিংকের পঞ্চম বর্ষপূর্তিতে সংস্থার চেয়ারম্যান মৃদুল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সড়ক দুর্ঘটনা রোধকল্পে তথ্যমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের স্কুলে ট্রাফিক আইন সম্পর্কে শেখানো প্রয়োজন, সেটা সারা জীবন মনে থাকবে।

হাছান মাহমুদ বলেন, বিআরটিএকে বলব, সারা দেশে আরও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র খোলার জন্য। বিআরটিএ-সার্টিফায়েড বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যদি ড্রাইভিং শিক্ষা দেয়, তাহলে আমাদের দেশে প্রশিক্ষিত ড্রাইভারের সংখ্যা আরও বাড়বে। অন্তত যে পরিমাণ গাড়ি আছে, সেই পরিমাণ ড্রাইভার আমরা পাব। যে পরিমাণ গাড়ি আছে, তার চেয়ে বেশি ড্রাইভার দরকার। কারণ, একজন ড্রাইভার প্রতিদিন গাড়ি চালাতে পারেন না।

ট্রমা লিংকের প্রশংসা করে মন্ত্রী বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে তারা যেভাবে সেবা দিচ্ছে, সেটি সত্যিই প্রশংসার দাবি রাখে। তাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী ৩৫ ভাগ মানুষ মারা যায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের কারণে, সঠিক চিকিৎসা না পাওয়ার কারণে। তাদের এই উদ্যোগ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে হলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের ও বিশেষ করে উপকূলীয় অঞ্চলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা গ্রুপদের যদি এর সঙ্গে সম্পৃক্ত করা যায়, তাহলে এই নেটওয়ার্ক অনেক বাড়বে।